Thank you for trying Sticky AMP!!

ইশ্, যদি একটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকত

শিশু উমাইর বিন সাদী ও তার মা ইশরাত হাসান। ছবি: সংগৃহীত

ছয় মাস বয়সী মেয়েকে বাসায় রেখে কয়েক দিন হলো কাজে যোগ দিয়েছেন বীথি রহমান। বীথি নিজের মুঠোফোনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে নিয়েছেন। অফিস থেকেই বাসায় মেয়েটি কী করছে, তা দেখতে পান। আহা, ও তো কিছুই খাচ্ছে না। কাজের সহকারী তো মনে হয় মেয়েকে সামলাতে পারছে না—এভাবেই হা-হুতাশ করে দিন পার করছেন বীথি। বীথি বললেন, ইস, যদি একটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকত।

এই অবস্থা দেশের অধিকাংশ কর্মজীবী-শ্রমজীবী নারীর। সৈয়দা আশরাফুন্নাহার শুধু এ সমস্যায় চাকরিটা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তারপর রাজধানীর মিরপুরে চার মাস আগে কেয়ার ফর চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট নামের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলেন; যেখানে নিজের মেয়ে মেঘমালাসহ বড় হচ্ছে আরও কর্মজীবী নারীর সন্তানেরা।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানে ৪০ জন বা তার বেশি নারী কাজ করলে সেসব প্রতিষ্ঠানে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য এক বা একাধিক উপযুক্ত কক্ষ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের রাজস্ব বাজেটে বাস্তবায়িত হচ্ছে ৪৩টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। এর বাইরে ‘২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প’-এর অধীনে ঢাকায় ১০টি এবং ঢাকার বাইরে ১০টি সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোতে খরচও কম।

ব্র্যাকের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে শিশুরা হেসে–খেলে বড় হচ্ছে। ছবি: ব্র্যাকের সৌজন্যে

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে বিভাগীয় শিক্ষকদের জন্য নতুন একটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক এবং বেসরকারি সংস্থা বর্তমানে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর বেসরকারি উদ্যোগে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র চালুতে উৎসাহিত করা এবং তা নিয়ন্ত্রণে সরকার শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন ২০১৮-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র কর্মসূচি) বেনুয়ারা খাতুন বললেন, সরকারি নিয়মনীতির আলোকে বেসরকারি উদ্যোগে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে উঠলে তাতে সবাই উপকৃত হবেন।

‘কর্মজীবী নারী’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বললেন, প্রতিষ্ঠানে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকলে কর্মীরা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন এবং ভালোভাবে কাজটি করতে পারেন। এতে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ে। ফলে একরকম প্রতিষ্ঠানেরই উৎপাদনশীলতা বাড়ে।

রাজধানীতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে ১৯৯৭ সাল থেকে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। ব্র্যাকের মানবসম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক শ্রাবণী সাহা নিজেও তাঁর সন্তানকে চার মাস বয়স থেকে এই কেন্দ্রেই পাঁচ বছর রেখেছেন।

শ্রাবণী সাহা বললেন, এখানে সর্বস্তরের কর্মীরা তাঁদের সন্তান রাখতে পারেন। টঙ্গী থেকে এক বাবা তাঁর সন্তানকে নিয়ে আসেন এই কেন্দ্রে। এই সুবিধার কারণে ব্র্যাকে কর্মী বিশেষ করে নারী কর্মীদের ঝরে পড়ার হার খুবই কম।

‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপনের বিষয়ে হাইকোর্টের রুল কর্মস্থল, বিমানবন্দর, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন, শপিং মলের মতো জনসমাগমস্থলে এবং সরকারনিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত ও ব্যবস্থাপনায় বিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ২৭ অক্টোবর রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জনস্বার্থে ৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর বিন সাদী ও তার মা আইনজীবী ইশরাত হাসান ওই রিট করেন। ইশরাত হাসান বললেন, ‘আমি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারসহ একটি নিরাপদ কক্ষের আবেদন করেছি, মা তাঁর সন্তানকে নিরাপদে রাখতে পারবেন।
অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন নারী চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রসহ জনসমাগমস্থলে অবকাঠামোর অভাব নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে।’