
হাতে মাত্র কয়েকটা দিন। এরপর খুলে যাবে স্কুল। ঈদ উপলক্ষে লম্বা একটা ছুটি কাটিয়েছে শিশুরা। কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে, আবার কেউ কেউ মা-বাবার সঙ্গে দূরে কোথাও। প্রতিদিনের নিয়মগুলো এ সময় কিছুটা ঢিলে হয়েছে বৈকি। কিন্তু স্কুল খোলার আগে তো শিশুকে একটু একটু করে আবার আগের নিয়মে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর এই কাজ এক দিনে করা ঠিক নয়। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া প্রান্তকে এখন আধা ঘণ্টা আগেই ঘুম থেকে ওঠানো হচ্ছে। ছুটির শেষের দিকে এভাবে আধা ঘণ্টা করে ঘুম থেকে তোলার সময় এগিয়ে নিলে স্কুল খুললে অসুবিধা হবে না। এতে করে প্রান্তও বুঝতে পারছে না যে ওকে আগে ঘুম থেকে তোলা হচ্ছে। এমনটা জানা গেল প্রান্তর মা জান্নাতুল আরার কাছ থেকে।
অনেক অভিভাবক ছুটির সময় শিশুর ওপর লেখাপড়া নিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি করা উচিত নয়। ছুটির পুরোটা সময় একটু ছাড় দেওয়াই যেতে পারে। ছুটির শেষের দিকে শিশুকে পড়ালেখার প্রতি আকৃষ্ট করতে কৌশলী হতে হবে। ‘স্কুল কিন্তু খুলে যাবে, অমুক দিন থেকে একটু পড়ালেখা করতে হবে’ কিংবা ‘কাল থেকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে, তা না হলে স্কুল খুললে অসুবিধা হবে’ এভাবে তাকে বলা যেতে পারে। এমনকি ছুটিতে পড়ালেখার সংস্পর্শে থাকার জন্য গল্পের বই পড়তে দেওয়া যেতে পারে। পড়ার অভ্যাসটা নিয়মিত হবে এতে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক পারভীন বানু বলেন, শিশুর আনন্দে থাকার সময়ই তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন, কবে থেকে সে লেখাপড়া শুরু করবে। তাহলে ওর ওপর চাপ সৃষ্টি হবে না। তবে ছুটি হলেও বেশি অনিয়ম যেন না করে, সেটি আগে থেকে খেয়াল রাখতে হবে। সারা দিন খেলাধুলা করুক; কিন্তু খাওয়া, গোসল ও ঘুমের সময় যেন ঠিক থাকে।
বেশির ভাগ শিশু ছুটির পর স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী থাকে। তবে স্কুলের শিক্ষকদের কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে। ছুটির পর প্রথম ক্লাসে ছুটিতে কে কী করেছে, সেই গল্প করা যেতে পারে, পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা যেতে পারে।
সানবিমস স্কুলের নার্সারি ক্লাসের শিক্ষক নাজমা আলম বলেন, এখনকার শিশুরা স্কুলে এলে অনেক খুশি হয়। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। ছুটি শেষ হওয়ার আগে তাকে এটি বলা যেতে পারে যে কয়েক দিন পরেই তো তোমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। প্রস্তুতি নিতে থাকো। আর ছুটির পর শুরুর ক্লাসগুলোয় পুরোনো পড়া নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এতে শিশুরা চাপ বোধ করবে না। লম্বা ছুটির পর মানিয়ে নেওয়ার জন্য মা-বাবাকেই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। সন্তানের জন্য তাঁদের তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হবে, সকালের নাশতা ও রাতের খাবার সময়মতো খেতে হবে। শিশু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে না চাইলে তাকে বুঝিয়ে, গল্প শুনিয়ে ঘুমানোর কথা বলতে পারেন কিংবা গল্পের বই পড়ে শোনাতে পারেন।