
ভালোবাসার সঙ্গে বোঝাপড়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে
আমি সেই চোখে বারবার তাকিয়েছি। সে কী চায় সেটা বোঝার চেষ্টাই করেছি বারবার। মানুষকে ভালোভাবে বোঝার জন্য বেশি না তার চলার ভাব, তাকানোর ভাব, চোখ নাড়ানোর ভাব, মুখের ভাব দেখলেই বোঝা যায়। মনের সঙ্গে মুখের মিল থাকে। কিন্তু কেউ কেউ আছে যারা মনকে অনেক কষ্টে পোষ মানিয়ে নিয়েছে। তাদের বোঝাটা একটু জটিল। ভালোবাসার সঙ্গে বোঝাপড়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে। অনেকে আছে ভালোবাসতে জানে, কিন্তু বোঝার চেষ্টা করে না। প্রেমিক যেন প্রেমিকাকে বোঝে, সেটা সব মেয়ে চায়। বোঝাপড়া থাকে না বলে কারও কারও প্রেম সহজে ভেঙে যায়।
শাওন মাহমুদ, ফরিদপুর।
আমরা আমরাই তো
নীলাম্বরে শুভ্র মেঘের ছোটাছুটি। যেন নীল ক্যানভাসে কোনো আনমনা শিল্পীর তুলির আঁচড়। এমনই আনমনা আমরা কজন। থাকা, খাওয়া, পড়া সব একসঙ্গে। কখনো বা কথা-কাটাকাটি, সব ভুলে আবার একই পথে হাঁটি। একের সমস্যায় অন্যের মাথাব্যথা, তখন চলে পরামর্শের কথা। একই সঙ্গে আড্ডা, ঘোরাঘুরি। কেউ কেউ মাঝে মাঝে করে বাড়াবাড়ি। যতই হোক, আমরা আমরাই তো। আমাদের এই খুনসুটি-বোঝাপড়া চলতে থাকবে, চলতে থাকবে এবং চলতেই থাকবে। এ বাঁধন ছিঁড়বার নয়। তোরা কী বোকা। আমার মতো এক অপদার্থকে তোদের সঙ্গে রাখিস। এই বোকামির জন্যই তোরা আমার বন্ধু। তাই তোদের একটা কথা বলতে চাই
‘বন্ধু তোদের রাখব আমি এ মনে
ভুলব না কোনো কারণে বা অকারণে।’
সাফাত সৈকত
বিএএফ শাহীন কলেজ, যশোর।
মা ও পিঁপড়ের গল্প
ছোটবেলায় কোনো ভালো খাবারে পিঁপড়ে পড়লে মা বলত বাবা পিঁপড়ে খেলে তাড়াতাড়ি সাঁতার শিখবি। তাই অনেক খাবারই পিঁপড়েসহ খেয়েছি। তাই হয়তো খুব তাড়াতাড়ি সাঁতার শিখেছি। ছোটবেলায় এমনটা মনে হতো। যখন একটু বড় হচ্ছি বুঝতে শিখেছি তখন ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়েছিল যে মা আমাকে বোকা বানিয়েছিল। ছোটবেলায় ভালোই সাঁতরে বেড়াতাম নদীতে, কখনো ডুবে যাইনি। এখন জীবন নামের নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছি, মা তুমি আবারও বোকা বানিয়ে দাও। যাতে এই নদী সাঁতরে পার হতে পারি। না হয় আবারও পিঁপড়ে খাওয়া শুরু করব।
সুজন চক্রবর্ত্তী, তালতলা, কুড়িগ্রাম।
অপেক্ষায় আছি...
