ফেসবুক কর্নার

নুডলসের মতো প্রিয়!

.

নিজামুল হক সাহেবের স্ত্রী গত হয়েছেন বছর তিনেক আগে। চার মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। তাদের সবার নামই ‘র’ দিয়ে। রেনু, রিনা, রুনু, রানি। এরা প্রত্যেকেই তাদের মায়ের মতো হয়েছে, অসম্ভব বুদ্ধিমতী। তাঁর মতো গাধা টাইপের না।
একদিন হঠাৎ করে নিজামুল হক সাহেবের মাথায় এক অদ্ভুত চিন্তা খেলে গেল। মেয়েরা কি তাঁকে সত্যিই ভালোবাসে? বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, মনে মনে ভাবলেন তিনি। যেই ভাবা সেই কাজ। ফেসবুক লগইন করে একটা স্ট্যাটাস লিখলেন, ‘মা-মণিরা, তোমরা আমাকে কে কতটুকু ভালোবাসো?’ স্ট্যাটাসে চার মেয়েকে ট্যাগও করে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে।
ফেসবুকে সেলিব্রিটি টাইপের লেখক নিজামুল হক সাহেব। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তাঁর স্ট্যাটাসটিতে প্রায় ৭০০ লাইক পড়ল, ৮৫টা কমেন্ট। কমেন্টগুলো অধিকাংশ সময়ই পড়েন না তিনি। লোকজনের গাধামি দেখলে মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যায়। তবে আজ বেশ আগ্রহ নিয়েই কমেন্টগুলো পড়লেন। মেয়েরা কে কী লিখেছে, জানা দরকার।
প্রথম কমেন্টটা দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তাঁর। ‘লাইকার মামা রিটার্নস’ নামের কেউ একজন লিখেছে, ‘পড়ে না চোখের পলক, অ্যাড মি আই এম বলক!’
দ্বিতীয় কমেন্ট যে করেছে তার নামটাও অদ্ভুত, ‘ইমোশনাল শয়তান’! তার কমেন্টটা এ রকম, ‘পরিচালকের সঙ্গে এ কী করলেন উঠতি নায়িকা পরীবিবি (ভিডিওসহ)! ভিডিওটি দেখতে নিচের লিংকে যান।’
‘বাঁচব না আমি তুকে ছারা’ নামের একটা আইডি তিন নম্বর কমেন্ট করেছে, ‘আমাকে কেউ বালোবাসে না। আমি খুব একা, আমি একটা মনের মতো বনদু চাই।’
নিজামুল হক সাহেব হাসবেন না কাঁদবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। লোকজনের নির্বুদ্ধিতায় যারপরনাই হতাশ তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে শেষ পর্যন্ত মেয়েদের কমেন্টগুলো উদ্ধার করতে পারলেন তিনি। মেজো মেয়ে রিনা লিখেছে, ‘বাবা, আমি তোমাকে চিলি চিকেন আর ফ্রাইড রাইসের মতো ভালোবাসি!’ নিজামুল হক সাহেব খুব খুশি হলেন। বেশ দামি খাবারের সঙ্গে তুলনা! বাহ্ বাহ্! খাবারগুলো তাঁর নিজেরও খুব পছন্দের। সেজো মেয়ে রুনু কমেন্ট করেছে, ‘আমার প্রিয় বাবাটাকে আমি ইতালিয়ান পিত্জার মতো ভালোবাসি!’ ছোট মেয়ে রানি লিখেছে, ‘ডাবল বিফ বার্গার উইথ এক্সট্রা চিজের মতো ভালোবাসি তোমাকে, বাবা!’
নিজামুল হক সাহেবের আনন্দ আর ধরে না। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর প্রতি মেয়েদের ভালোবাসা বেশ দামি। সবার শেষে বড় মেয়ে রেনুর কমেন্ট, ‘বাবা, আমি তোমাকে নুডলসের মতো ভালোবাসি।’

হঠাৎ করেই নিজামুল সাহেবের মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। প্রচণ্ড রাগ হলো রেনুর ওপর। নুডলস কোনো খাওয়ার জিনিস? তার সঙ্গে আবার তুলনা! দেখতে পুরোই কেঁচোর মতো আর দামেও সস্তা! নিজামুল সাহেব রেগেমেগে বড় মেয়ে রেনুকে ফেসবুকে ব্লক করে দিলেন। ঘোষণা করলেন, তিনি মারা যাওয়ার পর রেনু সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। রেনুর ল্যাপটপ আর স্মার্টফোনও কেড়ে নিলেন তিনি। রেনুর দিনগুলো খুব কষ্টে কাটতে লাগল। এমনিভাবে পেরিয়ে গেল পুরো চারটি মাস!
তারপর একদিন নিজামুল হক সাহেব সুন্দরবনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখলেন, ‘জঙ্গল বাঁচাও!’ কিন্তু সামান্য অসতর্কতায় বানান ভুলের কারণে সেটা হয়ে গেল, ‘জঙ্গি বাঁচাও!’ সারাক্ষণ জঙ্গি নিয়ে চিন্তা করতে করতে কখন যে জঙ্গলের জায়গায় জঙ্গি লিখেছেন, সেটা খেয়ালই করেননি!
তবে ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে! জঙ্গিবাদ প্রচারণার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করল। পত্রিকার প্রথম পাতায় নিজামুল সাহেবের ছবি ছাপা হলো হাতকড়া পরা অবস্থায়! এমনিতে হার্টের রোগী, তার ওপর রিমান্ডে প্রচণ্ড মার খেয়ে তাঁর অবস্থা কেরোসিন। তবে শেষমেশ অনেক কায়দা-কসরত করে ছাড়াও পেলেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়েছেন, পকেটে বাসভাড়াও নেই। দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে হেঁটে হেঁটে কারাগার থেকে বাসায় ফিরলেন পাক্কা পাঁচ মাইল হাঁটার পর! ক্লান্ত শরীর, মনের অবস্থা ভীষণ খারাপ, তার ওপর পেটে প্রচণ্ড খিদে। এদিকে বাসায় ঢুকে দেখেন, খাওয়ার মতো কিছু নেই! বাবার অবর্তমানে মেয়েরা শয্যাশায়ী। নাওয়া-খাওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না তাদের। তাই বাসায় রান্নাবান্না বন্ধ। খিদের জ্বালায় নিজামুল হক সাহেবের প্রাণ তখন যায় যায়! মেয়েদের ডেকে বললেন, ‘মা-মণিরা, আমাকে দুই মিনিটের মধ্যে কিছু খেতে দাও! নাহলে আমি মারা যাব!’
মেয়েরা টেনশনে পড়ে গেল। দুই মিনিটের মধ্যে তো পিত্জা বা বার্গার বানানো সম্ভব নয়। এমন সময় বড় মেয়ে রেনু দুই মিনিটের মধ্যে ইনস্ট্যান্ট চিকেন নুডলস রান্না করে নিয়ে এল! তারপর বাকিটা ইতিহাস।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিজামুল হক সাহেব এখন বড় মেয়ে রেনুকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।