পাগলি মা ও বিহঙ্গ পরিবহন

অলংকরণ:মাসুক হেলাল
অলংকরণ:মাসুক হেলাল

বিহঙ্গতে চড়ে মিরপুর থেকে হলে ফিরছি। বিহঙ্গ মানে বিহঙ্গ বাস। আমার একটা বড় সমস্যা হলো, বাসে চড়লেই ঘুম পায়। সেটা দূরপাল্লার বাস হোক কিংবা মুড়ির টিন মার্কা ঢাকার লোকাল বাস—ঘুম আমার আসবেই। ঘুম মানে ঘুম, একেবারে মরার মতো ঘুম। দুয়ারীপাড়া থেকে গাড়িতে চড়েই তলিয়ে গেছি গভীর ঘুমে।

হঠাৎ বিকট চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল। কে যেন বিশ্রী ভাষায় কাকে গালাগালি করছে। চোখ কচলে দেখার চেষ্টা করলাম কে কাকে গালি দিচ্ছে। এক পাগলি মিরপুর ১ থেকে গাড়িতে উঠেছে। উঠে কোনো পূর্ব ইঙ্গিত না দিয়েই শুরু করেছে গালাগালি। প্রথমে উদ্দেশ্যহীন কাউকে দিয়ে শুরু করলেও এখন একেক সিটের পাশে গিয়ে একেক জনের মুখের দিকে তাকিয়ে গালি দিচ্ছে। গাড়ির হেলপারসহ যাত্রী কয়েকজন মিলে অনেক টানাটানি, অনেক ধমকা-ধমকি করেও পাগলিকে গাড়ি থেকে নামাতে ব্যর্থ হয়ে নীরবে গালি শুনে যাচ্ছে।

আমি চোখ দুটো আরেকটু ভালো করে কচলে, দু-তিনবার হাই তুলে, গলাখাঁকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে পাগলিকে উদ্দেশ করে বললাম, ‘এই যে মা শুনুন, এখানে এসে বসে যত খুশি গালি দিন।’ পাগলিটা গালি দিতে দিতেই আমার পাশের ফাঁকা সিটটায় এসে বসলেন। আমি আস্তে করে বললাম, ‘আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো কিছু খাওয়া হয়নি। না খেয়ে এত জোরে গালাগালি করলে তো আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন। তখন আপনাকে কে দেখবে?’ গালি না দিয়ে বিড়বিড় করে বললেন, ‘খাওনের টেকা নাই। কেউ খাওন দেয় না।’ আমি ১০০ টাকার একটা নোট বের করে ওনার হাতে দিয়ে বললাম, ‘কিছু খেয়ে নিয়েন। আপনার গালিগুলো আমাকে শেখাবেন?’ পাগলির মুখ থেকে আর কোনো কথা বের হলো না। হাত থেকে টাকাটা নিয়ে চুপচাপ বাসের গেটে গিয়ে বসে পড়লেন। আমি শূন্য দৃষ্টি নিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে অনুভব করছি, কয়েক জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ধানমন্ডি ২৭ চলে এসেছে বিহঙ্গ। বিহঙ্গ মানে বিহঙ্গ বাস। নেমে গেল চুপ হয়ে যাওয়া পাগলি মা আমার। যাওয়ার সময় শুধু চেয়ে দেখলেন, জানালার দিকে মুখ করে শূন্যে তাকিয়ে থাকা আমার দিকে।

আল আমিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়