
প্রবাসের ঈদ নামাজ দিয়ে শুরু, নামাজেই শেষ। পরে ‘স্মৃতি তুমি বেদনা’ হিসেবে কয়েকটা ছবি তুলে রাখা, এই। সত্যি কম-বেশি সবার এই হয় ঈদে! এবার প্রথম আমি আমার ছেলেকে নিয়ে কোরবানি ঈদের নামাজ পড়তে গেলাম। দেরি হওয়াতে দ্বিতীয় জামাতে নামাজ পড়েছি।
নামাজের আগে ছেলে অহন স্ট্রলারে বসে থাকতে থাকতে কেঁদেই দিল। তাড়াতাড়ি আমার পাশে একটা পুতুল দিয়ে বসালাম। একটু পর মাইকে বলল, নামাজ হবে। আমি তাড়াতাড়ি ওকে আবার স্ট্রলারে বসালাম। ও চিৎকার করে কাঁদছে। আমি ভাবলাম, ছোট্ট একটা নামাজ কতক্ষণ বা লাগবে।
গত বছর কম সময়ই লেগেছিল। এবার যেহেতু বাচ্চা কাঁদছে, তাই হয়তো মনে হচ্ছিল অনন্তকাল ধরে আমি নামাজই পড়ছি! এমন সময় পাকিস্তানি এক মহিলা ‘কেয়া হুয়া, কেয়া হুয়া’ বলে অহনকে কোলে নিল। পরে পাশের রুমে চলে গেল।
ওদিক দিয়ে বাইরে বের হবার দরজা! আমার আত্মা শুকিয়ে গেল। কে জানে, পাকিস্তানি মহিলা আমার বাচ্চা নিয়ে হয়তো পালিয়ে যাবে! পৃথিবীর অনেক শয়তান মানুষকেও হয়তো আমি বিশ্বাস করব, কিন্তু পাকিস্তানি কাউকে এই জীবনে বিশ্বাস হয় না। বাংলাদেশের নারীরা যদি নীলিমা ইব্রাহীমের আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি পড়ত, তাহলে হয়তো চাঁদনী চকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি জর্জেটের ওড়না কিনত না।
যা-ই হোক, আমার মাথায় ঘুরছে আমার বাচ্চা চুরি হয়ে যাচ্ছে। চুরি হলে পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করবে মহিলা দেখতে কেমন? আমি নামাজ পড়ার কারণে কিছুই বলতে পারব না। এই সব হাবিজাবি চিন্তা করছি, তখন মাইকে সালাম ফিরছে! আর আমি খাম্বার মতো বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি! তাড়াতাড়ি সালাম ফিরিয়ে দোয়ায় আল্লাহকে বললাম, ‘আমি কী যে নামাজ পড়েছি, আপনি জানেন। মাফ করে দিয়েন।’
দোয়া করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখল কি না আমার এই লজ্জাকর নামাজ। রুম থেকে বেরিয়ে দেখি ছেলে আমার গলা ছেড়ে কাঁদছে। হুম এরপরই আমাদের ঈদ শেষ। ওই যে বললাম প্রবাসের ঈদ এমনই হয়। এবার না হয় কোনো ঘটনা ঘটেছে, তাই মনে আছে। অন্যবার কিছুই ঘটে না, তাই মনেও থাকে না ঈদের দিনগুলোর কথা।
অপলা হায়দার
টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র