Thank you for trying Sticky AMP!!

খুব ঘৃণা হয় ওকে

মেহতাব খানম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমরা ভালোবেসে পরিবারের সম্মতিতে চার বছর আগে বিয়ে করেছি। দুজনই প্রকৌশলী। ওর নিজের একটা ফার্ম রয়েছে। এত দিন অনেক সুখী ছিলাম। কিন্তু এ বছর একজন মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয়, দেখা করা এবং ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটানো আমাকে আহত করেছে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ঘটনাগুলো ঘটেছে। আমার স্বামী সবকিছু স্বীকার করে নিয়ে কথা দিয়েছে, সে আর কখনো এমনটা করবে না। সে বলেছে, মেয়েটার সঙ্গে তার কোনো মানসিক সম্পর্ক ছিল না, তা শুধুই শারীরিক। মেয়েটার সঙ্গে তার আর যোগাযোগ নেই, কখনো আর কথা বলবেও না। বিষয়টার জন্য সে খুবই অনুতপ্ত। কিন্তু যা হয়েছে আমি সেটা কিছুতেই মানতে পারছি না। আমি ততক্ষণই ভালো থাকি, যতক্ষণ এটা ভুলে থাকি। বাস্তবতা হলো, আমি তাকে ছেড়ে কখনো থাকতে পারব না। আবার আমি তাকে ভালোবাসতেও পারছি না। খুব ঘৃণা হয় ওকে। ঘটনার কথা মনে হলেই, পাগলের মতো আচরণ করি। এভাবে চললে, যেকোনো দিন বড় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে। আমার কী করা উচিত?

 নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ

তোমার মনের ওপর দিয়ে যে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে গেছে তা সহজেই অনুমেয়। জীবনে চলতে গিয়ে আমরা যত ধরনের ট্রমা বা ভীতিকর ও পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাই, তার মধ্যে সবচেয়ে দুঃসহ হচ্ছে খুব কাছের, বিশ্বস্ত একটি মানুষের দ্বারা প্রতারণা বা প্রবঞ্চনার শিকার হওয়া। এতে করে অত্যন্ত অসহায়ত্বের সৃষ্টি হয়, মনে হয় আর কখনো এই মানুষটিকে বিশ্বাস করা বা তার সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব নয়। যে মানুষটি সবচেয়ে আস্থার জায়গায় ছিল, যে সমস্যাগুলো সমাধানের সহায়ক ছিল, হঠাৎ করে সে সমস্যার উৎস হয়ে মনের মধ্যে সব সময় ঘোরাফেরা করতে থাকে। একেবারে বিশ্বাসের শিকড়ে গিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত লাগে। মনে হতে থাকে, ভবিষ্যতে আর কখনো কোনো কাছের মানুষকে বিশ্বাস করা যাবে না। তার প্রতি ঘৃণা, অশ্রদ্ধা ও অনীহা সৃষ্টি হয়। তার কণ্ঠস্বর, শারীরিক উপস্থিতি সবকিছুই অরুচিকর মনে হতে থাকে। আবার যখন তাকে একেবারে ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবা যায় না, তখন মনঃকষ্ট আরও হাজার গুণ বেড়ে যায়।

