বিয়ে উৎসব

ঝলমলে তারকাসন্ধ্যা

.

৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা। মঞ্চ তৈরি, আলোকসজ্জা ঝলমল—শুরু হয়ে গেল ব্যান্ড পার্টির বাজনা। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্য থেকেই বাদ্য বাজিয়ে এলেন তাঁরা ‘মালকা বানুর দেশে রে...’ গানের সুরে। অনুষ্ঠানস্থল ততক্ষণে জমজমাট। খালি মঞ্চও ভরে গিয়েছে। সেখানে শুরু হলো বিয়ের আরেক গান ‘সোহাগ চাঁদ বদনী...’ আর এরই তালে নাচ পরিবেশন করলেন নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন ও তাঁর দল ভাবনা।
নাচ শেষ হতেই বর এসে পড়েছেন। পুরোপুরি বিয়েবাড়ি যেন। কিন্তু কনে কোথায়? জানালেন খোদ বরই। কনে গেছেন পারলারে, সাজতে। তাঁর এই দেরিতে কোথায় বর একটু অনুযোগ করবেন, ঠিক তখনই হাজির কনে। দর্শকেরা হাততালিকে বরণ করে নিলেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তাহসান ও মিথিলাকে। শুরু হয়ে গেল পন্ডস-নকশা বিয়ে উৎসব।
এবারের উৎসবের মূল ভাবনা ‘বিয়ের বাজার দেশেই’। জমকালো দেশি শাড়ি আর শেরওয়ানিতে সেজে তাহসান-মিথিলা সে কথা মনে করিয়ে দিলেন আবার।
প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন মঞ্চে এসে এ আয়োজন নিয়ে জানালেন। ডেকে নিলেন সাবেক সাংসদ ও চিত্রনায়িকা কবরীকে। তিনি জানালেন উৎসব উপলক্ষে মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী শাড়ি পরে এসেছেন।

আরিফিন শুভ ও মেহজাবীন। বন্ধু সৌমিন আফরীনের নকশা করা পোশাক পরেছেন মেহজাবীন

তারপরই মঞ্চে ডাকা হলো আরও দুজনকে, প্রথম আলোর নকশার সঙ্গে যাঁদের সহযোগিতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান ও ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান। এ অনুষ্ঠানে মডেলদের রূপসজ্জার দায়িত্ব ছিল কানিজ আলমাস খান ও পারসোনার। ৪২ জন মডেলকে সাজিয়ে-গুছিয়ে সময়মতো তৈরি করে নিজেও তিনি এসেছেন পরিপাটি সাজে। মাহিন খান ধন্যবাদ জানালেন এমন আয়োজনের জন্য, দেশি ফ্যাশন ডিজাইনারদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হবে এমন আয়োজন বলে জানালেন তিনি।
সম্প্রতি বিয়ে করেছেন অভিনয়শিল্পী বিন্দু। কেমন লাগছে, প্রশ্নের জবাবটা আশানুরূপই হলো। ‘বিয়ে করে তো সবার ভালোই লাগে। আমারও লাগছে।’ হেসে বললেন তিনি।
মঞ্চ খালি হতেই বেজে উঠল বিয়ের বাজনা, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে...’ কনে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানাচ্ছেন বর। সেই সঙ্গে মঞ্চে এসে পড়লেন পানচিনির নানা সাজে একঝাঁক মডেল। কনের হাতে আংটি পরিয়ে শুভ সূচনা হলো বিয়ের আয়োজনের। পুরো ফ্যাশন শোর কোরিওগ্রাফি করেছেন আজরা মাহমুদ। সংগীতায়োজনে ছিলেন ডিজে রাহাত।
এরপর এলেন বিয়ের সাজে বর-কনেরা। কেউ ঐতিহ্যবাহী সাজে, কেউ খানিকটা ফিউশন ঢঙে। ছিল হিন্দু, খ্রিষ্টান আর আদিবাসী কর-কনেরাও।
এরপর বউভাতের সাজের পালা। এই সাজে বর-কনেরা একটু নিরীক্ষাধর্মী।
তবে এখানেই শেষ নয়, চমক দিলেন এ সময়ের খ্যাতনামা তারকারা। মঞ্চে হেঁটে এলেন ফেরদৌস-অপু বিশ্বাস, আরিফিন শুভ-মেহজাবীন ও হৃদয় খান-সুজানা জুটি। পরনে ঝলমলে পোশাক। সেদিন আবার ছিল ফেরদৌসের দশম বিয়েবার্ষিকী। তুমুল হাততালির শুভেচ্ছা পেলেন তিনি। মেহজাবীন আর শুভ মজা করে বলে ফেললেন, ‘আগামী মাসেই কিন্তু আমাদের বিয়ে।’ দর্শকদের অবাক ভাব দেখে ভুলটা ভাঙিয়ে দিলেন অবশ্য। নাহ্, শুধুই বন্ধু তাঁরা। সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে হৃদয় খান ও সুজানার। এখানে এসে মনে হচ্ছে যেন আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানই হচ্ছে। 
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে ধন্যবাদ জানালেন অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে। এরপর বক্তব্য দিলেন ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড বিল্ডিং পরিচালক জাভেদ আক্তার।
বিয়েবাড়ির মঞ্চে গানবাজনা তো হবেই। চিরকুট ব্যান্ড এল নতুন বিয়ের গান নিয়ে। এই উৎসবের জন্যই চিরকুট তৈরি করেছে এই গান। ‘পান পাতায় পরান মেখে/প্রেমেতে বান্ধিল/অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে থাকিল’। এরপর ‘কানামাছি’ ও ‘পিপীলিকা’ গানও গাইলেন তাঁরা।
আয়োজনের শেষ অংশটাও একদম বিয়েবাড়ির ঢঙেই হলো। পোলাও-মাংস-ফিরনির শাহি ভোজে আপ্যায়নটা হলো ঠিক বিয়েবাড়ির মতোই।