উদার হওয়ার প্রেরণা লোকে কোত্থেকে পায়? অর্থনীতিবিদ, মনোবিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরা হাজারো বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।
যদি কেউ ধরে নেয়, মানুষের আচরণ মূলত স্বার্থকেন্দ্রিক—সে ক্ষেত্রে অন্যের ভালোর জন্য সম্পদ স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দেওয়ার কাজটা অযৌক্তিক মনে হতে পারে। এই আপাতবৈপরীত্য ঘোচাতে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ তত্ত্ব দিলেন, দান করার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে।
আবার কেউ ইঙ্গিত দিলেন, দানশীলতা মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সংহতির প্রেরণা জোগায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর টিকে থাকার জন্যই এমন উপলব্ধির প্রয়োজন আছে। আরেকটি ব্যাখ্যা এ রকম: বিনিময়ে কিছু পাওয়ার লক্ষ্যেই মানুষ দান করে থাকে।
আসল উত্তরটা তবে কী? ইউরোপের একদল বিজ্ঞানী গত মঙ্গলবার একটা জবাব দিয়েছেন। শুনতে এটা খুব সরল মনে হতে পারে: দান করার মাধ্যমে মানুষ সুখ অনুভব করে। সুইজারল্যান্ডের জুরিখের একটি পরীক্ষাগারে ৫০ জনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তাঁরা দেখেছেন, উদারতাপূর্ণ কোনো অভিজ্ঞতা অর্জনের পর মানুষের সুখের মাত্রা বাড়ে। একই সময়ে তাঁদের মস্তিষ্কের চৌম্বক অনুরণন চিত্র (এমআরআই) বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই সুখের প্রভাবে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ উদ্দীপিত হয়, যা উদারতাপূর্ণ আচরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এ বিষয়ে নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেন, তাঁরা উদারতা ও সুখের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজতে গিয়ে তার সপক্ষে আচরণগত এবং স্নায়বিক প্রমাণ পেয়েছেন। এই গবেষণার ফলাফল শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। উদারতা ও সুখ মানুষের ভালো থাকার মানোন্নয়ন করে এবং সামাজিক সাফল্যের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অবশ্য দৈনন্দিন জীবনে মানুষ উদারতা ও সুখের যোগসূত্রকে তেমন গুরুত্ব দিতে চায় না। তাই অন্যের কল্যাণে খরচ করার বিষয়টা এড়িয়ে যায়।
মস্তিষ্কের ওই বিশেষ অঞ্চলগুলোর মধ্যে সংযোগ দৃঢ় করার কোনো উপায় আছে কি? জার্মানির লুয়েবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সোইয়ং পার্ক এই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বললেন, সুখী হওয়ার জন্য কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে দানশীল বা উদার হতে পারেন কি না জানা দরকার।
গত সোমবার প্রকাশিত পৃথক গবেষণা বলছে, সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সহায়তার প্রেরণা মানুষের মধ্যে থাকে। তবে সামাজিক শৃঙ্খলা অটুট রেখেই তারা এমন উদারতা দেখিয়ে থাকে।