ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা
এক বন্ধুর সঙ্গে আমার প্রেম ছিল। আমারই ইচ্ছায় তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়। আমাদের অন্তরঙ্গ দৃশ্য সে গোপনে ভিডিও করে। পরীক্ষা কাছে আসায় আমি ওকে কিছুদিনের জন্য ‘না’ বলেছিলাম। কিন্তু সে মানেনি। একসময় আমাদের ঝগড়া বেধে যায়। তখন সে আমাকে ভিডিও দেখিয়ে পরাজিত করে। নিরূপায় হয়ে আমি আবার রাজি হই। আমার সঙ্গে বেইমানি করে সে সঙ্গে দুটি ছেলেকে নিয়ে আসে। তিনজন মিলে আমাকে অত্যাচার করে। আমি ওদের হাতে বন্দী হয়ে যাই। মানসম্মানের ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলতে পারিনি। আমার বয়স ১৮। দীর্ঘ একটি বছর চলে গেলেও আমার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। লিখতে গিয়ে চোখের জলে খাতা ভিজে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তোমার পরিবার এখানে কী ভূমিকা পালন করছে, তা বোঝা গেল না। এ বয়সে অনেকেই প্রেম করে, কিন্তু সেটি তো অনেক সুস্থভাবে মনের আবেগ আদান-প্রদানের ভেতর দিয়েও চলতে পারে। মনে হচ্ছে, তোমাদের সম্পর্কের মধ্যে মনের আকর্ষণের চেয়ে শরীরের ব্যাপারটিই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এমন কি কেউ নেই যার সঙ্গে তুমি কোনো বড় ধরনের বিপদে পড়লে সহায়তা চাইতে পারো? যখন জানতে পারলে ছেলেটি তোমাকে ব্ল্যাকমেল করছে, তখন তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলে সে তোমার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করেছে। তুমি লিখেছ ভয় পেয়ে এবং নিজের সম্মানের কথা ভেবে তুমি কাউকে কিছু বেলানি। কিন্তুতার ফলাফল কী হলো? তোমাকে তো দিনের পর দিন এই অসম্মানের জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না।
একটি মানুষ যখন আত্মসম্মান সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে তখন তার জন্য বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন হয়ে যায়। ছেলেটি একটি বড় ধরনের অপরাধ করছে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, তুমি আর বিলম্ব না করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র বা অন্য কোনো মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করো। সেখানকার কাউন্সেলর এবং আইনজ্ঞ তোমাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।
সমস্যা
আমি অনেকটা চঞ্চল প্রকৃতির। কলেজে পড়ার সময় এক ভাইয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হতো। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আমি তার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি পড়াশোনায় খুব অমনোযোগী হয়ে পড়ি। তাকে ভুলে যাওয়ার জন্য অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক করার চেষ্টাও করেছি, কিন্তু পারিনি। আর্থিক সমস্যার কারণে এক স্কুলশিক্ষক আমার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহন করেন। এখনো আমার পড়াশোনার অবস্থা খুব খারাপ। সব সময় আমার মধ্যে একধরনের মানসিক অস্থিরতা কাজ করে, আমার অনেক খারাপ লাগে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তোমাদের সম্পর্কটি কি কেবল বন্ধুত্বের ছিল? নাকি ভালোবাসার ছিল? এমনকি হতে পারে, সেই ব্যাপারটিতে কোনো অস্পষ্টতা ছিল। অথবা তোমার দিক থেকে একধরনের আবেগীয় নির্ভরশীলতার অনুভূতি ছিল, কিন্তু তার দিক থেকে ছিল না?
একটি সম্পর্ক টিকে থাকা দুটো মানুষের সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। কোনো একজন যখন এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন সেটিকে শ্রদ্ধা করা ছাড়া তো আর কোনো উপায় থাকে না। তুমি যে সেই মানুষটিকে ভোলার জন্য অন্য সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা করেছ, সেটি ভুল হচ্ছে। কারণ, পুরোনো সম্পর্কটিতে যখন আমাদের মন আটকে থাকে, তখন নতুন আরেকটি মানুষকে জীবনে জড়ালে তার প্রতি অবিচার করা হয়। নিজেকেও ঠকানো হয়। তুমি যদি নিজেকে ভালোবাসো তাহলে এই মুহূর্তে তোমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে মন ও শরীরের যত্ন নেওয়া।
সেই ভাইয়া তোমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ এটা নয় যে তুমি ছোট হয়ে গেছ। যে শিক্ষক তোমার লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছেন, তিনি নিশ্চয়ই তোমার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা দেখেছেন, তা-ই না? কাজেই তঁার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাবোধ অটুট রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে থােকা।