বর্তমানে তুমি এই অবস্থাতেই রয়েছ। তোমরা দুজন সহপাঠী ছিলে কি না তা জানাওনি। এমনকি হয়েছে যে একই সঙ্গে প্রকৌশলী হওয়ার পর থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক সময় দিতে হয়েছে? দাম্পত্য ও কর্মজীবন একই সঙ্গে শুরু হওয়ার ফলে তোমরা কি পারস্পরিক সম্পর্কটি খুব একটা যত্ন করতে পারনি? অনেক সময় বিয়ের আগের প্রেমের সম্পর্কটিকে আমরা কিছুটা গুরুত্ব দিয়ে সেটির প্রতি বেশ মনোযোগী থাকি। বিয়ের পর দুজন সারা জীবনের জন্য পরস্পরের সঙ্গী হয়ে থাকার অঙ্গীকার হয়ে যায় বলে সম্পর্কটি কিছুটা অযত্নেœপড়ে যায়। তখন আমরা জীবনের অন্য দিকগুলো গোছাতে শুরু করি। তোমার স্বামী নিজের ফার্মটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পেছনে অতিরিক্ত সময় দিয়ে দেওয়ার ফলে সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা এসেছিল কি না তা ভেবে দেখতে পারো। হয়তো নিজেদের অজান্তেই পারস্পরিক নির্ভরশীলতার জায়গাটি কমে গিয়ে থাকতে পারে। যদিও ব্যাপারটি খুব অল্প দিনের ছিল এবং তোমার স্বামী সব স্বীকার করেছে, তারপরও তুমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছ। সে অনুতপ্ত হয়েছে ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তোমার কাছে যে অঙ্গীকার করেছে সেটি তোমাকে এই মুহূর্তে খুব একটা স্বস্তি দিতে পারছে না।

তুমি লিখেছ, এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে যা সত্যিই বেশ আশঙ্কার নির্দেশ করে। তুমি কি তাকে এখন অনেক প্রশ্ন করে যাচ্ছ? যেমন, তোমার মধ্যে কিসের ঘাটতি ছিল, মেয়েটির কাছে সে এমন কী পেয়েছে তা তোমার মধ্যে পায়নি ইত্যাদি? আমি অনুরোধ করব, এই প্রশ্নগুলোর পরিবর্তে তুমি তার কাছে জানতে চাইতে পার এই অভিজ্ঞতাটি তাকে নিজের নতুন কোনো সত্তার সন্ধান দিয়েছে কি না যার খোঁজ সে আগে জানত না? এই নতুন সত্তাটি সঙ্গে করেই সে আবার তোমার সঙ্গে আগের মতোই সংযুক্ত হতে পারবে কি না। তাকে ক্রমাগত প্রশ্নবাণে বিদ্ধ না করে বা নিজের কোনো ক্ষতি না করে দুজনে সম্ভব হলে আবার আগের সময়গুলোর মতো একসঙ্গে কাটাও। ওর মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দিতে অনেক ইচ্ছে হলেও চেষ্টা কর সেখান থেকে বিরত থাকতে। এই ঘটনার জন্য নিজেকে একদম কষ্ট না দিয়ে আত্মমর্যাদা বোধটি কীভাবে আরও বাড়ানো যায় তা চেষ্টা কর, কেমন?

তোমার স্বামীকেও বল যে সে যেন এখন তোমার প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ও ¯স্নেহপরায়ণ হয়। অনেক ধৈর্য নিয়ে সে যেন তোমার অস্থির মনের বহিঃপ্রকাশকে কিছুটা সহ্য করে নেয়। কারণ, তাকেই বেশি চেষ্টা করতে হবে তোমার বিশ্বাসটি পুনরুদ্ধার করতে। যে কারণেই হোক না কেন সে তোমার মনে অনেক বেশি আঘাত দিয়ে ফেলেছে। যদি বিবাহিত সম্পর্কটি ওর কাছে মূল্যবান হয়, তাহলে বেশ কিছুদিন ওকে তোমার এলোমেলো আচরণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। তবে তোমার মনের এই ক্ষতটি যদি দীর্ঘায়িত হয় এবং সম্পর্কটির মধ্যে টানাপোড়েন চলতেই থাকে, তাহলে তোমাদের কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে হবে। তাঁরা অনেক ধৈর্যের সঙ্গে ও সহমর্মী হয়ে কথাগুলো শুনবেন এবং সাইকো-থেরাপিউটিক কৌশল দ্বারা নিজেদের মনকে গুছিয়ে নিতে এবং সম্পর্কটিকে কিছুটা হলেও একটি স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবেন। এককভাবে নিজেদের কথা অকপটে বলার জন্য বসে কিছু সেশন করতে পার। আবার একসঙ্গে বসেও নিজেদের সম্পর্কটি আবার উন্নয়নের লক্ষ্যে থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করতে পার।