কবিতা

অলংকরণ: সোহাগ পারভেজ
অলংকরণ: সোহাগ পারভেজ

ভিজতে চাই

আহাদ আদনান

ঝড়ের দিনগুলো রাজধানীর বুকে আমার সাহারা বাস

আজ বৃষ্টি কোটায় ভিজতে চাই।

এত উত্তাপ, অসহ্য লাভা স্রোত, আমি গলে গলে যাই,

এমনকি নক্ষত্রগুলো সুচ হয়ে বিষম রাতে হৃদয়টা

                                    ছিঁড়ে-ফুঁড়ে খায়,

আজ বৃষ্টি কোটায় বাঁচতে চাই।

কাদা জলে মাখামাখি, নর্দমার প্রলয় নাচন,

আছড়ে পড়ুক ঢেউ কালো পিচে,

ওলটপালট হয়ে যাক রাজপথ,

পথের কুকুর,

কুকুরের মনিব,

মনিবের যান কিংবা জান,

আজ বৃষ্টি কোটায় চলতে চাই।

একটা কাগুজে নৌকা হই—বৃষ্টি কোটায় ভাসতে চাই,

আদুল গালের টোল বরং—বৃষ্টি কোটায় হাসতে চাই,

কদমের বিচ্যুত রোঁয়া যদি—বৃষ্টি কোটায় উড়তে চাই,

মধ্যবিত্ত বদ্ধ কামড়ায়—বৃষ্টি কোটায় পুড়তে চাই,

রিকশার নিবিড় অস্বচ্ছ পলিথিন—বৃষ্টি কোটায়

                                    ঢাকতে চাই,

থমকে থাকা চৌরাস্তার জ্যাম—বৃষ্টি কোটায় থাকতে চাই,

এবং বৃষ্টি কোটাতেই থাকতে চাই,

আর অনন্তকাল ভিজতে চাই।

খোলা জল

শাহরিয়ার হোসেন

বৃষ্টিস্নাত দুটি মন পড়ে থাকে টিএসসির কোনে,

দমকা হাওয়ায় ওড়ে শাড়ির আঁচল

দোলা দেয় ক্ষণে ক্ষণে।

ভালোবাসার আগ্নিগিরি জ্বলতে থাকে দেহে

কেউ গান গায়

কেউ চেয়ে থাকে জলে,

হঠাৎ নামা বৃষ্টি বলে

ভালোবাসা কমে না কোনোমতে।

এই বরষায়

ফাহিমা নাজনীন

মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে পৃথিবী

আমার সাত রঙের আকাশ

কেউ আলতো করে ছুঁয়ে দিল আমার ভুবন

স্বপ্নের জানালা খুলে গেলে দেখি ওই দূর পাহাড়

পাহাড়ের গায়ে গায়ে মেঘের বসতি

কখন নামবে বৃষ্টি, কখন নামবে বৃষ্টি...

হঠাৎ দেখি বৃষ্টি, দুহাত ধরে বলছে আমায়

...চলো ভিজি আজ এই বরষায়।

গানের ভেলায়

সুকান্ত গুপ্ত

এখন জানলার শিকটাকে আপন করে বৃষ্টি আর দেখা হয় না। দেখা হয় না ভেজা শালিকের চঞ্চলতা। সোডিয়াম আলোটা বড় অসহ্য মনে হয়। শোনা হয় না দূর থেকে ভেসে আসা তোমার বর্ষা আবাহন।

একদিন তুমি বলেছিলে—

শোনো মেঘ, তোমার এই মেঘ বৃষ্টি খেলা আমার মোটেও ভালো লাগে না। আমি সত্যিই একদিন মেঘ হব। বৃষ্টি হয়ে ঝরব। সেদিন বুঝবে তুমি।

আমি সেদিন হেসেছিলাম। বলেছিলাম স্বপ্নের মেঘ হয়ে ঘুরব দুজন।

এই বৃষ্টিভেজা প্রিয় শহরকে পর করে এখন তুমি আর আসো না, ভাসাও না আমায় গানের ভেলায়। সত্যি শুধু বৃষ্টি ঝড়ে। মেঘ করে আর মেঘ করে।

মেঘে নেয়ে
আরাশ ইকরা
সৃষ্টি তোমার শুদ্ধ করো বানে,
যে পথ যাবে ভিজতে আবার প্রাণে,
কোথায় গেলে বৃষ্টি আবার প্লাবন তো নয়
অমৃততার স্পর্শে জাগে ভুবন জাগে নদী,
বর্ষা আসে কোথায়, প্রাণের জাগত যদি বোধি!
তবে সাঙ্গ করি সব ভরসা
ভিজতে পেতাম এই বরষা জলে,
কোথায় আছে সুখ বরষা জলদ পাহাড় গলে?
হঠাৎ সেদিন উদোম আকাশ দম ফেলেছে যেই,
ভিজতে থাকি শুধাই নিজেকেই
কেমন করে শুদ্ধ হব আজকে কিসের সুরে?
অভিমানের ক্ষান্ত হবে মেঘের জল নূপুরে?

স্বপ্নগাথা
আহমদ কবীর

ভেজা কাক

কাদামাখা মেঠোপথ,

ঘনঘোর বরষায়

টইটুম্বুর দিঘির জল, আর

দিগন্ত ছুঁয়ে আসা বৃষ্টি,

সে-তো কতকাল আগের কথা...

এখনো আকাশে মেঘ জমে

বৃষ্টিতে খাল হয় শহুরে গলি,

জানালার কাচ বেয়ে

ধোঁয়াশা চোখের পাতা,

তবে ছোঁয়া হয় না আর

বৃষ্টি মাখা কাদা।

সে-তো মহাকালের  স্বপ্নগাথা...

