Thank you for trying Sticky AMP!!

কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের মাঝখানে চলে গেছে প্রায় দুই বছর

সম্প্রতি ক্লাস শুরু করেছেন প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থীরা

শুরুতে ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা। এরপর যোগ হলো ‘অটো পাস’–এর টিপ্পনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়েছে বারবার। পরীক্ষা কোন নিয়মে হবে, কীভাবে হবে, আদৌ হবে কি না, এসব নিয়ে শঙ্কা তো ছিলই। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ওপর দিয়ে কম ঝড়ঝাপটা যায়নি।

২০২০ সালের শুরুতে যে শিক্ষার্থীরা ভাবছিলেন আর তো মাত্র কটা দিন, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে যাব, তাঁদের একটা বড় অংশ অবশেষে নিজেদের একটা ক্যাম্পাস পেয়েছেন। কদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অফলাইনে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি চলছে।

কলেজজীবন শেষ। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শুরু। এত দিন মনে হতো স্রেফ সিঁড়ির দুটো ধাপ। অথচ এই দুইয়ের মাঝখানে কেটে গেছে প্রায় দুই বছর। কঠিন সময়টা কীভাবে পার করেছেন, সেই অভিজ্ঞতা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নৌশিন হুমায়রা, ‘করোনার সময়টা আসলেই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। ঘরবন্দী এই সময়ে পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে উঠছিল। সিনেমা দেখে, নতুন নতুন খাবারের রেসিপি ট্রাই করে সময় চলে গেছে। এরপর যখন অটো পাস দিল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে ঠিকমতো পড়াশোনাও করতে পারিনি। একটা নির্দিষ্ট সময় ও লক্ষ্য সামনে থাকলে সব সময় কাজ করা সহজ হয়। কিন্তু গত দুই বছর আমাদের সামনে অনিশ্চয়তা ছাড়া কিছু ছিল না।’ অবশেষে নিজের একটা ‘ঠিকানা’ পেয়ে নৌশিন যে ভীষণ খুশি, সেটা তাঁর চওড়া হাসিই বলে দিল। তবে জানালেন, এ হাসিতে আনন্দের চেয়ে স্বস্তিই বেশি।

অবশেষে নিজের একটা ক্যাম্পাস!

একটা লম্বা বিরতির পর হলেও অবশেষে ক্লাসে বসতে পেরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয় সরকার। শিক্ষার্থী হলেও দীর্ঘদিন কোনো ‘পরিচয়’ ছিল না। নিজের নামের পাশে এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লিখতে পারছেন, জয়ের কাছে এ রোমাঞ্চ অন্য রকম। বললেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়াটা এত লম্বা সময় ধরে চলেছে যে সময়মতো ক্যাম্পাসে পা রাখতে পারিনি। এখন বলার মতো একটা পরিচয় পেয়ে আমি গর্বিত।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান অবশ্য করোনাকালের বন্দিজীবন থেকে বের হতে পেরেই বেশি খুশি। সাইফুর বলেন, ‘কত দিন কোনো সত্যিকার ক্লাসরুমে বসিনি! নিজের একটা ক্যাম্পাস পেয়ে মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেলাম।’

মারজিয়া তুরার অভিজ্ঞতা একটু অন্য রকম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এই শিক্ষার্থী। নবীনদের ক্লাস শুরুর তারিখ এখনো জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই অধীর অপেক্ষায় আছেন তুরা। বলছিলেন, ‘আমাদের বন্ধুরা যারা অন্য ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়েছে, তাদের অনেকের ইতিমধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ওরা যখন ফেসবুকে ক্যাম্পাসজীবনের বিভিন্ন ছবি পোস্ট করে, তখন মনে হয় এই তো আর কিছুদিন, তারপর এমন উপভোগ আমিও করতে পারব।’

ক্যাম্পাসে গিয়ে দেশের নানা প্রান্তের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন, এ কথা ভেবেও রোমাঞ্চিত তুরা। বললেন, ‘প্রথম বছর হয়তো গণরুমে থাকতে হবে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিশতে পারব। জানি না সামনে কী অপেক্ষা করছে।’

শুধু রোমাঞ্চ কিংবা আনন্দ নয়, মুদ্রার উল্টো দিকেই আছে সেশনজটের চোখ রাঙানি। করোনাকালের এই লম্বা বিরতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে আরও দীর্ঘ করে তুলেছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো সুস্পষ্ট কোনো পরিকল্পনার কথা জানায়নি। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ ছুটি কমিয়ে এনেছে। ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান।

মহামারির কারণে সৃষ্ট এসব সংকট মোকাবিলায় নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘করোনা সংকট কাটিয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা যখন প্রথমবার আমাদের ক্যাম্পাসে এল, তখন থেকেই আমরা নানাভাবে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। করোনার এ দীর্ঘ বিরতি যেন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জায়গায় খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রতিটি বিভাগকেই নির্দেশনা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। নবীন শিক্ষার্থীরা যেন সেশনজটে আটকে না থাকে, সে জন্য প্রতিটি বিভাগকে একাডেমিক ক্যালেন্ডার রিভিউ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’