
মেয়েটি দেখতে যেমন অসম্ভব মিষ্টি, ছেলেটি দেখতে তেমনি মায়াময়। মেয়েটির চোখের দিকে তাকালে নিজের অজােন্তই কোথায় যেন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, আর ছেলেটির চোখের দিকে তাকালে মায়া লাগে। মেয়েটির চোখ দুটিতে রূপকথা ভাসে, আর ছেলেটির চোখ দুটিতে স্বপ্ন ভাসে। মেয়েটির চোখ দুটিতে দুষ্টুমি খেলা করে, ছেলেটির চোখ দুটি স্বপ্নিল। মেয়েটি অসম্ভব চঞ্চল, আর ছেলেটি শান্ত।
মেয়েটির মুখের দিকে তাকালে ভালোলাগা উড়ে এসে জুড়ে বসে, আর ছেলেটির মুখের দিকে তাকালে রাজ্যের মায়া এসে ভর করে। মেয়েটি মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, কোনোদিন তার প্রিয় মানুষটিকে বলবে সাদা শার্ট-কালো প্যান্ট পরতে। আর ছেলেটি ভেবে রেখেছে, কখনো তার প্রিয় মানুষকে বলবে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, আর কপালের আকাশে ছোট্ট একটি লাল টিপ পরতে।
একদিন মেয়েটি পরল নীল–সাদা সালোয়ার-কামিজ, হাতায় জামদানির লেস। আর ছেলেটি পরল অফ হোয়াইট গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট আর ইন করা কালো শার্ট। হাতাগুলো কনুই পর্যন্ত গোটানো। মেয়েটি একদিন সীমান্ত স্কয়ার থেকে বেরিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসেছিল, হাতে কফির গ্লাস। আর ছেলেটি সেদিন আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল, হাতে চায়ের কাপ। মেয়েটির ভালো লাগে গ্রামীণ চেক, আর ছেলেটির নেভি ব্লু পোলো শার্ট। মেয়েটি যখন কাকডাকা ভোরে উঠে হালকা স্কিপিংয়ে ব্যস্ত, ছেলেটি তখন তায়কোয়ান্দতে ব্ল্যাক বেল্টের জন্য প্র্যাকটিসে ঘাম ঝরাচ্ছে। মেয়েটি যখন এনাটমির পাতা উল্টাচ্ছে, ছেলেটি তখন কোয়ান্টাম মেকানিকসের থিওরি পড়ছে।
মেয়েটি যখন ঘুমাতে যাওয়ার আগে পিট সিগারের ‘গুডনাইট আইরিন’ গানটি শোনে, ছেলেটি তখন নিরিবিলি হালকা ভলিউমে শোনে রুনা লায়লার গান। মেয়েটির পছন্দ বন জভি আর ছেলেটির পছন্দ সৈয়দ আবদুল হাদী। মেয়েটির পছন্দ কেট উইন্সলেট আর ছেলেটির মারদাঙ্গা ওয়েসলি স্নাইপস।
একদিন সীমান্ত স্কয়ারের চারতলার ডিভিডির দোকান থেকে মেয়েটি কিনল লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর রোমিও জুলিয়েট, ছেলেটি কিনল ডেনজেল ওয়াশিংটনের ম্যান অন ফায়ার। মেয়েটির পছন্দ আর্থার সি ক্লার্কের এ স্পেস ওডেসি, ছেলেটির পছন্দ মুহম্মদ জাফর ইকবালের ক্রোমিয়াম অরণ্য। মেয়েটির প্রিয় জেমস বন্ডের ডাই এনাদার ডে আর ছেলেটির প্রিয় মাসুদ রানার অগ্নিপুরুষ। একদিন মেয়েটি বসুন্ধরা সিটি থেকে ওয়েস্টার্ন মুভির পুরো সেট কিনে আনল, আর ছেলেটি নীলক্ষেত থেকে সেবা প্রকাশনীর একগাধা পুরোনো ওয়েস্টার্ন বই কিনে বাসায় ফিরল।
একদিন মেয়েটি দেখছিল গ্রেগরি পেকের ম্যাকানাস গোল্ড, ছেলেটি পাতা ওল্টাচ্ছিল কাজী মাহবুব হোসেনের ওয়েস্টার্ন বইয়ের।
মেয়েটি চুল সব সময় স্ট্রেট রাখত আর ছেলেটি সব সময় ব্যাক ব্রাশ করত। মেয়েটির চিকন ফিতার হাতঘড়িটি সব সময় থাকত তার পার্সে, ছেলেটির হাতে সব সময় শোভা পেত ঢলঢলে চেইনের বড় ডায়ালের কুচকুচে কালো সিকে ব্র্যান্ডের হাতঘড়ি।
আজ মেয়েটি পরেছে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, তার কপালে ছোট লাল টিপ। ছেলেটি পরেছে সাদা শার্ট কালো প্যান্ট। তারা পাশাপাশি রিকশায় বসা।
আজ থেকে ছেলেটি আর মেয়েটির সব ভালোলাগা এক বিন্দুতে মিলিত হেলা।
এস এম মাহবুব আলম
নরসিংদী সরকারি কলেজ, নরসিংদী।