জুম চাষ ও গাছ পাচারে হুমকিতে বন্য প্রাণী

লক্ষ্মীছড়ি বনের থলছড়া গ্রামে একটি মেছোবাঘ শিকার করে চামড়া শুকানো হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা
লক্ষ্মীছড়ি বনের থলছড়া গ্রামে একটি মেছোবাঘ শিকার করে চামড়া  শুকানো হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ও বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনে অবাধে গাছ কাটা ও জুম চাষের কারণে ছোট হয়ে আসছে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। পাশাপাশি বেড়েছে শিকারিদের উৎপাত। এর ফলে বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাজেক ইউনিয়নের মাচালং ও কাচালং নদী এবং বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের শিজক নদীর দুই পাড় জুড়ে গড়ে উঠেছে সংরক্ষিত বন। এই বনাঞ্চলে একসময় চিতাবাঘ, মেছোবাঘ, ভল্লুক, হরিণ, বন্য ছাগল, গয়াল ও হাতিসহ নানা ধরনের বন্য প্রাণী অবাধে বিচরণ করত।
রাঙামাটি বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলার দুই লাখ ৩৯ হাজার ২৯৬ একর এলাকাজুড়ে সংরক্ষিত বন রয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ একরের বেশি এলাকায় বন উজাড় হয়ে গেছে। অব্যাহতভাবে গাছ পাচার ও জুম চাষের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি শিকারিদের অত্যাচারে হুমকির মুখে পড়েছে বন্য প্রাণী।
রাঙামাটির উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. এস এম কাউসার বলেন, ‘বাঘাইছড়ির বনে চিতাবাঘ, মেছোবাঘ, ভল্লুক, হরিণ, বন্য ছাগল, গয়াল ইত্যাদি বন্য প্রাণী রয়েছে। তবে সংরক্ষণের অভাবে এসব প্রাণী এখন বিপন্ন। বন বিভাগের বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য আলাদা বিভাগ থাকলেও পার্বত্য এলাকায় তা নেই। সংরক্ষিত বনে বসতি গড়ে ওঠায় বাড়ছে জুম চাষ ও বন্য প্রাণী শিকার।’
সম্প্রতি বাঘাইছড়ির মাচালং, লক্ষ্মীছড়ি ও শিজক এলাকার বিভিন্ন বনে গিয়ে অবাধে গাছ কাটা ও জুম চাষের চিত্র চোখে পড়েছে। বনভূমির জমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশির ভাগই অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু। সংরক্ষিত বনে তাঁরা জুম চাষ করছেন। খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য শিকার করছেন বন্য প্রাণী।
লক্ষ্মীছড়ি সংরক্ষিত বনের বাসিন্দা রিজাভ মোহন চাকমা বনের কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, বনে বসবাসকারী লোকজন খাদ্যের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে বন্য প্রাণী শিকার করে। এ ছাড়া পাচারকারীরা সেগুন, চাম্পা, চাপালিশ, গর্জনসহ নানা জাতের গাছ লক্ষ্মীছড়ি ও দীঘিনালার সড়ক ও নদীপথে পাচার করছে।
বাংলাদেশ প্রাণীবিজ্ঞান সমিতির সদস্য ও বাঘাইছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি মো. আবুল ফজল বলেন, অব্যাহতভাবে বন উজাড় হওয়ায় সংরক্ষিত বনে বন্য প্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। একসময় কাচালং ও শিজক নদী পাড়ে দল বেঁধে শত শত হরিণ বিচরণ করত। এখন তা অতীত হয়েছে গেছে। বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিক উল্লাহ বলেন, বন্য প্রাণী শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও লোকবলের অভাবে দুর্গম এলাকায় অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয় না।
বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ রোনাল্ড হালদার সম্প্রতি লক্ষ্মীছড়ির সংরক্ষিত বন পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীছড়ির বনে গিয়ে চিতাবাঘের পায়ের ছাপ দেখেছি। ওই বনে হাতি, ভল্লুক, হরিণসহ নানা ধরনের প্রাণী আছে বলে এলাকাবাসীর মুখে শুনেছি। এলাকাবাসী তাঁদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য বন্য প্রাণী শিকার করেন। এটা বন্ধ করার জন্য তাঁদের মধ্যে প্রচারণা চালানো উচিত।’