প্রতিটা ক্লাসরুমেই কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যাকবেঞ্চার থাকে। সব ব্যাকবেঞ্চারের মধ্যেই আছে কিছু অদ্ভুত মিল। মিলগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন আরেক ব্যাকবেঞ্চার মো. মিকসেতু
l ব্যাক বেঞ্চে বসা মানে এই নয় যে তারা সবার পরে এসেছে, বরং কখনো সবার আগে এলেও তারা মূলত ব্যাক বেঞ্চ দখল করার জন্যই আসে।
l সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠেও সকাল ৮টার ক্লাসে উপস্থিত থাকার ক্ষমতা শুধু ব্যাকবেঞ্চারদেরই আছে।
l সারা দিন ক্লাস করার জন্য ব্যাকবেঞ্চারদের কখনো বই, খাতা, কলম লাগে না। বড়জোর একটা স্মার্টফোন হলেই চলে, সেটাও ক্লাসে সময় পার করার জন্য।
l শিক্ষকদের ধারণা, ব্যাকবেঞ্চাররা তাদের চেয়েও বেশি জানে! এ জন্য লেকচার দিতে গিয়ে যখনই কোনো কিছু জেনে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে তখনই বলেন, ‘এই পেছনে, লাল টি-শার্ট, বলো তো এটা কী হবে!’
l ব্যাকবেঞ্চারদের চামড়ার সঙ্গে গন্ডারের চামড়ার মিল আছে। শিক্ষকেরা যত অপমানসূচক কথাবার্তাই বলুন না কেন, সেগুলো তাদের গায়েই লাগে না।
l লেকচারের ফাঁকে যদি কোনো ব্যাকবেঞ্চার ভুলেও কিছু জানতে চেয়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করে বসে সেই মুহূর্ত থেকে সে বাকিদের হাসি-ঠাট্টার বস্তুতে পরিণত হয়।
l পড়ুয়া ছাত্রদের সঙ্গে ব্যাকবেঞ্চারদের বন্ধুত্ব সিজনাল। এই সিজনের ব্যাপ্তি সেমিস্টার ফাইনালের দিনগুলোতেই সীমাবদ্ধ।
l প্রশ্ন কঠিন করলে পড়ুয়া ছাত্ররা শিক্ষকের কাছে আপত্তি জানালেও ব্যাকবেঞ্চাররা কখনো আপত্তি জানায় না। এমনকি প্রশ্ন যে ‘কঠিন’ হয়েছে এই ব্যাপারটাই তারা বুঝতে পারে না।
l খুব কঠিন প্রশ্ন হলে পড়ুয়া ছাত্রদের ‘এ’ প্লাস মিস হতে পারে কিন্তু ব্যাকবেঞ্চারদের পাস কেউ ঠেকাতে পারে না।
l ক্লাস টেস্ট কিংবা মিডটার্ম পরীক্ষার হলে খাতা পেয়ে সাধারণ ছাত্ররা অন্যদের কাছে তারিখ জানতে চায়, ব্যাকবেঞ্চাররা জানতে চায় পরীক্ষার সাবজেক্টের নাম।
l পরীক্ষার হলে ব্যাকবেঞ্চারদের মতো ‘ঐক্য’ পৃথিবীর যেকোনো ঐক্যজোটের চেয়ে শক্তিশালী।
l পাস মার্ক ওঠানোর মতো লিখতে পারলে সেটাই ব্যাকবেঞ্চারদের কাছে ‘ফাটাফাটি পরীক্ষা হইছে’ বলার জন্য যথেষ্ট।
l ব্যাকবেঞ্চাররা বিশ্বাস করে, তারা একে অপরের বন্ধু নয়, ভাই।
l ক্লাস চলাকালে ব্যাকবেঞ্চাররা ফিসফাস করলেও স্যার যখন দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘এতক্ষণ কী গল্প করছিলে?’ তখন তারা কোনো উত্তর দিতে পারে না। কারণ, তারা সত্যিই জানে না এতক্ষণ আসলে কী নিয়ে গল্প করছিল।
l ব্যাকবেঞ্চাররা সব ভাইভাতেই একই উত্তর দেয়। তাদের ভাইভা হয় অনেকটা এ রকম—
: আসসালামুআলাইকুম, স্যার।
: থ্যাংক ইউ, স্যার!
: সরি স্যার!
: সরি স্যার!
: সরি স্যার!
: আসসালামুআলাইকুম, স্যার।
l কিছু না পারলেও ভাইভা রুম থেকে বের হয়ে এসে ব্যাকবেঞ্চাররা কিছুক্ষণের জন্য সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়।
l ব্যাকবেঞ্চাররা অল্পতেই সন্তুষ্ট হওয়ার ক্ষমতা রাখে। পড়ুয়া ছাত্ররা সিজিপিএ-৩.৯৬ পেয়েও যেখানে মন খারাপ করে, ব্যাকবেঞ্চাররা সেখানে টেনেটুনে পাস করেও সর্বোচ্চ খুশি থাকে।
l প্রতিটা ব্যাকবেঞ্চারই সেমিস্টারের শেষে ‘সামনের সেমিস্টারে দেখে নেব’-টাইপ প্রতিজ্ঞা করার অসীম ক্ষমতা ধারণ করে।
l সবশেষে ব্যাকবেঞ্চাররা কখনো বোঝা নয়, ক্লাসের সৌন্দর্য।