হঠাৎ করে যেদিন নিজেকে বদলে নিলে। সেদিন প্রথমে মনে করেছিলাম। হয়তো অভিমান করেছ। তাই বারবার তোমার অভিমান ভাঙানোর জন্য তোমাকে কাকুতিমিনতি করেছি। কিন্তু আমি জানতাম না তুমি আমার এই কাকুতিমিনতিকে দুর্বলতা ভেবে আরও বেশি অবহেলা করবে। জানবই বা কী করে? যে ভালোবাসা তোমার কাছে ছিল, প্রতারণার সময় কাটানোর, আমার কাছে সেটা ছিল পবিত্র ও সত্যিকারের ভালোবাসা। তাই তো আজ এত কষ্ট পেলাম তোমার কাছ থেকে। তবে তোমার চলে যাওয়াতে আমি কিছুটা গর্বিত, কিছুটা আনন্দিত, কিছুটা কষ্ট নিয়ে আছি। সত্যি আমি গর্বিত, কারণ, তোমার সময় একদিন খারাপ ছিল। সেদিন তুমি ভালোবাসা নামের মিথ্যে গল্প নিয়ে আমার কাছে হাজির হয়েছিলে। আমি সেই খারাপ দিনগুলো দূর করে দিতে পেরেছি বলে। আমি আনন্দিত। স্রষ্টা যা করেন ভালো করেন। হয়তো এমন কেউ আমার জীবনে আসবে যার ভেতর নেই কোনো পাপ, নেই কোনো প্রতারণা। শুধু আছে সত্যিকার ভালোবাসা। যে আমার সবকিছু জেনে আমাকে আপন করে রাখবে।
রাজীব তালুকদার, নেত্রকোনা।
তোকে ভীষণ মিস করি বন্ধু
অনেক দিন পরে আবার তোর ক্যাম্পাসে গেলাম। তোর আবেশে স্নিগ্ধ ছিল পুরো ক্যাম্পাস। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবন, ঝুলন্ত সেতু, ক্যানটিন, শহীদ মিনার, লাইব্রেরির সবখানে শুধু তোকে খুঁজেছি। তোর কি মনে আছে? লাইব্রেরির সামনে তোর অপেক্ষায় যে কবিতা লিখেছিলাম; তুই এসে হাসতে হাসতে কবিতাটি পড়েছিলি, যে হাসিতে সুখের বৃষ্টি নেমেছিল এবং সেটি যত্ন করে রেখে দিয়েছিলি। সেই কবিতাটি একটি ম্যাগাজিন গত ঈদসংখ্যায় ছাপিয়েছে। ম্যাগাজিনটিও সঙ্গে করে নিয়েছিলাম। তোকে পেলে লাইব্রেরির সামনে কবিতাটি আবার পড়ার জন্য অনুরোধ করতাম, যে স্থানটিতে বসে কবিতাটি রচনা করেছিলাম। ঝরনার ধারে আমার যে অনন্য একটি ছবি তুলে দিয়েছিলি, সেখানটায়ও গেলাম। বারবার তোর উপস্থিতির আভাস পাচ্ছি মনে হচ্ছিল। জলেও তোর প্রতিচ্ছবি দেখেছি। শুধু বাস্তবে ছিলি না। কীভাবে এত বদলে গেলি? বাসার ঠিকানা বদল করলি। ফোন নম্বর বদল করলি। যে বন্ধুটিকে ছাড়া বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গেও দেখা করার সাহস জোগাতে পারতি না, আজ এভাবে ভুলে গেলি? ভুলেও কি আর মনে পড়ে না? ঈদ গেল, একবারও কি খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে হয়নি? হয়তো অনেক সুখে আছিস। আমারও তা-ই কাম্য। সুখের জন্য দূরে গেলি ঠিক আছে; কিন্তু আমার সান্ত্বনার জন্য কী ভুল ছিল, তা বলে গেলেই পারতিস। সত্যি বন্ধু, তোকে ভীষণ মিস করি। ইচ্ছা না হয় যদি দেখা করিস না; কিন্তু একবার হলেও তোর সঙ্গে কথা বলতে চাই। অন্তত তোর একটি ফোন-কলের অপেক্ষায় আছি।
ইমন, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।
ভালোবাসি না বললে কি ভালোবাসা হয় না?
১৭ তারিখ তোমার বিয়ে। লাল শাড়ি পরে নববধূ সেজে কারও জীবন রাঙাতে চলে যাবে। চিরতরে হারিয়ে যাবে আমার কাছ থেকে, অচেনা হয়ে যাব আমি, চলে যাবে বহু দূর? চার বছরের সম্পর্কে কখনোই ভালোবাসি বলোনি আমাকে। অনেক চেষ্টা করেও কখনো বলাতে পারিনি। তবে গোপনে গোপনে যে আমাকে ভালোবাসো, তা কিন্তু বরাবরই স্পষ্ট তোমার কথায়। ভালোবাসি না বললে কি ভালোবাসা হয় না? আপনাকে আমি খুব পছন্দ করি। অনেক চেষ্টা করেও আপনার সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারি না। আপনি কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বললে আমার ভীষণ খারাপ লাগবে। আপনি ফোন না দিলে আপনাকে আমি খুব মিস করি। আপনাকে আমি জীবনেও ভুলতে পারব না। তোমার মধুমাখা কণ্ঠস্বর আমার কাছে পুরাই একটা নেশা। এক দিনও কথা না বললে দম বন্ধ হয়ে যায়। ভেতরটা পুরোপুরি অশান্ত হয়ে পড়ে, হাহাকার বেড়ে যায়। বেঁচে থাকার উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। আমার সমস্ত ভাবনা আর অনুভূতিজুড়ে শুধুই তুমি। তোমার কথা ভাবতে ভাবতে আমার দিন শুরু হয়, কেটে যায়, শেষও হয়। এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে থাকতে পারি না। তোমার সবকিছু আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে সারাক্ষণ। তোমার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে হৃদয়ে ঝড় ওঠে। এলোমেলো লাগে সবই। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে শ্রাবণধারায়। ঘুমিয়ে পড়াও যে খুব কষ্টের, রাত্রিগুলো ভীষণ দীর্ঘ মনে হয়। ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আমার পুরোটা আকাশ। জানি, তোমাকে আর কখনোই পাব না, পাব না বলেই কি ভালোবেসে যাব না? আমি তোমাকে সেই বৃহস্পতিবারের মতোই ভালোবাসি। সত্যি, সত্যিই ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি, বড্ড ভালোবাসি। যেখানেই থেকো ভালো থেকো।
আবদুল কাদের
চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর।
তুই কবে আসবি?
