Thank you for trying Sticky AMP!!

বদলে যাওয়া রুনা খান

মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রুনা খানের আজ জন্মদিন। আজ ১১ জানুয়ারি তিনি ৪০ বছরে পদার্পণ করেছেন। মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয় শুরু করা রুনা খান চলচ্চিত্রেও নিজের অভিনয় নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। ‘হালদা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১৯ সালে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার।

জন্মদিন পরিবারের সঙ্গে কাটাতেই ভালো লাগে রুনা খানের। তিনি বলেন, ‘জন্মদিন নিয়ে বিশাল আয়োজন হবে, সেটা আমার পছন্দ নয়। ছোট, সাধারণ হয়েই দিনটি উপভোগ করতে চাই। তবে শৈশবে অনেক হই–হুল্লোড় করেছি। স্কুলের বন্ধুরা আসত। মা–বাবা খাবার রান্না করতেন। বন্ধুরা মিলে রুমে ক্যাসেটে গান ছেড়ে নাচানাচি করতাম।’
কত বছরে পা পড়ল এবার? শুনেই হাসলেন রুনা খান। জানালেন, তিনি আর বেশি দিন বয়স লুকাবেন না। এবার তিনি চল্লিশে পা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জন্মদিনটি ফেসবুকে লুকিয়ে রাখা। কেউ জানার কথা নয়। তারপরও যাঁরা উইশ করেন, তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন। এই ভালোবাসাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তি। মানুষের ভালোবাসা পেতে আমার ভালো লাগে।’
কাজের ক্ষেত্রে এই অভিনেত্রী দেশের ছোট–বড় প্রায় সব পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর ঝুলিতে আছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল প্রথম আলো, বাচসাসসহ (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) একাধিক অর্জন
অভিনয়শিল্পী হিসেবে রুনা খান স্বপ্নবাজ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে চান। ভালো কাজের স্বপ্ন দেখেন। ভিন্ন ধরনের চরিত্রের প্রতি তাঁর লোভ সব সময়। তিনি জানান, তাঁর কাজ তাঁকে কখনো সন্তুষ্ট করে না
তবে বিভিন্ন সময় শুটিং সেটে অন্যদের কাছে নিজের অভিনয়ের প্রশংসা শুনেছেন। মোশাররফ করিমও নাকি অসংখ্যবার অন্যদের কাছে তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘৩০ জনের বেশি সহকর্মী আমাকে শুটিংয়ের সময় জানিয়েছেন, মোশাররফ করিম আমার অভিনয় পছন্দ করেন। আমার আড়ালে সেই প্রশংসা আমার কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা অনেক পুরোনো সহকর্মী। অনেক আগে থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করি। সামনে কখনো মোশাররফ ভাই কিছু বলেননি। কেউ সামনাসামনি ভালো কিছু বললে আমি লজ্জায় পড়ে যাই। কী বলব কিছু বুঝতে পারি না। তখন প্রচণ্ড লজ্জা লাগে।’
‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিক নাটকের কল্যাণে তাঁকে ‘ভাবি’ ডাক শুনতে হয়। নাটকে তিনি ‘সালমা ভাবি’ চরিত্রে অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন। দেশের গুণী এই অভিনেত্রী জানান, এখন দেশে ৩০টির মতো চ্যানেল, নেটফ্লিক্স, আমাজনের মতো সাইটসহ অনেক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আছে। তারপরও ধারাবাহিক নাটকের একটি চরিত্র থেকে বিপুল সাড়া পাওয়া তাঁর জন্য একটা অবিশ্বাস্য ভালো ব্যাপার।
সম্প্রতি রুনা খান শেষ করেছেন ‘স্বর্ণমানব-৫, মাই সেকেন্ড হোম’ নাটকের শুটিং। চোরাচালানের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কীভাবে কানাডায় সেকেন্ড হোম গড়ে তোলা হয়, সেটাই এই নাটকের বিষয়বস্তু
ওজন কমিয়ে প্রায় প্রতিদিনই এখন নতুন রূপে ক্যামেরায় ধরা দিচ্ছেন রুনা খান। সম্প্রতি ফটোশুটের কয়েকটি স্থিরচিত্র নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। নতুন এসব ছবিতেও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। এক যুগ আগে যে রুনা খানকে সবাই জানতেন, চিনতেন, আজ সেই রুনা খানই যেন আবার ফিরে এসেছেন
এক যুগ আগে ৫৬ কেজি ওজন ছিল অভিনেত্রীর। ২০০৯ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের পরের বছর সন্তানও হয়। কিন্তু একপর্যায়ে ওজন দাঁড়ায় ৯৫ কেজিতে। ২০১১ সালে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন রুনা খান। কিন্তু তত দিনে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসার বিপরীতে বেড়ে হয়ে যায় ১০৫ কেজি
রুনা খান বলেন, ‘ধানমন্ডির প্রতিটি জিমে অন্তত ১০ বার ভর্তি হয়েছি। ভারতীয় কালচারাল সেন্টারে ভর্তি হয়েছি পাঁচ থেকে সাতবার। উইমেন্স কমপ্লেক্স সুইমিংয়ে কয়েকবার ভর্তি হয়েছি। অ্যারোবিকসে ভর্তি হয়েছি। বাসায় ট্রেডমিল, সাইকেলসহ ওজন কমানোর যন্ত্রপাতি কিনেছি। ১০ বছরে ওজন কমানোর অনেক চেষ্টা করেছি। ডায়েটের খাবার দিয়ে আমার একটা ফ্রিজ পুরো থাকত—ডার্ক চকলেট, মাশরুম, ক্যাপসিকামসহ আরও কত কী! কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না’
. তাহলে কীভাবে কী হলো, এমন প্রশ্নে রুনা খান বলেন, ‘২০১৯ সালে এসে আবিষ্কার করলাম, আমি যাঁদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু মনে করি; দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আমি তাঁদের দ্বারা মানসিকভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছি। ডিপ্রেশন পেয়ে বসত, এ জন্য আমি আমার মূল কাজে ফোকাস রাখতে পারতাম না। তারা এটা ভালোভাবে জানত যে কীভাবে আমার ফোকাস নষ্ট করা যায়। তত দিনে দেখলাম, আমার ওজন হয়ে গেছে ১০৫ কেজি। এমন হচ্ছিল, কোনো মাসে পাঁচ কেজি ওজন কমালাম, পরের মাসে ছয় কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেললাম। গত বছরগুলোয় কখনো ওজন কমে ১০০ কেজি, আবার কখনো বেড়ে ১১০ কেজি হয়েছে। ফলাফল সেই, যা তা–ই। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে টক্সিক মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। যাঁদের আমি তথাকথিত বন্ধু ভাবছি, তাঁদের কাছ থেকে সরে আসতে হবে।’
ওজন কমাতে কাউকে প্রেরণা মনে করেননি রুনা খান। নিজের জন্যই নিজে কাজটি করেছেন বলে জানালেন। বললেন, ‘আমার সঙ্গ তাড়াতে লেগেছে ১০ বছর, আর ওজন কমাতে লেগেছে মাত্র ১ বছর।’ দুই দশকের কয়েক বন্ধুর কারণে জীবনের এত বড় ট্রমায় যেমন রুনা খান পড়েছেন, তেমনি এই এক বছরের জার্নিতে নতুন কিছু বন্ধুকে পাশে পেয়েছেন, যাঁরা তাঁর জীবনে আশীর্বাদও। রুনা খানের ভাষায়, ‘দে ব্রিং হ্যাপিনেস ইন মাই লাইফ।’
এক বছরে ৩৯ কেজি ওজন কমাতে যা যা খেতেন, তার একটা তালিকা দিলেন রুনা খান। প্রতিদিনের সেই তালিকায় সকালে থাকত দুটি ডিম। এরপর যেকোনো ফল খেতেন। তারপর ব্ল্যাক কফি খেয়ে এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি। ওজন কমাতে রুনা খান প্রতিদিন দুপুরে এককাপ ভাত, সঙ্গে একবাটি সবজি, বড় একটুকরা মাংস অথবা মাছ। বিকেলে মুঠোপরিমাণ বাদাম ও ব্ল্যাক কফি খেতেন এবং এক ঘণ্টা ইয়োগা করতেন। এ ছাড়া প্রতিদিন রাতে বড় একবাটি সবজি, একটুকরা মাছ বা মুরগির মাংস ও একগ্লাস দুধ খেতেন

Also Read: আবার চমকে দিলেন বদলে যাওয়া রুনা খান

Also Read: যেভাবে ৩৯ কেজি ওজন কমালেন রুনা খান

Also Read: কী খান রুনা খান