আইন অধিকার

বাবা আবার বিয়ে করলে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মায়ের অবর্তমানে বাবা আবার বিয়ে করলে আগের স্ত্রীর সন্তানেরা কি বঞ্চিত হন? কিংবা সৎমা কি আগের তরফের সন্তানদের বঞ্চিত করতে পারেন? আমাদের সমাজে বিশেষ করে মুসলিম পরিবারে এ নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এ নিয়ে আইনজীবীর কাছেও আসতে দেখা যায় অনেককে। আইন কী বলে?

মায়ের অবর্তমানে সন্তানের প্রাপ্য

বাবা বেঁচে থাকাকালীন মা যদি মারা যান, তাহলে মায়ের নামে কোনো সম্পত্তি থাকলে মুসলিম আইন অনুযায়ী মায়ের সম্পত্তি তাঁর সন্তানেরা পাবেন। বাবা বেঁচে থাকাকালীন বাবার নামে সম্পত্তি সন্তানেরা পাবেন না। এখন মা মারা যাওয়ার পর বাবা যদি আবার বিয়ে করেন, তাহলে মৃত মায়ের নামে যে সম্পত্তি থাকে, তা থেকে বাবা বা সৎমা সন্তানদের বঞ্চিত করতে পারবেন না। বাবা যদি মারা যান, তাহলেও সৎমা আগের তরফের সন্তানদের বঞ্চিত করতে পারেন না। বাবার অবর্তমানে সব সন্তানই আইন অনুযায়ী যার যতটুকু প্রাপ্য তা পাবে। অর্থাৎ সৎমায়ের সন্তানেরাও সম্পত্তির ভাগ পাবে।

এখানে জেনে রাখা জরুরি, বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় তাঁর নিজের নামে সম্পত্তি যে কারও কাছে দান বা বিক্রি করে দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে মা মারা গেলে বাবা তাঁর প্রাপ্য অংশ বাদে সন্তানদের অংশ বিক্রয় বা দান করতে পারবেন না। তবে সন্তানেরা যদি নাবালক থাকে, তাহলে আদালতের অনুমতি নিয়ে বাবা তা বিক্রয় করতে পারবেন।

মায়ের বর্তমানে বাবা আবার বিয়ে করলে

মা বেঁচে থাকাকালীন যদি মা-বাবার মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর না হয়ে থাকে, তাহলে মায়ের অনুমতি নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে হবে। মা যদি অনুমতি না দেন, তাহলে আইনত বাবা আবার বিয়ে করতে পারবেন না। আর যদি বিয়ে করেই ফেলেন, তাহলে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন এবং মা এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। বাবার দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ হয়ে গেছে, সেটি বলা যাবে না। আইনত সৎমাও সমান অধিকারে অধিকারী হবেন। সৎমায়ের সন্তানেরাও বাবার সম্পত্তির হকদার হবেন বাবার অবর্তমানে।

যদি সম্পত্তি না দেওয়া হয়

সন্তানেরা যদি আইন অনুযায়ী মৃত মায়ের সম্পত্তি বাবার কাছ থেকে বুঝে না পান, তাহলে সন্তানেরা দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিয়ে বণ্টনের মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। যদি বাবাও মারা যান কিন্তু সৎমা যদি বাবা কিংবা মায়ের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলেও সন্তানেরা দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। তবে এ ধরনের কোনো বিরোধ দেখা দিলে সবার সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে তা মিটিয়ে নেওয়া উচিত।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট