Thank you for trying Sticky AMP!!

চিকিৎসকেরা কেন সাদা অ্যাপ্রন পরেন

সাদা অ্যাপ্রন পরে রোগী দেখবেন চিকিৎসক, সেটাই রীতি। অনেক দেশে তো ‘হোয়াইট কোট সিরিমনি’ও হয়। চিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষার্থীদের সে অনুষ্ঠানে শিক্ষাজীবনের একপর্যায়ে বেশ আয়োজন করে হাতে সাদা অ্যাপ্রন তুলে দেওয়া হয়।

তবে সাদা অ্যাপ্রনের চল কিন্তু শুরু থেকেই হয়নি। গত শতকের প্রথমার্ধের টিভি নাটকগুলোতে চিকিৎসকদের কালো স্যুটে দেখা যেত। কারণ, কালো পোশাককে কেতাদুরস্ত মনে করা হয়। তা ছাড়া গাঢ় রঙের পোশাকে রক্তের ছোপ বোঝা যায় কম।

তবে উনিশ শতকের শেষার্ধে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা বুঝতে শুরু করলেন, জীবাণুর বংশবৃদ্ধি এবং সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়া বন্ধে হাসপাতাল যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে। শুধু পরিষ্কার রাখলেই তো আর হলো না। সেটা মানুষকে বোঝাতেও হবে। সে কারণেই চিকিৎসকদের পোশাক থেকে শুরু করে হাসপাতালের বিছানার চাদর, পর্দাসহ যেখানে সম্ভব সেখানেই সাদা রঙের আধিক্য দেখা যেতে শুরু করে। কারণ, সাদা রঙের সঙ্গে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার সম্পর্ক আছে বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। আবার ‘আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল অব এথিকস’ শীর্ষক বিজ্ঞান সাময়িকীতে মার্কিন চিকিৎসক ড. মার্ক এস হচবার্গ ২০০৭ সালে লিখেছেন, সাদা রঙের আরেকটা কারণ আছে। আর তা হলো, সত্য ও স্বচ্ছতা।

টমাস এইকেনসের আঁকা দুটি ছবি। বাঁয়ে ১৮৭৫ সালে আঁকা শল্যবিদদের ছবি। আর ডানেরটি আরেক দল চিকিৎসকের, এঁকেছেন ১৮৮৯ সালে

চিকিৎসকদের কালো পোশাক থেকে সাদাতে যেতে খুব একটা সময় লাগেনি। মার্কিন চিত্রশিল্পী টমাস এইকেনসের আঁকা দুটি ছবিতে তা বেশ পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়। ১৮৭৫ সালে আঁকা ছবিটিতে দেখুন, ড. স্যামুয়েল গ্রস এবং তাঁর সহকর্মীদের সবাই কালো স্যুট পরে এক রোগীর পায়ে অস্ত্রোপচার করছেন। ১৫ বছরের কম সময় পরে এইকেনস আঁকেন ‘দ্য অ্যাগন্যু ক্লিনিক’ নামের আরেকটি ছবি। পরের ছবিতে আরেক দল চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করছেন, তবে সবার পরনে সাদা পোশাক।

অস্ত্রোপচারের সময় সবুজ বা নীল পোশাক পরেন চিকিৎসক

অস্ত্রোপচারের সময় এখন অবশ্য নীল বা সবুজ পোশাক পরেন চিকিৎসকেরা। এর শুরুটা বিংশ শতকের শুরুর দিকে। ১৯১৪ সালে এক প্রভাবশালী চিকিৎসক দেখলেন, রক্তের গাঢ় লাল থেকে হুট করে সাদা রঙে তাকালে ক্ষণিকের জন্য চিকিৎসকদের চোখ ধাঁধিয়ে যেতে পারে। আবার ভ্রমও তৈরি হতে পারে। এ সমস্যা এড়াতে অপারেশন থিয়েটারে সবুজ এবং পরবর্তী সময়ে নীল রঙের কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়।

হাসপাতালে মানুষের ভিড়ে সাদা অ্যাপ্রনের চিকিৎসকদের আলাদা করে চিনতে সুবিধা হয় ঠিক। তবে রোগীর মনে নেতিবাচক প্রভাবও তৈরি করে বলে শোনা যায়। হয়তো সে কারণেই ‘হোয়াইট কোট সিনড্রোম’ বা ‘হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন’ জাতীয় শব্দসমষ্টিগুলোর সৃষ্টি। চিকিৎসকের চেম্বারে বা হাসপাতালে গিয়ে বুক ধুকপুক করার মতো যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় মানুষ, তা বোঝাতে হোয়াইট কোট সিনড্রোম ব্যবহার করা হয়। সে কারণে অনেক চিকিৎসক, বিশেষ করে শিশুদের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকেন যাঁরা, তাঁরা কখনো কখনো সাদা অ্যাপ্রন ছাড়াই রোগীর সামনে যান।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স এবং মেন্টাল ফ্লস ডটকম