পোশাকে একুশ

বড়দের পাশাপাশি শিশুদের পোশাকেও আছে একুশের বিশেষ সাজ। ছবি: আড়ং।
বড়দের পাশাপাশি শিশুদের পোশাকেও আছে একুশের বিশেষ সাজ। ছবি: আড়ং।

ফাল্গুন যেমন তারুণ্যের উত্সব, তেমনি তা যেন প্রতিবাদের-প্রতিরোধেরও শপথ। এই ফাল্গুনেই মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। সেই অমর একুশের চেতনা আমাদের সংস্কৃতিতে এতটাই গভীর যে, এই দিনে শুধু মায়ের মুখের ভাষাতেই নয়, আমরা যেন আপাদমস্তক নিজেকে সাজাতে চাই মাতৃভূমির রঙে-রূপে। তাই একুশের দিনে, এই ফাল্গুনে, পোশাকেও থাকে একুশ।
শোক, শ্রদ্ধা ও গৌরবের এ দিনটি পালনে নানা আয়োজনের সঙ্গে একুশের দৃপ্ত চেতনার স্পর্শ পোশাকে এসেছে বহু বছর ধরেই। বিভিন্ন পোশাকের দোকান ও বুটিকগুলো একুশকে প্রতিপাদ্য করে তৈরি করছে নতুন নতুন ডিজাইনের সব পোশাক। এসব পোশাকে ব্যবহূত রং, কাপড়, ডিজাইন—সবকিছুতেই থাকে ভাষা আন্দোলনের চির অমলিন চেতনা।

একুশের প্রভাতফেরিতে তরুণীদের প্রথম পছন্দ বরাবরই শাড়ি। ছবি: আড়ং।


রং ও কাপড়
একুশের চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে পোশাকে সাদা-কালো রঙের প্রাধান্য থাকলেও এখন আর তা এই দুটি রঙের মধ্যে আটকে নেই। একুশ এখন সর্বজনীন। তাই রঙের ব্যবহারও সর্বজনীন। সাদা, কালো, লাল, সবুজ, হলুদ, নীল সব রঙেই সাজছে একুশের পোশাক। কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতির প্রাধান্য থাকলেও তাঁত, মসলিন, সিল্ক প্রভৃতির ব্যবহারও বাড়ছে।
নকশা ও পোশাকের ধরন
এ বছর একুশের পোশাকের নকশায় বর্ণমালা, ভাষা ও ভাষাশহীদদের পাশাপাশি দেশজ চেতনা ও ঐতিহ্যের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। পোশাকের মধ্যে নকশিকাঁথা ফোঁড়, ব্লক, স্প্রে-ব্লক, অ্যাপলিক, ক্যাটওয়াক, স্ক্রিন, হ্যান্ডপেইন্ট, এমব্রয়ডারির কাজ চোখে পড়ার মতো।
পোশাক হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে ছেলেদের নানা রঙের টি-শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, চাদর এবং মেয়েদের ফতুয়া, টপস, সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি। শিশুদের জন্যও রয়েছে নানা আয়োজন। এসব পোশাকের জমিনে নানা রঙে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলা ভাষা ও আন্দোলনের ইতিহাস।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন
একুশের ভাবনার সঙ্গে মিল রেখে পোশাকে বর্ণমালার ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয়। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে একুশের গান, কবিতা, স্লোগান ও বাংলা ভাষায় রচিত বিভিন্ন পঙিক্তমালা। যেখানে ফুটে উঠেছে বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা গৌরবগাথা। এ ছাড়া শহীদ মিনার, মানচিত্র, পতাকাসহ একুশের বিভিন্ন চিত্রের নান্দনিক প্রকাশ ঘটেছে এবারের পোশাকে।
পোশাকের পসরা

শিশু-কিশোর ও তরুণদের পাশাপাশি বয়স্করাও মাতৃভাষা দিবসকে উদযাপন করবেন। তাই সবার জন্য জানিয়ে দিচ্ছি ফ্যাশন হাউসগুলোর ভাষা দিবসের প্রস্তুতি।

কে-ক্র্যাফট: ভাষা দিবস উপলক্ষে মেয়েদের ফতুয়া, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ছেলেদের ফতুয়া, পাঞ্জাবির পসরা সাজিয়েছে কে-ক্র্যাফট।

অঞ্জন’স: পোশাকে অক্ষর চিত্র বা ছাপচিত্র দিয়ে বৈচিত্র্যময় ডিজাইন করেছে অঞ্জন’স। লাল-সাদা-কালো সুতির সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ শিশু-কিশোরদের জন্য পোশাক এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।

রঙ: রঙের শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও বিশেষ ডিজাইনের টি-শার্ট ছাড়াও স্কার্ট-টপস, ওড়না, ব্লাউজ পিস, শাল, মগ ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয়েছে একুশকে। পোশাকে শহীদ মিনার, বর্ণমালা, ধারাপাত সংখ্যা, একুশের গান ও কবিতা তুলে ধরা হয়েছে। কালো রঙের পাশাপাশি সবুজ ও লাল রং ব্যবহার করা হয়েছে।

আড়ং: লাল, কালো, সাদা রঙের সঙ্গে আড়ংয়ের পোশাকে আরও আছে ধূসর, সবুজ, নীল, কমলা ইত্যাদি রঙের ব্যবহার। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, শিশুদের পোশাক, ছেলেদের ফতুয়া ও পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে এখানে।

এ ছাড়া শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের বুটিকগুলোতে একুশকে ঘিরে নানা ধরনের পোশাক ডিজাইন করা হয়েছে। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এসব বুটিক ও ফ্যাশন হাউসগুলোতেও।

একুশ বাঙালি জাতির জন্য এক বড় অর্জন। ভাষা আন্দোলন ও ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রতিবছর আমরা ভাষাশহীদ দিবস পালন করি। আর দিবসটি ঘিরে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনের সঙ্গে একুশের গৌরবগাথা ফুটে ওঠে পোশাকেও।