তোমার জন্য

রবিশঙ্কর মৈত্রী

বৃষ্টি হলে পাথরেও সৃষ্টি হয় বৃক্ষ লতা পাতা ফুল;

বৃক্ষ লতা পাতা হলে পাখির আবাসন হয়;

পাখির আবাসন হলে মানুষও গান গায়—

আল্লাহ মেঘ দে পানি দে।

বৃক্ষ যেখানে, বক্ষ জোড়া ভালোবাসা সেখানে;

ভালোবাসা যেখানে সেখানেই মেঘ নামে,

মেঘ নামলেই মানব পরম নরম হয়;

মানব বিশ্ব নরম হলে পৃথিবী শান্ত শীতল হয়।

এত বৃষ্টি ছিল

শাকিল উল্লাহ

কাকলির মোড় থেকে ভাবছিলাম একটি বেলি ফুলের মালা কিনব...

কিন্তু এত বৃষ্টি ছিল...

খুব করে চাইছিলাম বাসের জানালায় ঠান্ডা বাতাসের ঝাঁপটা যেন প্রাণটা জুড়ায়...

অথচ এত বৃষ্টি ছিল...

বিকেল চারটায় ইন্টারভিউ ছিল, বিশ টাকায় জুতা কালি করালাম...

অথচ এত বৃষ্টি ছিল...

আজকের দিনটা নিশ্চয়ই স্নিগ্ধ হবে

আগের দিনের সিক্ততা মুছবে

অথচ এত বৃষ্টি ছিল ...

ঈশ্বর ভাবছিলাম উদার হবেন চোখের রংহীন পানির মূল্যায়ন হবে

অথচ এত বৃষ্টি ছিল...

বৃষ্টিতে

মৃন্ময় আহসান

আজ আবার বহুদিন পর বৃষ্টিতে ভিজলাম,

ভিজতে চাইনি জানো তো!

ছাতা ছিল না সাথে, নিরুপায় হয়ে ভেজা।

‘কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!’ বলো?

বৃষ্টি মানেই তো স্মৃতির দহন;

সেই রেনউইকের বাঁধ, বৃষ্টিস্নাত তোমার কম্পমান শরীর

অথবা টিএসসি, চায়ের কাপে বৃষ্টিবন্দী দুজনে।

নগরে আজও বর্ষা আসে

কালো মেঘের ডানায় বৃষ্টি নামে অবশেষে

ভিজতে থাকে সময়, ভিজতে থাকে স্মৃতিরা

আর দিনান্তে, বৃষ্টি শেষে

একা একা ভেজা স্মৃতির ভার বইতে

বড় কষ্ট হয়, কষ্ট হয়...

শ্রাবণ আখ্যান

সবুজ মণ্ডল

ভূমিষ্ঠ হওয়া কদমের আখরে

মেঘকন্যা প্রেমপত্র পাঠায়,

চলন্তিকার বাউন্ডুলে রাজকুমারের কাছে।

অপেক্ষার গুপ্ত প্রহর কবিতা হয়ে ফুটে ওঠে

নকশিকাঁথার খোলা পাঁজরে!

শ্রাবণের কাজল কালো খোলা চুলে

মাদকতায় বুঁদ হয় আগুনে পোড়া মানচিত্র...তপ্ত দীর্ঘশ্বাসে শীতলতা নামে,

ঘামে ভেজা দুরন্ত জীবন

ক্লান্তি মোছে, সবুজ পাতার আড়ালে।

বৃষ্টি ও তুমি

আজহারুল ইসলাম 

সেদিনও অনেক বৃষ্টি ছিল

ঘোর লাগানো দৃষ্টি ছিল

ছিল ফেরার তাড়া,

আজও অনেক বৃষ্টি ঝরে

অলস আমি আটকে ঘরে

সবই আছে আগের মতো

একটি ‘তুমি’ ছাড়া।

পেছনে ঝুপঝাপ

সকাল রয়

আমাদের অতৃপ্ত কথা বলা,

বিচ্ছিন্ন পথচলা আর—

অদৃশ্য আস্ফালনে একে অপরকে দোষারোপ করা।

            তারপর এভাবেই ভুলগুলো শেষ হয়ে এলে,

            থেমে গেলে বৃষ্টির কোলাহল

ফের আমাদের ভালো লাগার আকাশে চলে আলোর খেলা।

আমরা সাজাতে বসি

আমাদের প্রতিদিনকার জীবন।

আমরা কখনো রোদ কখনো ঝুপঝাপ বৃষ্টি!

শ্রাবণ-শরীর

অরুণ কুমার বিশ্বাস

শেষ বিকেলে শাওনধারা ঝরছিল

বুকের ভেতর কেমন যেন করছিল

রিকশা-মামা হুডখানা বেশ তুলছিল

ত্যাঁদড় ছেলে আমার পাশেই দুলছিল

ওর সাথে মোর বড্ড ভীষণ দুষ্টুমি

বলল, মেয়ে, আমায় পেয়ে খুশি তুমি?

ময়ূর তখন মেঘের তালে নাচছিল

শ্রাবণ-শরীর প্রণয়-পীড়ায় কাঁপছিল।

রিকশা চলে ঝড়বাদলে, আজ ছুটি

চোখের তারায় মিষ্টি মধুর খুনসুটি!

দৃষ্টিসীমায় যা কিছু সব ঝাপসা বন

শাওন ধারায় কোথায় হারায় রিক্ত মন।

হাতখানা ওর বড্ড বেশি নড়ছিল

আমার বুকে কালবোশেখি ঝড় ছিল

আমরা দুজন রিকশা করে ঘুরছিলাম

কী জানি কী নেশায় মোরা চুর ছিলাম।