ইচ্ছে করলেই হয়তো ভুলে থাকা যায় না। খুব সহজেই ভুলে থাকা যায়। ভুলে থাকার পাঠ কোথায় হয়, তা জানি না। জানি হৃদয়ে থাকে অভিমান, মনে থাকে কষ্টের পাঠ। ভুলে থাকাতেও থাকে সুখ। তুই কি সেই সুখের চেষ্টাতেই আছিস? ভুলে থাকার পাঠ চুকে, অভিমানটা বাক্সে পুরে আয় একটু বুকে আয়...তুইহীন বুকটা ফাঁকা ফাঁকা যে অনেক দিন। বিছানায় পড়ে থাকে এক খণ্ড বিষণ্ন বালিশ। ওরা রাতের কোলে শুয়ে তোর গল্পই বলে। চোখের এক ফোঁটা নোনতা জল গড়িয়ে পড়লেই, বালিশটাও বলে ওঠে, তুই কবে আসবি?
মীর রবি, রংপুর।
আমি স্থির হয়ে কেন দাঁড়িয়ে আছি
প্রিয় মা,
অনেক দিন পর আজ তোমাকে লিখছি। ভালো লাগছে না, মা। ইচ্ছে করছে তোমার কোলে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি। জানো মা, আজও অবেলায় খেতে বসেছি, আধখাওয়া খাবার খেয়ে উঠে পড়েছি। সেই সঙ্গে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি তুমি নেই, তাই কেউ চোখ রাঙায় না আমাকে। মা, শোনো না, ওই দিন মার্কেটে গিয়েছিলাম। ছেলেবেলার কথা খুব মনে পড়ল। আমি কখনোই কিছু আবদার করতাম না। তুমি মার্কেটে নিয়ে যেতে আমাকে। আমি আমার পছন্দমতো কোনো এক জিনিসের সামনে দাঁড়ালেই বুঝতে, আমার এটা চাই। আমার কৌতূহলী দৃষ্টি তোমার নজর এড়াবে না জেনেই এমন করতাম, কিন্তু মুখে কখনো বলা হয়নি এটাই চাই। ওই দিন যখন গেলাম সেখানে, খুব সুন্দর একটা হ্যান্ডব্যাগের ওপর দৃষ্টি আটকে গেল। আমি চাইলেই কিনতে পারতাম মা, কিন্তু চোখে পানি এসে গেল। তুমি থাকলে নিশ্চয় বুঝতে, আমি স্থির হয়ে কেন দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু দোকানের মানুষগুলো তা বোঝেনি, আমিও তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হয়তো-বা আমার অবচেতন মন তোমাকে খুঁজছিল। তোমার মেয়ের রোগটা এখনো সারেনি মা, তবে দিন দিন রোগের বৃদ্ধিটা খুব জ্বালাতন করছে। হুটহাট মন খারাপ রোগ থেকে কবে মুক্তি পাব, জানি না। মা, জানো, সবাই বলে, কাঁদতে পারলে নাকি কিছুটা হলেও দুঃখ দূর হয়, কিন্তু আমিও তো খুব কাঁদি, কই, আমার তো দুঃখবোধ যায় না। আমি জানি, যাবেও না। আসলে কাঁদতে হয় প্রিয় মানুষগুলোকে সামনে রাখে, এই কান্নায় অনেকটা শান্তি পাওয়া যায় বলে আমার ধারণা। আমারও ইচ্ছে হয় তোমাকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁদি, কিন্তু এটা আর হয়ে ওঠে না, মা। বড় হওয়ার অনেক ঝামেলা, তাড়না, মা। তোমাকে অনেক ভালোবাসি এবং সেটা প্রকাশের অনেক চেষ্টা করেছি, তবে তা হয়ে ওঠেনি। কেন জানো? আমার মনে হয়, মানুষ এই একটা জায়গায় ব্যর্থ। সবাই চায় মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে, কিন্তু পারে না পাছে সেই ভালোবাসা কম পড়ে যায়। তবে এই নিখাদ ভালোবাসা প্রত্যেক মানুষকে প্রবলভাবে অভিভূত করে।
মা, অনেক কথা শিখেছি, তাই না? মূল কথাই তো বললাম না। মূল কথা হলো...থাক, পরে বলব। আজ ইচ্ছে করছে না।
ইতি
তোমার কইন্যা...
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। ই-মেইল: adhuna@prothom-alo.info
ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA. খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’