অপেক্ষার প্রহর

অপেক্ষার প্রহরগুলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। শ্রাবণের অঝোর ধারার অবিরাম বর্ষণে খাল-বিল, নদী-নালা টইটম্বুর। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ শুনতে শুনতে আব্বার জন্য প্রতীক্ষারত আমরা চার ভাইবোন।

আব্বা আসবেন ঢাকা থেকে। দূর থেকে আফতাব কাকার নৌকা দেখা যাচ্ছে। হ্যাঁ, আব্বাকে দেখা যাচ্ছে! নৌকার সামনে দাঁড়িয়ে দূর থেকে আমাদের নাম ধরে ডেকে চলেছেন। আমরা চার ভাইবোন দৌড়ে খালের এক প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ালাম, সঙ্গে গ্রামের আরও অসংখ্য ছেলেমেয়ে।

লম্বা ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব আব্বা নৌকা থেকে নেমে এলেন। আমরা তাঁর সঙ্গে থাকা প্রমাণ সাইজের ব্যাগগুলো আমাদের কবজায় নিয়ে নিলাম। আব্বা ঘরে প্রবেশ করেই ব্যাগগুলো ধীরে ধীরে খুলতে থাকেন। তিনি ঢাকা থেকে হরেক রকম জিনিসপত্র নিয়ে আসতেন। তবে বর্ষার সময় সুরেশ্বর থেকে পদ্মার সুস্বাদু রুপালি ইলিশ আনতে কখনোই ভুলতেন না।

কিন্তু কোনো কিছুতেই আমাদের ক্ষুধা নিবারণ হতো না। আমাদের তৃষ্ণার্ত চোখ আবদ্ধ থাকত আব্বার কাঁধে ঝোলানো কবি ব্যাগটির দিকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আব্বা ঢাকা থেকে নিয়ে আসা অসংখ্য পত্রপত্রিকা, যেখানে থাকত আম্মার জন্য রহস্য পত্রিকা, ভারত বিচিত্রাসহ অসংখ্য ম্যাগাজিন আর আমাদের জন্য ক্রীড়াজগত, কিশোর ক্ল্যাসিক, কার্টুন পত্রিকাসহ খেলাধুলাবিষয়ক হরেক রকম পত্রিকা, সেগুলো বের করতেন। আমরা বুভুক্ষুর মতো সেগুলো পাঠ করতাম। আব্বা প্রতি মাসে একবার করে শরীয়তপুর আসতেন। আমরা এই এক মাসে এগুলো প্রায় মুখস্থ করে ফেলতাম!