গল্প

আছি তোমার পাশে

হুমায়ূন আহমেদের একটা বই পড়লাম—বৃষ্টি বিলাস। বইটার শেষে ছেলেটা মেয়েটাকে একটা চিঠি লেখে। চিঠিটা পড়ে চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। বুকের ভেতর জমে থাকা ঘাগুলো আবার দগদগে হয়ে উঠছে। মনে আছে? তোমাকে কত্ত চিঠি লিখতাম আমি! আর সেগুলো পড়তে পড়তে কাহিল হয়ে যেতে তুমি। সেই কবে থেকে তোমাকে আর চিঠি দেওয়া হয় না।
আমি রোজ ঠিকই কিন্তু তোমাকে চিঠি লিখি। তবে সেই চিঠিগুলো কেবল আমার টেবিলের ড্রয়ারেই বন্দী হয়ে থাকে, তোমার কাছে আর পৌঁছে না।
জানো, তোমার দেওয়া চকলেটের প্যাকেটগুলো এখনো যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছি? জানো, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তোমার দেওয়া চাবির রিংটা নিয়ে যেতে কখনোই ভুলি না আমি? আর আমার জন্মদিনে তোমার সেই কার্ডটা? ওটা তো আমি কাউকে ধরতেই দিই না।
যদি নষ্ট হয়ে যায়? সেই জায়গাটার কথা মনে আছে, যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল? আজও আমি ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি একটা আশায়। সৌভাগ্যবশত বা দুর্ভাগ্যবশতই হোক না কেন, যদি একটাবার তোমার দেখা পাই। মানবমন বড় অদ্ভুত! পুরোনো স্মৃতিগুলো বারবার জাগিয়ে কষ্ট পেতে সে ভালোবাসে।
মনটা খুব চাইছে ঝুম করে একটা বৃষ্টি নামুক আর আমি তোমার হাত ধরে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে যাই। না থাক, বৃষ্টিতে ভিজব না।
তোমার তো আবার একটু ভিজলেই জ্বর চলে আসবে। আচ্ছা, তাহলে আমার পাশে বসে একসঙ্গে বৃষ্টি দেখবে? দেখো বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কী অদ্ভুত হয়ে নামছে! হ্যাঁ, বৃষ্টি পড়ছে ঠিকই। তবে সেটা আকাশ থেকে নয়, আমার চোখ থেকে।
নীরব এই অশ্রুবর্ষণে কেবল আমার বিছানার বালিশটাই ভিজে যাচ্ছে, কেউ সেটা দেখছে না। জানালার ফাঁক গলে চাঁদের মৃদু আলো গায়ে এসে লাগছে। একটা গান মনে পড়ছে: ‘আমি চাঁদের আলো হয়ে তোমার কালো ঘরে জেগে রই সারা নিশি...’। ইশ্! আমি যদি চাঁদের আলো হয়ে যেতে পারতাম! একটু হাসার চেষ্টা করছি। কিন্তু সেই হাসিটা বুকের ভেতর জমাটবাঁধা পাথরগুলো থেকে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে। মনে হচ্ছে ভাঙা কাচের ওপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটছি।
রোজ বিকেলে বারান্দায় একটা শালিক পাখি এসে বসে। শালিকটার চোখে কিসের যেন একটা শূন্যতা দেখতে পাই।
হয়তো শালিকটাও আমার মতো তার হারিয়ে যাওয়া সঙ্গীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। জানো? রোজ রাতে তোমায় নিয়ে কত্ত স্বপ্ন দেখি। চোখের দুটো পাতা এক হলেই তোমাকে নিয়ে স্বপ্নের রাজ্যে ডুবে যাই আমি। যেখানে শুধুই আমি আর তুমি। কিন্তু ঘুমটা ভেঙে গেলেই অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করতে হয় বাস্তবের এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। খুব জানতে ইচ্ছা হচ্ছে তুমি কেমন আছ।
আমার দিকে তাকিয়ে তোমার অসাধারণ সুন্দর সেই হাসিটা আবার দুচোখ ভরে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। তোমার ভরাট গলার প্রিয় সেই কণ্ঠস্বরটা কানে বাজছে। মনে হচ্ছে এই তো আমার সামনে তুমি দাঁড়িয়ে আছ। হাতটা বাড়ালেই যেন তোমায় স্পর্শ করতে পারব।
চলো, দুজন চোখ বন্ধ করি। একটা দৃশ্য কল্পনা করি—জোছনাস্নাত কোনো এক অপূর্ব রজনী কিংবা শ্রাবণের ক্লান্তিবিহীন বৃষ্টির দিন। পলকের নৈঃশব্দ্য তীব্র হিমেল বাতাস হয়ে শীতল করে দিচ্ছে চারপাশ।
অচেনা রাস্তার পথ ধরে উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে চলেছি আমরা দুজন। আমার খুব ভয় হচ্ছে। তুমি খুব শক্ত করে আগলে ধরে রেখেছ আমাকে। আর বলছ, ‘তোমার কোনো ভয় নেই। এই তো আমি আছি তোমার পাশে।’