ওয়েব সিরিজ রঙিলা কিতাব, ঈদের সিনেমা দাগিতে স্বল্প উপস্থিতি দিয়েও নিজের ছাপ রেখেছেন মনোজ প্রামাণিক। তবে মনোজ এখন নির্মাণ আর প্রযোজনায় মনোযোগী বেশি। বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলের বৃত্তি নিয়ে তিনি এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় আছেন। হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর দিনযাপনের গল্প শুনেছেন লতিফুল হক
অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেবেন, মনোজ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ১০ কি ১২ বছর হবে। তবে এরপরই যুক্ত হন শিক্ষকতায়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়ান। ধীরে ধীরে নির্মাণে আগ্রহ তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিনেমা বানান, সেসবের প্রযোজনায় যুক্ত থাকতে হয়। মনে হলো, কাজটা আরও ভালোভাবে শেখা দরকার। চোখ ছিল বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলের দিকে। আগে এখানে পড়ে গেছেন আবু শাহেদ ইমন, আরিফুর রহমান, তানভীর হোসেন, ফজলে হাসান প্রমুখ। আবেদন করার পর ‘প্রডিউসিং ট্র্যাক’ প্রোগ্রামে সাত মাসের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে বৃত্তি পেয়েছেন। গত ২১ মার্চ বুসানে যান মনোজ। এশিয়ার ১৭ দেশ থেকে এ প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছেন ১৯ জন। বিভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্ন চিন্তার মানুষজনের সঙ্গে থাকা, রান্না করা, খাওয়া, পড়া থেকে ঘোরাঘুরি দারুণ উপভোগ করছেন তিনি।
‘আমি তো বটেই, আমার শিক্ষার্থীরাও আমার এই প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হবে। আন্তর্জাতিকভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ, যৌথ প্রযোজনা, পরিবেশনার ক্ষেত্রে প্রডিউসিং ট্র্যাক প্রোগ্রাম আমাকে সমৃদ্ধ করবে,’ হোয়াটসঅ্যাপে বললেন মনোজ। কিছুদিন আগেই বুসান স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে মনোজ প্রযোজিত মহিন রাখাইনের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা অ্যা স্নেইল উইদাউট শেল। যেখানে অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন অভিনেতা। এটাও তাঁর জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা, বললেন মনোজ।
বুসানে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরই দেশে মুক্তি পায় ঈদের ছবি। এর মধ্যে শিহাব শাহীনের দাগিতে আছেন মনোজ। ছোট চরিত্র, কিন্তু নিশোর সঙ্গে তাঁর ওই দৃশ্যই বদলে দেয় সিনেমার সুর। মনোজ বলছিলেন, নিশো আর শিহাব শাহীনের সঙ্গে এই কাজ তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে। ‘নিশো ভাইয়ের সঙ্গে ড্রামাটিক দৃশ্যটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেটাই করেছি, সে জন্য শিহাব ভাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তাঁর সঙ্গে প্রথম কাজ, তিনি যেভাবে অভিনেতাদের কাছ থেকে সেরাটা আদায় করেন, সেটাও আমার জন্য শিক্ষণীয়। গত কয়েক বছরে আমি কিন্তু স্বল্প সময়ের উপস্থিতি আছে, এমন বেশ কয়েকটি চরিত্র করেছি, সব কটিই একটির চেয়ে অন্যটি আলাদা। রঙিলা কিতাব-এ আমার নেতিবাচক চরিত্র। চরিত্র ছোট হলেও দর্শক ঠিকই মনে রেখেছেন। বুসানে বসে দাগিতে আমার অভিনয়ের প্রশংসাসূচক প্রচুর বার্তা পাচ্ছি,’ বললেন মনোজ।
দেশের বাইরে থাকায় ঈদের সিনেমা দেখা হয়নি। তবে এবারের ঈদের সিনেমা নিয়ে দর্শকের আগ্রহের কথা তাঁর অজানা নেই। জানালেন, সিনেমা নিয়ে দর্শকের এই আগ্রহ তাঁকে আশাবাদী করে। ‘আমি আসার পর প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল। কোরিয়ার বেশ কয়েকটি সিনেমা দেখলাম। এখানকার মানুষ নিয়মিত সিনেমা দেখেন, নতুন সিনেমা মুক্তির পর দর্শকের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো; উৎসবমুখর একটা পরিবেশ তৈরি হয়। দেশে কেবল ঈদ নয়, অন্য সময়েও এই সিনেমা-উৎসবটা থাকা দরকার।’
আলাপে আলাপে চলে এল আদনান আল রাজীবের আলীর প্রসঙ্গ। সিনেমাটি এবার কান উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ ও প্রযোজনায় যুক্ত মনোজ। ৪৬ মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সুব্রত সরকারের সঙ্গে যৌথ নির্মাণে হইতে সুরমা নিয়ে অংশগ্রহণ করেন মনোজ। তিনি জানালেন, আদনানের সিনেমা কানের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা করে নেওয়া তাঁকেও গর্বিত করেছে।
বুসানে চলে যাওয়ায় ঈদের নাটকে সেভাবে মনোজকে পাওয়া যায়নি। সামনের ঈদেও পাওয়া যাবে না। ফিরতে ফিরতে আরও পাঁচ মাস। জানালেন, ফেরার পর নতুন কাজ দিয়ে সব পুষিয়ে দেবেন। এটাও জানিয়ে রাখলেন, শিক্ষকতা আর প্রযোজনার ফাঁকে তিনি কেবল সে ধরনের প্রকল্পেই অভিনয় করবেন, যা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।