পাখাপল্লির নিপুণ কারিগর

পাখা তৈরি করে সংসার চালান হাতপাখার কারিগর আবুল কালাম। পাখার নিপুণ শৈলীর জন্য পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের স্বীকৃতি। সরকারি উদ্যোগে দুস্থ নারীদেরও পাখা বানানো শেখান। সাতকানিয়ার নগরপাড়া এলাকা থেকে ছবিটি তোলা l প্রথম আলো
পাখা তৈরি করে সংসার চালান হাতপাখার কারিগর আবুল কালাম। পাখার নিপুণ শৈলীর জন্য পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের স্বীকৃতি। সরকারি উদ্যোগে দুস্থ নারীদেরও পাখা বানানো শেখান। সাতকানিয়ার নগরপাড়া এলাকা থেকে ছবিটি তোলা l প্রথম আলো

‘হাতপাখা প্রাণের সখা, গরমকালে দিয়ো দেখা’ গ্রামবাংলার পরিচিত প্রবচন এটি। চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত গরমের সময় ঘরের অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে দাঁড়ায় হাতপাখা। তবে সেই পাখা যদি আবুল কালামের তৈরি হয়, শরীর জুড়ানোর পাশাপাশি এর শৈলী দেখে মনও ভরবে।
পাখাপল্লি হিসেবে খ্যাত চন্দনাইশ উপজেলা সদরের জিহস ফকিরপাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম হাতপাখা তৈরি করে পেয়েছেন জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের কামরুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও আড়ংয়ের মাধ্যমে তাঁর তৈরি হাতপাখা দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুস্থ নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
সম্প্রতি উপজেলার সাতবাড়িয়া নগরপাড়া এলাকায় অবস্থিত দুস্থ নারীদের হাতপাখা তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্রে বসে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। আবুল কালাম বলেন, শৈশব থেকে মা–বাবার সঙ্গে হাতপাখা তৈরি করছেন। শুরুটা হয়েছিল তালপাতা দিয়ে। তবে এখন বেত, সুতার পাখা, কাপড়ের ওপর নকশা করেও হাতপাখা তৈরি করছেন। বর্তমানে তিনি ছয় আকৃতির ২০-২৫ রকমের হাতপাখা তৈরি করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তালপাখা, নকশিপাখা ও স্টার পাখা। উপহারসামগ্রী থেকে শুরু করে ঘর সাজানো, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অন্দরসজ্জা এমনকি বিয়ের দাওয়াতপত্রেও আবুল কালামের তালপাতার হাতপাখা ব্যবহার করেন অনেকে। প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টাকার হাতপাখা বিক্রি করেন তিনি। চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বেশি হাতপাখা বিক্রি হয়।
আবুল কালাম বলেন, তিনি মূলত বেতের তৈরি বিভিন্ন রকমের হাতপাখা তৈরি করেন। তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগমও কাপড়ের ওপর নকশা করে সুতা দিয়ে হাতপাখা তৈরি করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আর্থিক দৈন্যর কারণে শুধু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পেরেছেন। আরও পড়াশোনা করলে কারুশিল্পী হিসেবে সমাজে আরও ভালো অবস্থান হতো তাঁর। ব্যবসা বাড়ানোর মতো প্রয়োজনীয় ঋণও পেতেন তিনি।
আবুল কালামের কাছে পাখা তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এলাকার ১০ জন দুস্থ নারী। তাঁদের একজন গৃহবধূ সামিনা খাতুন জানান, পরিবারের একটু আয় বাড়াতেই তিনি হাতপাখা তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ঢাকার সোনারগাঁ জাদুঘরের ডিসপ্লে কর্মকর্তা আজাদ সরকার বলেন, কারুশিল্পী আবুল কালামের হাতপাখা খুবই মানসম্মত ও সুন্দর। প্রতিবছর মাঘ মাসে লোকজ উৎসবে তিনি সোনারগাঁ জাদুঘরে হাতপাখা বিক্রি করেন। এ জন্য সরকার তাঁকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করে। পাশাপাশি চন্দনাইশে তাঁর মাধ্যমে দুস্থ মহিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সনজিদা শরমিন বলেন, কারুশিল্পী আবুল কালামকে উপজেলা প্রশাসন থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ঐতিহ্য রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।