পাঠক হাজির

বাবার সাইকেল

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সাইকেল নিয়ে বাবা বের হবেন, এমন সময় মা দৌড়ে এসে ছাতাটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলেন। বাবার অফিসে যাওয়ার রাস্তা বাজে রকমের খারাপ। তাই বাধ্য হয়ে অনেকটা পথ হেঁটে যান।

বাবার এই সাইকেলকে আমি ঘোড়া বলতাম। বাবা শুনে হাসতেন, খুশিও হতেন। স্কুল ছুটির দিন বাবা যদি বাসায় থাকতেন, আমাদের সে ঘোড়াটা নিয়ে এ গ্রাম-সে গ্রাম ঘুরে বেড়াতাম।

সেদিনও অনেক ঘুরেছি। রাতের বেলা আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়েছিল বাড়ির সবাই। ভোরে মায়ের ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। মায়ের কান্নায় আমি আর বাবা পড়িমরি করে উঠে পড়লাম। মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, বাবার সব সময়ের সঙ্গী সাইকেলটা চুরি হয়ে গেছে। দেখলাম সাইকেল চুরিতে বাবা যতটা না কষ্ট পেয়েছেন, ঢের বেশি পেয়েছেন মা। আমার চোখেও পানি চলে এল।

বাবা যে চাকরি করেন তাতে সহসাই একটা সাইকেল কেনার কথা ভাবা যায় না। সংসার চালিয়ে দুইটা পয়সা জমানোর কোনো উপায় নেই, ছোটবেলাতেই এটা আমি বুঝেছি। কিন্তু একটি সাইকেল তো প্রয়োজন।

মা উদ্যোগী হলেন। তাঁর যত্নে লালন-পালন করা দুটি ছাগল বিক্রি করে দিলেন। সে টাকা নিয়ে বাবা গেলেন সাইকেল কিনতে। আমি খুব জেদ করেছিলাম সঙ্গে যাওয়ার জন্য!

দিনভর সেদিন রাস্তার মোড়েই বসে ছিলাম। কখন নতুন সাইকেলে চেপে বাবা আসবেন। আমাদের নতুন সাইকেল।

শেষ বিকেলে বাবাকে দূর থেকে দেখা গেল। বাবা সাইকেলে চড়ে আসছেন। দৌড়ে গিয়ে মাকে খবরটা দিলাম। আবার গেলাম রাস্তায়। বাবা সাইকেল চালাচ্ছেন, মামা তাঁর পেছনে বসা।

সত্যিই সে রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। নতুন সাইকেলের উত্তেজনা তো ছিলই, আশঙ্কা ভর করেছিল যদি আবারও চুরি হয়ে যায়। এর পরের রাত থেকে সাইকেলটা ঘরেই থাকত, ঠিক আমাদের মতো।

যখন একটু বড় হলাম, বাবার অফিসের সময় সাইকেল বের করে দেওয়া, আর অফিস থেকে ফেরার পর তা পরিষ্কার করে ঘরে তোলা ছিল আমার কাজ। তবে এই কাজে শর্ত ছিল, ছুটির দিনগুলোয় সাইকেলটা আমি চালাব।

এখন শুধু ভাবি, সাইকেল চালানোর সেই দিনগুলো কতই না সুন্দর ছিল।

রায়হান হাসান, দিনাজপুর