
চৈত্র মাসের কাঁচা আম কক্সবাজারের টেকনাফের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পৌষের শুরুতেই। কৃষিবিদেরা বলছেন জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে দুই-আড়াই মাস আগে উপজেলাপর কিছু গাছে আম ধরতে শুরু করেছে। দাম বেশি হলেও উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে ফলের দোকানে কাঁচা আম কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
টেকনাফের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম কুতুবী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত দু-এক বছর ধরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় আগাম ফল ধরছে। তিন মাস আগে টেকনাফের হাটবাজারে আগাম আম এসেছে। তবে এটা বারোমাসি আম নয়। মিয়ানমারের রাংগুয়াই জাতের আম।
১২ ডিসেম্বর টেকনাফ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া গ্রামের মো. হোসেন ঝুড়িতে করে কিছু কাঁচা আম নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি আঙিনায় ১৮টি গাছের মধ্যে ছয়টি গাছে আগাম মুকুল এসেছিল। এরপর গাছ থেকে বড় আকারের ১১২টি আম পেড়ে টেকনাফ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন িতনি। সব মিলিয়ে ২২ কেজি আম এনেছেন। প্রতি কেজি আম বিক্রি করতে চান ৬০০ টাকার বেশি।
মো. হোসেন বলেন, গত বছরও তিনি আগাম আম বিক্রি করেছেন। তবে এ বছর গত বছরের চেয়েও দুই মাস আগে আম বাজারের আনতে পেরেছেন। আমের জন্য ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকাও দিচ্ছেন।
বাসস্ট্যান্ডের আরেক ফল ব্যবসায়ী ফরিদুল আলম (৪০) বলেন, তিনি বাগান–মালিকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা দরে কাঁচা আম কিনেছেন। প্রতিটি আমের ওজন ২০০ গ্রাম। প্রতি কেজিতে বড় পাঁচটি আম ধরে। ক্রেতাদের কাছে এই আম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা বিক্রি করছেন তিনি। দাম বেশি হওয়ায় অনেকে দু-একটি ফল কিনছেন।’
ফল কিনতে বাসস্ট্যান্ডে আসা টেকনাফের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন আম দেখে অবাক। তিনি বলেন, ‘বাড়ির আশপাশের এখনো কোনো আমগাছে মুকুল দেখিনি। কিন্তু হঠাৎ এখানে এসে কাঁচা আম দেখে চমকে গেলাম। দাম বেশি হলেও দুই কেজি কিনেছি। কাঁচা আমের ভর্তা ও জুস আমার পরিবারের সবাই পছন্দ করে। কেবল নিজেই খাব না, দুই বোনের জন্যও আম পাঠাব। তাঁরা আম দেখে খুব খুশি হবে।’
অদিনে কীভাবে আম ধরল? এমন প্রশ্ন করলে শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া গ্রামের বাগানমালিক মো. হোসেন বলেন, ‘প্রায় সাত বছর আগে টেকনাফে কৃষি মেলা থেকে ৫০টি আমগাছের চারা কিনে বাগানে লাগাই। তখন থেকে উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রতিনিয়ত গাছের পরিচর্যা করেছি। প্রায় সাড়ে চার বছরের মধ্যে সব গাছে আমের ফলন হয়েছে। এখন কিছু গাছে মৌসুমের আগেই মুকুল আসে ও আম ধরে। বাকি গাছগুলোতে ভরা মৌসুমেই ফল ধরে।’
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত পৌষ মাসের প্রথম দিকে উপজেলার কিছু কিছু এলাকার আমগাছে মুকুল আসে। চৈত্র মাসে হাটবাজারে আসার কথা থাকলেও এখনই বাজারে কাঁচা আম উঠেছে। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। কেবল আম নয়, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবে গত দু-এক বছর ধরে টেকনাফের বিভিন্ন অঞ্চলে আগাম বিভিন্ন ধরনের ফল বাজারে দেখা যাচ্ছে।