আজকের পুষ্টি কথা

কেন ভাতের বদলে আলু?

পৃথিবীর মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ভুট্টা, গম আর চালের পরই আলুর অবস্থান। বিশ্বের অনেক দেশেই রুটি বা ভাতের বদলে আলু খাওয়ার প্রচলন আছে। তবে আমাদের দেশে আলু এখনো পরিপূরক বা সহায়ক খাবার। ভাতের সঙ্গে আলুর ভর্তা বা তরকারিতে আলু না হলে চলেই না। এই মৌসুমে বাম্পার ফলন হওয়ায় বাজারে আলুর দামও অনেক কম। অনেক জায়গায় প্রতি কেজি আলুর বাজারদর ১০ থেকে ১২ টাকা। তাই প্রধান খাবার হিসেবে এই কয়েক মাস ভাতের বদলে আলু বেছে নিলে আপনার খরচ কমবে। তা ছাড়া আলু ভাতের চেয়ে পুষ্টিকর। শর্করার জোগান দেওয়ার পাশাপাশি আলু নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা মেটায়। পাশাপাশি খাদ্য আঁশ থাকায় আলু হজমে সহায়ক এবং রক্তে শর্করার হার ঠিক রাখে।

 কেন ভাতের বদলে আলু খাবেন, সে প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে দেখে নিন এর পুষ্টিগুণ। ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী আলুতে রয়েছে ৯৭ কিলোক্যালরি, ৭৪ দশমিক ৭ গ্রাম পানি, ২২ দশমিক ৬ গ্রাম শর্করা, ১ দশমিক ৬ গ্রাম আমিষ, শূন্য দশমিক ৬ গ্রাম স্নেহ, শূন্য দশমিক ৪ গ্রাম আঁশ, ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, শূন্য দশমিক ৭ মিলিগ্রাম লোহা, ১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি ও শূন্য দশমিক শূন্য ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১। এ ছাড়া আলুর খোসায় আছে ভিটামিন-এ, পটাশিয়াম, লোহা, ভিটামিন-সি ও খাদ্য আঁশ।

 ভিটামিন-সি থাকায় শর্করার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আলু শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কারণ আলুতে থাকা ভিটামিন-সি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া আলুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আমাইনো অ্যাসিড, ওমেগা-থ্রিসহ নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি ত্বকের জন্যও ভালো। পাশাপাশি হৃদ্‌রোগ মোকাবিলায় সহায়তা করে ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।

একনজরে আলুর উপকারিতাগুলো দেখে নেওয়া যাক—

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: আলু রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

হজমে সহায়ক: হজমের পক্ষে আলু খুব ভালো। কারণ এতে প্রচুর খাদ্য অাঁশ রয়েছে।

ত্বক ভালো রাখে: আলুর রস ত্বকে লাগালে বিভিন্ন দাগ দূর হয়। আলুতে ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, ফসফরাস ইত্যাদি রয়েছে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এ ছাড়া রোদে পোড়া ভাবও দূর করতে সহায়তা করে আলুর রস।

রোগ প্রতিরোধ করে: একটি মধ্যম আকৃতির (১৫০ গ্রাম) আলুর খোসায় প্রায় ২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি আছে। এর ফলে খোসাসহ আলু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

মানসিক চাপ কমায়: আলুতে ভিটামিন বি-৬ রয়েছে, যা মন ভালো রাখার জন্য কার্যকর দুটি উপাদান সেরেটোনিন ও ডোপামিন বাড়ায়। এর ফলে মানসিক চাপ কমে।

মস্তিষ্ক কর্মক্ষম রাখে: আলুতে গ্লুকোজ, অক্সিজেন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ও অন্যান্য ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা মস্তিষ্ক সচল ও কর্মক্ষম রাখে।

 সতর্কতা: অতিরিক্ত আলু খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাঁরা দিনে ৯০ গ্রাম পর্যন্ত আলু খেতে পারবেন। এর বেশি নয়।

 লেখক, প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল