
কাজ গুছিয়ে করতে পারি না আমরা অনেকে। এ জন্য নিজের ইতিবাচক দিকগুলোর পরিচর্যার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার। তিনি বলেন, আমরা মূলত আমাদের চাপগুলোর মুখোমুখি হতে চাই না। নিজের তৈরি অজুহাত থেকে উত্তরণের জন্য নিজেকে একটা ছকের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। কাজ করতে হবে প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে। মনের অজান্তে তৈরি করা এসব ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আমরা কী কী করতে পারি, চলুন, জেনে নিই।
কোমল হই নিজের প্রতি
‘আমি’ সত্তাটাই সবার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে গুছিয়ে নিন। নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় না থেকে বরং নিজের ভালো গুণগুলোর জন্য নিজেকে সাধুবাদ জানান। কখনোই অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে যাবেন না, বরং প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন। কারণ, আপনি আপনার মতো বলেই অন্যদের চেয়ে আলাদা। তাই বলে নিজের মাঝে অহংবোধ আনা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, নিজেকে ভালো রাখতে গিয়ে আমরা অন্যের দুঃখের কারণ যেন না হই।
বেড়ে উঠি ধীরে ধীরে
আশপাশের অনেককে দেখেই আমরা অনুপ্রাণিত হই কিংবা করতে চাই নতুন কিছু। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনি নিজে কতটুকু কাজ করার ক্ষমতা রাখেন, তা ভেবে নিন। কোনো কিছু করতে নিজেকে চাপ দেবেন না। এটি আপনার কাজ করার ক্ষমতা বাড়ানোর জায়গায় কমিয়ে দিতে পারে। কেননা আপনার শরীর ও মন এর আগে এমন কাজের চাপের সম্মুখীন হয়নি। তাই বুঝে শুনে নতুন কাজে পা বাড়ান।
কাজের সময় কাজ
প্রায়ই কাজের সময় অহেতুক বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা। পড়ে থাকে মূল কাজ। এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে নিজের সামনে একটা লক্ষ্য তৈরি করুন। নিজেকে বলুন, কাজটা শেষ হলেই অন্য কিছু করব আজ। হতে পারে গান শোনা কিংবা সিনেমা দেখা বা কেনাকাটা করতে যাওয়া। তবে অবশ্যই ধরে নিতে হবে, প্রথমেই আপনি সফল হবেন না। যখন সময়ের মূল্য দিতে শিখে যাবেন, তখন নিজের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মতৃপ্তি বেড়ে যাবে।
না বলতে শিখুন
অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে যাবেন না কখনো। এটা যে শুধু অন্যের জন্য তা কিন্তু নয়, এটি হতে পারে নিজের জন্যও। অনেক সময়ই আমরা আমাদের লোভ সামলাতে পারি না। গুছিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নিজেকে ‘না’ বলা অনেক জরুরি। দেখা যায়, ডায়েটের মাঝে খুব মজার খাবার পেলে খেয়ে ফেলি, পড়া বাদ দিয়ে সিনেমা দেখে সময় পার করে দিই, হাতের কাজ ফেলে রাখি অন্য দিনের জন্য। এ সবই আমাদের নিজেদের তৈরি ফাঁদ। আমরা নিজেদের আশ্বস্ত করি যে কাজ হয়ে যাবে। ডায়েট করে ফেলব, পড়া একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই হবে, কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি যদি না করি, তবে তা কীভাবে হবে? তাই না বলুন নিজেকেও। কাজের একটা ছক তৈরি করুন। সারা দিনে নিজেকে কীভাবে গুছিয়ে নেবেন, তার সবকিছুই থাকুক সেই ছকে। কেননা ছকে জীবন বাঁধা না পড়লেও জীবন চলুক কিছুটা হিসাবে।
ফিরে যাই প্রকৃতির কাছে
গুছিয়ে চলার ক্ষেত্রে মানসিক স্থিরতা অত্যন্ত প্রয়োজন। বর্তমানে আমরা সবাই–ই কমবেশি বোকা বাক্সের ফাঁদে পা দিয়েছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হয় আমরা ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামের রঙিন পর্দায় চোখ রাখছি আর নয় টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে সময় পার করছি। এতে আমাদের মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য সময় কাটান প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও, না হলে কাছে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসুন। এটি হতে পারে আপনার এলাকার রাস্তা, ছাদ কিংবা আপনার বারান্দা। অথবা একাই বসতে পারেন কোনো লেকের পাড়ে, যদি একা বসতে অস্বস্তি লাগে, তবে রিকশায় করেই বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে পারেন কিংবা ঝালিয়ে নিতে পারেন ছেলেবেলার সাইকেলে করে ঘুরে বেড়ানোর দিনগুলো। নিজেকে বোঝার জন্য নিজের সঙ্গে সময় কাটানোও কিন্তু অনেক দরকার।