
শুটিংয়েই বেশির ভাগ সময় কেটেছে অভিনেত্রী দিলারা জামানের। অভিনয়ে ব্যস্ত থাকলেও মা হিসেবে দুই সন্তানকে কখনো মায়ের ভালোবাসা, স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেননি। মেয়েদের মানুষ করতে ক্যারিয়ারে অনেক ছাড়ও দিয়েছেন তিনি। তারপরও মেয়েদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারতেন ভেবে মা হিসেবে এখনো নিজেকে অপরাধী মনে করেন এই প্রবীণ অভিনেত্রী।
মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ–বিদেশে চাকরির অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন দিলারা জামান। সেসব তাঁকে টানেনি। বদলি হতে হবে ভেবে সরকারি চাকরিও করেননি। পরিবার ছেড়ে লিবিয়ায় থাকতে হবে ভেবে যাননি উচ্চ বেতনের চাকরিতে। দিলারা জামান জানান, তিনি সব সময় পরিবারের পাশে থাকতে চেয়েছেন। সময় দিয়েছেন পরিবারকে। দুই মেয়ের একজন ডা. তানিরা জামান কানাডায় থাকেন। ছোট মেয়ে জুবায়রা চাকরি করেন যুক্তরাষ্ট্রে। দুই মেয়ে যখন খুব ছোট, তখন তাঁদের ছেড়ে শুটিংয়ে যেতে কষ্ট হতো দিলারার। তিনি জানান, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে অনেক মঞ্চনাটকের শো থাকত। সেগুলোতে যেতে হতো। পরে টেলিভিশনে ব্যস্ততা বাড়লে পরিবারকে সময় দেওয়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী।
আশির দশকের পুরো সময় দিলারা জামানকে নিয়মিত যেতে হতো ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটে। পরিবারের কথা ভেবে তিনি এগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। ঢাকার বাইরে শুটিংয়ের কাজে খুব কম যেতেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েরা ছোট ছিল। শুটিংয়ে গেলে তাদের জন্য খাবার তৈরি করে যেতাম। পরিবারে আরও লোক ছিল, তাদের বলে যেতাম, খাবারগুলো কীভাবে গরম করে খাওয়াতে হবে। মেয়েরা যখন বড় হলো, তখন তারা নিজেরাই গরম করে খেত। আমি সব সময় নিজে বাজার করে, রান্না করে খাওয়াতাম। তাদের যথেষ্ট সময় দিয়ে নিজেদের মতো করে মানুষ করার চেষ্টা করেছি। মা হিসেবে তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করে, ভালোবাসে, সব সময় খবর নেয়। এটাই আমাকে তৃপ্তি দেয়।’
প্রতিদিন দুই মেয়ে নিয়ম করে তাঁকে ফোন করেন। তাঁদের কড়া নিষেধ, শুটিংয়ে যাওয়া চলবে না। প্রায় দুই মাস ধরে তিনি করোনার কারণে শুটিংয়ে যাননি। ঈদের তিনটি নাটকের জন্য বাধ্য হয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে শুটিংয়ে। বিটিভিতে প্রচারিত হবে ‘ফুপুর ঈদ’ নাটকটি। এখানে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর এই শুটিংয়ের খবর এখনো মেয়েদের জানাননি। এই অভিনেত্রী জানান, শুটিংয়ে গেছেন জানলে মেয়েরা রাগারাগি করে মাকে তাঁদের কাছে নিয়ে যেতে চাইবেন। কিন্তু বিদেশে দিলারা জামানের মন টেকে না। তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয়, মেয়েদের আরও বেশি সময় দেওয়া দরকার ছিল। তাহলে হয়তো মেয়ে দুইটা আরও বেশি সময় মাকে কাছে পেত। এমনও হয়েছে, কোনো মেয়ের শরীর খারাপ, জ্বর ১০২ ডিগ্রি। অথচ শুটিংয়ে বা রেকর্ডিংয়ে যেতে হয়েছে। সেই সময়টা মেয়েদের পাশে থাকা দরকার ছিল। এগুলো ভেবে মা হিসেবে নিজেকে অপরাধী লাগে। আবার কাজে না গেলে আমার জন্য শুটিং, রেকর্ডিং বন্ধ থাকবে। তাদের কাছে আমি অপরাধী হয়ে যাব। শিল্পীর দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মেয়েদের অসুস্থ অবস্থায় রেখে যেতে হয়েছে। সেই দিনগুলো মেয়েদের চিন্তায় খুবই কষ্টে গেছে।’