আদবকেতা

বুঝেশুনে কথা বলা

বন্ধুর সামনে বলা সব কথা বড়দের সামনে বলা উচিত নয়। মডেল: সামির, সানি ও মির্জা। ছবি: অধুনা
বন্ধুর সামনে বলা সব কথা বড়দের সামনে বলা উচিত নয়। মডেল: সামির, সানি ও মির্জা। ছবি: অধুনা

এই যাত্রায় আমাকে তমিজ নিয়ে লিখতে বলা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে বেতমিজ মানুষ লেখা লিখবে কী করে। বিশেষ করে বাংলাদেশ অথবা লিভারপুলের খেলার সময় আমি বাবা-মায়ের সামনে যে রকম কথা বলে ফেলি, সেগুলো পত্রিকায় ছাপানো যাবে না। আমার বাবা-মা খুব ধৈর্যশীল দুজন মানুষ। ‘আহা থাক! পাগল তো। বিয়ে না দিলেই হবে। তাহলে আমাদের ছাড়া আর কাউকে অপদস্থ করতে পারবে না৷’ এসব ভেবে ঘর্মাক্ত নিদ্রা যাপন করেন তাঁরা। ওই দিকে ছেলে চিৎকার করেই যায় ‘বউয়ের ছোট ভাই কুকুরের ছানা যে বাবাকে কখনো চিনেনই, সাকিবের বলের সামনে কীভাবে দাড়াস, আমি দেখে নেব!’
আপনাদের বাবা-মা নিশ্চয় অসাধারণ আদুরে ও স্নেহময় দুজন মানুষ। হয়তো দুটো কথার মাঝে আপনি যদি ‘শিট’ বা এ ধরনের অন্য কোনো কথা বলে ফেলেন, তাঁরা আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন। তঁারা আমার মা-বাবার মতো ভাববেন যে আপনি পাগল। ঠিক হয়ে যাবে। শুধু কি মা-বাবা, বন্ধুদের সঙ্গে এ ধরনের মুদ্রাদোষগুলো এমনভাবে স্বভাবের মধ্যে চলে আসে যে না চাইলেও অন্যের সামনে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এখন বয়সের কথায় আসি। আমি প্রায় ৪০। আপনারা কি চান যে মা-বাবা ৪০ বছর পর্যন্ত আপনাকে পুষতে পুষতে ‘বেচারা পাগল/পাগলি’ বলে ঘুমিয়ে যাবেন? নিশ্চয় না।
জীবনে সবকিছু বলার একটা জায়গা আছে। বেস্ট ফ্রেন্ডকে গালিযুক্ত ডাকে ডাকাটাই স্বাভাবিক। বাস্টার্ড না ডেকে অন্য কিছু ডাকলেই বরং বন্ধুত্ব হালকা হয়ে যাবে! বন্ধুদের কাছে আবর্জনাপূর্ণ জীবনের কথাগুলো বলে হালকা হওয়া যায়, তবে এটি চর্চার পর্যায়ে গেলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবে। সাধারণ ভদ্রতার মধ্যে এটি পড়ে। অন্যরা এতে বিব্রত হতে পারে।
রাস্তায় গালি দিন। না হলে সামনের গাড়ি সরবে না। বাজারে গালি দিন, না হলে মাছের দাম কমবে না। বাসে গালি দিন, না হলে সিটে জায়গা পাবেন না। এটি হয়তো অনেক সময় হয়ে থাকে। তাই বলে এটি স্বভাবসিদ্ধ করা যাবে না। বন্ধুর সামনে যা বলা যায়, বড়দের সামনে কি তা বলা যায়?
সত্যি কি চান যে বাবা-মা একজন পাগলকে ঘরে নিয়ে ঘুমাতে যাক।
লেখক: অভিনয়শিল্পী