Thank you for trying Sticky AMP!!

কেন পড়ব পরিবেশবিজ্ঞান

প্রাথমিক চিকিৎসার মতো পরিবেশবিষয়ক জ্ঞান থাকা সবার জন্য আবশ্যক। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে
ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। ‘স্বপ্ন নিয়ে’র এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ পরিবেশবিজ্ঞান সম্পর্কে বলেছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মোহাম্মদ আবদুল বাতেন

কী পড়ানো হয়?

আমরা এখানে পরিবেশকে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার চেষ্টা করি—পরিবেশবিজ্ঞান ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। পরিবেশবিজ্ঞানে আমরা পরিবেশগত সমস্যাগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করি। যেমন পরিবেশদূষণ কী কারণে হয়, আমাদের দ্বারা উৎপাদিত বর্জ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া কী, কেন এই বর্জ্য উৎপাদিত হয়, কী ধরনের উপাদান থাকে বর্জ্যের মধ্যে ইত্যাদি। আর পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় খোঁজা হয় এই সমস্যাগুলোর সমাধান। পরিবেশ যেহেতু একটি সর্বজনীন ব্যাপার, সব মানুষের এখানে অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পড়তে গিয়ে আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও জানতে হয়। বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এ জন্যই, বিশেষ করে আমাদের দেশে দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে পড়ানো হয়। এ ছাড়া আছে বন ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা। এখনকার সময়ের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আইইউবিতে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামে একটা সেন্টার আছে, যেখানে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে বিশেষায়িত গবেষণা করা হয়।

ভবিষ্যৎ কী?

পরিবেশবিদ্যা একজন ছাত্রের ভবিষ্যৎ জীবনে গভীরভাবে প্রভাব রাখে। পরিবেশের সঙ্গে মানবজীবন এবং জীববৈচিত্র্যের যে সম্পর্ক, তা বুঝতে পারলে একজন মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে। এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কেউ হতে পারেন সফল একজন উদ্যোক্তা। উদাহরণস্বরূপ আমাদের ছাত্র শাহরিয়ার সিজারের নাম না বললেই নয়। সিজার তার সংগঠন ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের (সিসিই) ভূমিকার জন্য পেয়েছে হুইটলি অ্যাওয়ার্ড, যা গ্রিন অস্কার নামে পরিচিত। সারা বিশ্ব এখন পরিবেশ বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠছে। পরিবেশবিজ্ঞানে পড়ালেখা করেই তো ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতের পৃথিবী সাজাতে বড় ভূমিকা রাখবে।

ক্যারিয়ার কোথায়?

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া যতই মূর্ত হচ্ছে, ততই সরকারি পর্যায় থেকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিষয়ে কাজ করতে আরও বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। টেকসই উন্নয়ন বিষয়টি জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে, সরকার বিভিন্ন নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে মূলধারায় আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ‘এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি কোম্পানিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ‘এনভায়রনমেন্ট অফিসার’। কাজের এই ক্ষেত্র আজ থেকে ১০ বছর আগেও কোনো প্রতিষ্ঠানে ছিল না। এখন পোশাক কারখানা, ওয়াশিং ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠান ব্যবসার সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক বিবেচনা করতে বাধ্য। এ ছাড়া প্রতিটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও, যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে, আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিচ্ছে তাদের সঙ্গে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আরও অনেক কাজের সুযোগ।

কারা পড়বে?

পরিবেশবিদ্যার প্রয়োজনীয়তা আছে সব জায়গায়। একসময় মনে করা হতো, শুধু এই বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরাই পরিবেশ নিয়ে পড়বে, কিন্তু এখন আমরা বলি—বিষয়টি সবার জন্য। প্রাথমিক চিকিৎসার মতো পরিবেশবিষয়ক জ্ঞান থাকা সবার জন্য আবশ্যক। যাদের এই বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা আছে, তারা তো পড়বেই, অন্য বিষয়ের ছাত্রছাত্রীদেরও যদি নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ থাকে, তাহলে এই বিষয়ে অন্তত দু–একটা কোর্স করা উচিত।