তারুণ্য

আকাশ আমি ভরব গানে

নিজের গান ছড়িয়ে যাক গোটা দুনিয়ায়। মডেল: জারিফ, ছবি: অধুনা
নিজের গান ছড়িয়ে যাক গোটা দুনিয়ায়। মডেল: জারিফ, ছবি: অধুনা

আপনি হয়তো গান গাইতে ভালোবাসেন। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে স্বজন-বন্ধুরা জেঁকে ধরে, একটা গান শোনাতেই হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চে গান গেয়ে ‘হাততালি’র স্বাদ পেয়েছেন। কিন্তু টেলিভিশন-রেডিও চ্যানেলগুলো পর্যন্ত পৌঁছানোর সুযোগ হয়নি। তাতে কী? একুশ শতকের পৃথিবীতে তরুণদের স্লোগান যখন ‘রুখবে আমাকে কে’, ঘরে বসেই আপনার গান পৌঁছে যেতে পারে সারা পৃথিবীতে। ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউডের মতো কিছু ওয়েবসাইট সে সম্ভাবনার সুযোগ করে দিচ্ছে। ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন ঘরোয়া আয়োজনে তৈরি মিউজিক ভিডিও। আর সাউন্ডক্লাউডে অ্যাকাউন্ট খুলে গানের অডিও আপলোড করে রাখতে পারেন।
গান—হোক সে খালি গলায়, টুংটাং গিটারে কিংবা পুরোদস্তুর কম্পোজ করে—নিজের গান তরুণেরা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্তর্জালে। বিভিন্ন শিল্পীর গান কভার করা ছাড়াও কেউ কেউ নিজের লেখা, সুর করা গানও ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউডে আপলোড করছেন। কারও কারও আছে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শ্রোতারা মন্তব্য করছেন, আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, তরুণেরাও পাচ্ছেন নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ। গানগুলো অন্তর্জালে সংরক্ষিত থাকছে, তাই হারিয়ে যাওয়ারও ভয় নেই।
বেশ কয়েক বছর হলো নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গান আপলোড করছেন যেফার রহমান। দিনে দিনে বেড়েছে সাবস্ক্রাইবার আর ‘ভিউ’য়ের (ভিডিওটি কতবার দেখা হলো) সংখ্যা। এরই মধ্যে যেফার রীতিমতো তারকা বনে গেছেন। বলছিলেন, ‘ইউটিউব থেকেই আমার শুরু। বিভিন্ন ইংলিশ গান কভার করে আপলোড করতাম। একসময় ফুয়াদ ভাইয়ের (ফুয়াদ আল মুক্তাদির) মতো তারকাদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে শুরু করলাম। এখন বিভিন্ন করপোরেট শো করছি, জিঙ্গেল করছি। সামনে আমার অ্যালবাম আসছে।’ অনলাইনের এই মাধ্যমগুলো যে কত বড়, প্রমাণ পাওয়া গেল যেফারের কথায়। আরও বলছিলেন, ‘কিছুদিন আগে মাইকেল জ্যাকসনের ডার্টি ডায়ানা গানটা কভার করার পর বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্ক থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তারা ফোনে আমার ইন্টারভিউ নিয়েছে।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন জারিফ তাজওয়ার। সুযোগ পেলে গান আপলোড করেন তিনিও। জারিফ বলেন, ‘বাইরের দেশে অনেক ইউটিউবার (যেসব ইউটিউব ব্যবহারকারী নিয়মিত নিজের চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করেন এবং সেগুলো প্রচুর ভিউ পায়) আছেন, বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এখনো সেভাবে চালু হয়নি। তবু অনেকে করছে। ফেসবুকে শেয়ার করলে গানগুলোর ভিউ বাড়তে থাকে।’ ফেসবুকে শেয়ার ছাড়াই অবশ্য প্রচুর ভিউ পেয়েছে ভিকারুননিসা স্কুলের নবম শ্রেণি পড়ুয়া ইশরাক নাওয়ার। তার ডাকনাম প্রেরণা। খুব বেশি দিন হয়নি, ‘প্রেরণা সিংস’ নামে ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলেছে সে। প্রেরণা বলছিল, ‘আমার তো ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নেই। প্রথম দিনই দেখি আমার গান এক হাজার ভিউ ছাড়িয়ে গেছে। ইউটিউবের প্ল্যাটফর্মটা আসলে অনেক বড়।’
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আকাশ আমায় ভরল আলোয়, আকাশ আমি ভরব গানে।’ ভার্চুয়াল জগতের বিশালত্ব আকাশের চেয়ে কম কিসে! অন্তর্জালে ধরা পড়ে এসব গান পৌঁছে যায় দেশ থেকে দেশে। এ যেন আকাশ গানে ভরানোর ডিজিটাল পদ্ধতি!