
‘আচ্ছা, আমি কি এই কাজটা করব? নাকি দ্বিতীয় কাজটি বেছে নেব? ওটাও যদি ভালো না হয়!’ এই কথাগুলো আমাদের প্রত্যেকেরই মনে আসে। কেননা আমাদের সামনে যখন সুযোগ চলে আসে, যেখান থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়, মুশকিলে পড়তে হয় তখন। অনেকেই আছেন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। কিন্তু এর বিপরীত দলও কিন্তু রয়েছে।
কোনটি ছেড়ে কোনটি বেছে নেব, এ রকম মনোভাব কিন্তু দ্বিতীয় দলের মানুষদের সমস্যায় ফেলে দেয়। আর যে সমস্যাটি বড় হয়ে দাঁড়ায় তা হলো, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য নিজেকে তৈরি রাখা।
হতে পারে ভালো কিংবা মন্দ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা আলগিন বলেন, ‘আমাদের নিজের মধ্যেই কিন্তু এ রকম দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা চলে, নেতিবাচক কোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত না থাকা। সবার আগে আমাদের মনে রাখা উচিত, জীবনে ভুল এবং সঠিক দুটোই রয়েছে। সুবিধার সঙ্গে অসুবিধাও আসতে পারে। তাই নিজেকে আগে তৈরি করুন।’
কেন অতিরিক্ত সংশয়
সুলতানা আলগিন এই সমস্যার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেন, যেমন—
নিজে সাহসী না থাকা
আপনার সিদ্ধান্তটি খারাপ হতে পারে কিংবা পুরোপুরি ভালো হবে এমন নয়। কিন্তু আপনি নিজে কী করতে চাইছেন বা বর্তমান এবং সামনে এর পরিণতি কী, সব মিলিয়েই সিদ্ধান্তটি নিন। তারপরেও কথা থাকে। কেননা পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু হয় না। হয়তো ভেবে রেখেছেন, পড়াশোনা শেষ করেই চাকরি করবেন। কিন্তু চাকরির সুযোগ যদি এর মধ্যেই চলে আসে? আবার এরপর যদি ভালো চাকরির সুযোগ না থাকে? এসব মিলিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিন। এখানে নিজের দৃঢ় মনোভাবটাই আসল।
লোকে কী বলবে?
শুধু কি পাড়াপড়শি? এই তালিকায় যে নিজের আত্মীয় থেকে শুরু করে ঘরের লোকেরাও আছে। পড়াশোনা শেষ করে বসে থাকব? ঘরে কী বলবে? চাকরিটা না নিয়ে কি ভুল করলাম? এত সব প্রশ্নই কিন্তু আপনাকে সংশয়ে ফেলে দিচ্ছে।
সব সময়ই ভালো হবে এমন নয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো ফল করে আসছেন। তাই নেতিবাচক কিছু আশাই করতে পারছেন না। সুলতানা আলগিন বলেন, এমন মানসিকতা কিন্তু আপনাকে সংকীর্ণ করে তুলছে। সেই সঙ্গে খেয়াল করুন, আপনি নিজেই কিন্তু সামান্য বিষয়ে ভীত হয়ে পড়ছেন।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
যাঁ, বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়াই প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে অতিরিক্ত চিন্তা কিন্তু আপনার মনোজগতে খারাপ প্রভাব ফেলছে। যেটি এখনো হয়নি সেটি ভেবে নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন। এটি কিন্তু আপনার স্বাভাবিক মুহূর্তকেও নষ্ট করে দিচ্ছে।
রয়েছে সমাধান
সুলতানা আলগিনের মতে, ‘হুট করেই এমন মানসিকতা পরিবর্তন সম্ভব না হলেও চেষ্টা করুন। একটা সময় আপনি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন।’ তিনি এ বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেন—
নিজেকে শুনুন
আপনার সমস্যা আপনি যেমন বুঝতে পারবেন, অন্য কেউ তেমন পারবে না। তাই নিজের মন বা বিবেক যা বলে সেটা শুনুন।
মস্তিষ্ক ও হৃদয় দুটোই
দুটোরই সদ্ব্যবহার করে যাচাই করুন। কখনো কখনো যুক্তি এবং মন এই দুটোর মধ্যেও দ্বন্দ্ব এসে পড়ে। তাই দুটো মিলিয়েই দেখুন। আর সবচেয়ে আগে বিশ্বাস করুন নিজেকে।
এটি একান্তই আপনার পরিকল্পনা
আপনি আপনার জীবনে কী করতে চান, সেটি আপনিই বেছে নিন। সবার পরিকল্পনা অবশ্যই এক নয়। কেউ হয়তো শিক্ষকতায় ভালো, কেউ আবার সাংবাদিকতায়। কোনো পেশাই কিন্তু খাটো নয়। তাই নিজের পথচলা নিজের মতো করে এঁকে নিন। নিজের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
কারও সঙ্গে আলোচনা
আপনার আগেও কিছু মানুষ এই পথ দিয়ে হেঁটে গেছে। চাইলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। তাই বলে বিভ্রান্ত না হয়ে নিজেকে গুরুত্ব দিন।
প্রস্তুত থাকুন সব সময়
সুলতানা আলগিন জানান, ভালোমন্দ মিলিয়েই আমাদের প্রত্যেকের পথচলা। তাই হোঁচট খেয়েই আপনাকে হাঁটতে শিখতে হবে। একবার হাঁটা শিখে গেলেও কিন্তু পিছলে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই পিছলে যাওয়ার ব্যাপারটি মাথায় রেখেই লক্ষ্যে এগিয়ে যান।
কেননা কথায় আছে, সৎ ইচ্ছা এবং অদম্য প্রচেষ্টাই এনে দিতে পারে সবকিছু!