
‘প্রাণ আচার প্রতিযোগিতার বিচার করতে এসে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। আসলে এত আচার একসঙ্গে কখনোই দেখিনি। মজার ব্যাপার হলো, একটা করে আচার মুখে দিই, আর মুখের আকার পরিবর্তন হতে থাকে। এ এক অন্য রকম অনুভূতি!’ বলছিলেন রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। ১৪তম প্রাণ জাতীয় আচার প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন তিনি।
লাক্স সুন্দরী শানারৈ দেবী শানু অবশ্য আরও এগিয়ে—‘আচার প্রতিযোগিতায় বিচার করতে পারার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সব ধরনের আচারের স্বাদ নেওয়া।’ অভিনেত্রী স্বাগতা গলা মেলান তাঁর সঙ্গে। ‘আচার এমনিতেই আমার অনেক প্রিয়। প্রাণ আচার প্রতিযোগিতা বিচার করতে এসে তাই বিচারকার্যটাও শেষ করেছি আনন্দের সঙ্গে।’
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২২ মে ১৪তম প্রাণ জাতীয় আচার প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানেই নিজেদের অনুভূতি তুলে ধরেন প্রতিযোগিতার বিচারকেরা। অবশ্য তার আগে বিচারকদের পরিচয় দিয়ে মঞ্চে ডেকে নেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সামিয়া আফরীন। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ ইফফাত আরা নার্গিসের তত্ত্বাবধানে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বিচারক ছিলেন অভিনেত্রী সাবেরী আলম, কুমকুম হাসান, শানু, স্বাগতা, কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান, রান্নাবিদ রাহিমা সুলতানা, রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন, সাংবাদিক ফারজানা রূপা, জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য সাথিরা জাকির জেসি এবং আরএফএল হোম মেকার অব দ্য ইয়ার আফিফা আকতার।
হলভর্তি দর্শকদের সামনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি শুরু হয় মুনমুন আহমেদের নির্দেশনায় একটি নাচের মাধ্যমে। সেই নাচেই তুলে ধরা হয় বাঙালি নারীর চিরায়ত জীবনযাত্রা। পরে মঞ্চে আসেন সংগীতশিল্পী মাহাদী ও এলিটা। দর্শকদের অনুরোধে তাঁরা শোনান বেশ কয়েকটি গান। স্বামী-স্ত্রীর নিত্যঝগড়ার অভিনব মঞ্চায়ন করেন ‘মীরাক্কেল’ বিজয়ী আবু হেনা রনি ও শশী।
অনুষ্ঠানে দর্শকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন প্রতিযোগিতার মিডিয়া পার্টনার ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী ও ইলিয়াস মৃধা। এরই ফাঁকে বড় পর্দায় দেখানো হয় এবারের আচার প্রতিযোগিতার বিচারের ভিডিওচিত্র। তার পরই মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। মঞ্চে উঠেই বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আচারের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। মায়ের হাতের আচার আমার খুব প্রিয়। এখানে যাঁরা আছেন, তাঁরাও
নিশ্চয় মা। মায়ের ভালোবাসা নিয়ে যে জিনিস তৈরি হয়, সেটি তো মজার হবেই।’
এবারের বিজয়ীকে পুরস্কার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মঞ্চে ডেকে নেন এবারের বর্ষসেরা আচারের বিজয়ী আফরিনা রহমানকে। ১৪তম প্রাণ জাতীয় আচার প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ দুই লাখ টাকা। অনুভূতি বলতে গিয়ে আফরিনা রহমান আপ্লুত হয়ে যান, ‘আচার বানানো আমার নেশা। কোনো প্রতিযোগিতায় সেটি জমা দেওয়া আরও বড় নেশা। এমনও হয়েছে, সব কাজ ফেলে দৌড়েছি প্রতিযোগিতায় আচার জমা দিতে। সেই কষ্টের পুরস্কার পেলাম এবার।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দুই হাজার ৫৩১ জন প্রতিযোগীর প্রায় সাড়ে ছয় হাজার আচারকে পেছনে ফেলে সেরার পুরস্কার জেতেন ঢাকার আফরিনা রহমান। প্রতিযোগিতায় টক, ঝাল, মিষ্টি ও অন্যান্য বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিটি বিভাগ থেকে সেরা তিনজনকে ঢাকা-মালয়েশিয়া-ঢাকা বিমান টিকিট, ল্যাপটপ কম্পিউটার ও আইপিএস পুরস্কার দেওয়া হয়। বিভিন্ন বিভাগের ৩৫ জনকে দেওয়া হয় শুভেচ্ছা পুরস্কার৷