Thank you for trying Sticky AMP!!

বাবা গেছেন অজানা স্টেশনে

আজ ২০ জুন, বাবা দিবস। বাবাকে ভালোবাসার বিশেষ এই দিন উপলক্ষে পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিল গোদরেজ প্রটেক্ট ও প্রথম আলো অনলাইন। ‘বাবা, তোমাকে বলা হয়নি’ শিরোনামে বিপুলসংখ্যক পাঠক তাঁদের বাবাকে নিয়ে অনুভূতিমালা লিখেছেন। এখানে নির্বাচিত লেখাগুলোর একটি প্রকাশিত হলো।

কলম যেন চলছে না। লিখতে পারছি না আমার জীবনের খুব প্রিয় মানুষ—বাবার কথা। যখনই বাবার কথা মনে হয়, তখনই চোখে জল ছলছল করে।

আমার বাবা ছিলেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ। তাঁর পোশাক-আশাকের কোনো ঠিক ছিল না। একটু অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। বাড়ির লোকজন অনেক চেষ্টা করেও তাঁর কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।

বাবার আরও একটি সমস্যা হলো, তিনি কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে হুটহাট বেরিয়ে পড়তেন। ট্রেনে বা বাসে চড়ে চলে যেতেন যেখানে-সেখানে। বাড়ির লোকজন খুঁজে খুঁজে পেরেশান হয়ে যেত। বাবা আবার নিজে থেকেই ফিরে আসতেন। বাবার এমন বিভিন্ন সমস্যার কারণেই আমার দাদা একটু দরিদ্র পরিবারে তাঁর বিয়ে দেন। আমার মা সেই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁর গর্ভে আমার জন্মও হয়। আমার জন্মের পর ধীরে ধীরে বাবার অস্বাভাবিকতা কিছুটা কমে যায়।

একদিন হঠাৎ দাদার কাছে থানা থেকে ফোন আসে। পুলিশ জানায়, বাবা আর নেই।

বাবা কী মনে করে যেন আবারও বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেনে চড়ে বসেছিলেন। পরের স্টেশনে নেমেও পড়েছিলেন। বাবা শিশুদের খুব পছন্দ করতেন। স্টেশনের এক পথশিশুকে চকলেট দিতে গেলে লোকজন বাবাকে ভেবেছিল ছেলেধরা। স্থানীয় লোকজন তাঁকে এমনই মার মেরেছিল যে বাবার মুখটা চেনা যাচ্ছিল না। ওখানেই শেষ।

বাবা আর ফেরেননি।

আমি তখন খুব ছোট। মনে আছে, মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বাবার নিথর দেহের পাশে খুব কাঁদছিলেন।

মা এখনো কাঁদেন। আমিও কাঁদি। বাবাকে তো কোনো দিনই বলা হয়নি, হবেও না। কিন্তু আমার বিধাতার কাছে প্রার্থনা একটাই—ভালো রেখো আমার বাবাকে।