কামরুল হক, বীর বিক্রম

  • ৪২২ মালিবাগ, ঢাকা।

  • বাবা শামসুল চৌধুরী, মা আনোয়ারা বেগম।

  • স্ত্রী রোজি হক।

  • খেতাবের সনদ নম্বর ১৪৫। গেজেটে নাম স্বপন।

কামরুল হক

মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন কামরুল হক (স্বপন)। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা ১৯৭১ সালের ২৫ আগস্ট ধানমন্ডিতে অপারেশন করেন।

তাঁদের পরিকল্পনা ছিল পুরাতন ২০ নম্বর রোডে চীনা দূতাবাসের সামনে এবং ১৮ নম্বর রোডে বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের বাসার সামনে অপারেশন করার। সেখানে পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ পাহারায় থাকত।

সন্ধ্যার আগে গাড়িতে করে তাঁরা প্রথমে ২০ নম্বর সড়কে যান। কিন্তু তখন নির্দিষ্ট স্থানে পাকিস্তানি সেনা-পুলিশ কেউ ছিল না। এরপর তাঁরা ১৮ নম্বরে যান। সেখানে বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের বাড়ির সামনে আটজন পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ বসে আড্ডা মারছিল। তাঁর দুই সহযোদ্ধা পাকিস্তানিদের গুলি করেন। তাঁর ওপর দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি সেনাদের কেউ পাল্টা গুলি করে কি না, তা লক্ষ রাখা।

সফলতার সঙ্গেই মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন করেন। ফিরে যাওয়ার পথে তাঁরা চরম ঝুঁকির মুখে পড়েন। ৫ নম্বর সড়কের মুখে মিরপুর রোডে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবরোধের মধ্যে পড়েন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল তখন সেখানে তল্লাশি শুরু করে। ওখানে দুটি ট্রাক মিরপুর রোডে সামনের দিকে, একটা জিপ রাস্তার ডান দিকে এবং আরেকটা জিপ পেট্রলপাম্পের সামনে নিউ মার্কেটের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো ছিল।

পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের গাড়ি থামাতে বলে। তাঁরা গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করে ডান দিকে বাঁক নেন। পাকিস্তানি সেনারা গালি দিয়ে তাঁদের বলে, ‘কিধার যাতা? রোখো।’ তত্ক্ষণাত্ তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। কামরুলের সহযোদ্ধা হাবিবুল আলম দক্ষতার সঙ্গে গাড়ি বাঁ দিকে ঘুরিয়ে এগিয়ে যান। তিনি, কাজী কামাল ও বদিউল চলন্ত গাড়ি থেকে গুলি শুরু করেন।

ওখানে পাকিস্তানি সেনা যারা দাঁড়িয়ে ও শুয়ে ছিল, বেশির ভাগ নিহত হয়। বাকিরা আহত হয়। কামরুল ও তাঁর সহযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এরপর তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে এক মিনিটের মধ্যে গ্রিন রোডের মোড় দিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এ অপারেশনের পর প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক প্রশাসনসহ সামরিক প্রশাসনেও ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

কামরুল হক ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে ভারতে যান। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান