
সেই তুমি কে?
ঠিক মনে পড়ছে না সময়টা। হয়তোবা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস শেষে বারান্দায় দাঁড়াতেই চোখ আটক গেল। ঠিক যেন উল্কার মতো সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হাই, আমি একা, আপনি।’ আমি একটু দুষ্টুমি করে বললাম, ‘আমিও একা, কিন্তু আমি সিহাব।’ আসলে ওর নাম একা। ও আমার ডিপার্টমেন্টেই পড়ে, তবে প্রথম বর্ষে। তারপর থেকে হাই-হ্যালো এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ। রক্ষণশীল পরিবারের ছেলে আমি। এটিই-বা কম কিসের। কিন্তু হৃদয়-মন্দিরে বাস করা মন নামের পাখিটা তো আর রক্ষণশীলতা বোঝে না। একার মনটাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সে জন্যই হয়তো একদিন ও আমাকে বলেছিল, ‘জীবনে যদি কখনো দেখো তোমার বড় কোনো কিছুর প্রয়োজন, তবে জানাইও, আমি তোমাকে সিঁড়ি হয়ে পৌঁছে দেব। কেন জানো, আমি তোমার কোনো পরাজয় চাই না।’ আমি বলেছিলাম, ‘আমার জীবনে বড় কিছুর প্রয়োজন হবে না।’ একার হৃদয়-মন্দিরের মনপাখিটি ভালোবাসা নামের ছোট বাসা বাঁধতে চেয়েছিল বলেই হয়তো এত কথা। আমার পাখিটিও যতবার বাসা বাঁধতে চায়, ততবারই বাস্তবতা নামের নির্মম সত্যটা তা বারবার ভেঙে চুরমার করে দেয়। বাবার বদলির সুবাদে একাও কলেজ ছেড়ে অন্য কলেজে চলে যায়। আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।
জীবন এক যাযাবর। জীবনের প্রয়োজনেই অনেকের সঙ্গে মিশতে হয়, চলতে হয়। আজ পড়াশোনা শেষ করেছি। চাকরিও করছি। জীবনে একেক সময়ের অনুভূতি একেক রকম। বেঁচে থাকাটাই আনন্দ। ভোরের শিশিরস্নাত সকাল, তরুলতা, গাছপালা ভরা নিঃস্বার্থ প্রকৃতিকে ভালোবেসেও জীবনটাকে উপভোগ করা যায় প্রতি মুহূর্ত।
তারপরও যখন খুব একা থাকি, তখন নিজেকে বড় দুঃখী মনে হয়। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙলে উঠে যাই ছাদে। জোনাকি পোকাগুলোর শব্দে ঘুমের ঘোর কাটে। আকাশের পানে চেয়ে থাকি। আকাশের মিটিমিটি তারাগুলোকে বড় সুখী মনে হয়। মন ডানা মেলতে চায় অসীমে। বিস্তৃত প্রকৃতির মাঝে দুঃখকে বিলিয়ে দিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি তোমাকে নিয়ে। স্বপ্ন দেখি ওই দূর নীলিমা মিশেছে যেথা দিনের শেষে গোধূলি বেলায়, সেখানেও থাকব তুমি আমি ও আমাদের অনাগত ভবিষ্যৎ। মিথ্যা বলব না, আমার প্রতিটি ভোর আসে তোমাকে ভেবে। রাতে ঘুমের দেশে যাওয়ার সময় যে ভাবনাগুলো আমাকে আচ্ছন্ন করে, তা শুধু তোমাকে নিয়েই। কিন্তু আজও জানি না সেই তুমি কে? তবু বলি, এসো সবকিছু ভাগাভাগি করি, এসো রূপের অহংকার, ব্যক্তিত্বের অযথা বাড়াবাড়ি ত্যাগ করে হাতে হাত, চোখে চোখ ও মনে মন রেখে ভালোবাসার কাছে নতজানু হই। এসো, ভালোবাসার বর্ষণে ভিজতে ভিজতে উপভোগ করি পৃথিবীর সব সুখ ও সুন্দর।
মো আনোয়ার হোসেন
সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।
তোর গান আমার জন্য
তুই শিল্পী, তবে সবার জন্য না। তুই শুধু আমার। তোকে গাইতে হবে শুধু আমার জন্য। অন্য কারও জন্য নয়। তোর গান হবে আমাকে নিয়ে। একটু অপেক্ষা কর। আমিও গান রচনা করছি তোর জন্য।
বন্ধু
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
তোমাকে ভুলতে পারি না কেন?
পাঁচটা বছর পার হয়ে গেছে তোমার সাথে আমার যোগাযোগ নেই। সেই ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তোমার সাথে আমার শেষ কথা হয়। এখন ২০১৬, তবুও কেন তোমাকে ভুলতে পারি না। ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল। কয়েকটা মাসের মধ্যে তুমি আমাকে এত ভালোবাসলে যে তোমাকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি। আমাদের সম্পর্কটা আগের মতো আছে, আমার কাছে। শুধু যোগাযোগ নেই। জানো, এখনো তোমার জন্য তোমার পথ চেয়ে থাকি। যদি কখনো দেখা হয়। আমি বিশ্বাস করি, তুমি আমার হবে।
ইতি
তোমার হৃৎপিণ্ড
তোর রাজ্যে নাগরিকত্বটুকু দিস
সত্যি তোকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। তুই কেন বুঝতে পাচ্ছিস না আমাকে! তোকে একটু বেশি ভালোবেসে ফেলেছি, এটাই কি আমার অপরাধ? জানি, উত্তর দিবি না। এও জানি জীবন নামের রেলগাড়িটা দুমড়েমুচড়ে যাওয়ার আগে হলেও প্রশ্নটির উত্তর পাব।
তাই তো আজও অবস্থান করছি শুধু তোরই রাজ্যে, হৃদয়ের গভীরে, জীবনের অবশিষ্ট ভালোবাসাটুকু সাথে নিয়ে। জানিস, নানান ঘাত-প্রতিঘাত, কষ্ট-যন্ত্রণা যখনই আমার রাজ্যটাকে আবৃত করে ফেলেছিল হঠাৎ দেখতে পেয়েছিলাম কে যেন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ছুটে গিয়েই দেখতে পাই তোকে। সেই থেকে আজও ফিরতে পারিনি নিজ রাজ্যে। এখন কিছু বাধা আমাকে তোর রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করছে। কিন্তু আমি যে ফিরতে পারব না তোকে ছেড়ে।
ছোট্ট একটা জিনিস চাব, দিবি? একমুঠো ভালোবাসা। আরে না। আমার মতো একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকে তোকে ভালোবাসা দিতে হবে না। শুধু সারা জীবন তোর রাজ্যে বসবাস করার জন্য নাগরিকত্বটুকু দিস।
দূর থেকে তোমাকে দেখতাম
তুমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তে। বন্ধুর সঙ্গে তোমার স্কুলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে তোমায় দেখি। প্রথম দেখাতেই তোমাকে অনেক ভালো লাগে। আমি তখনই ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমাকে। কিন্তু কোনো দিন তোমাকে বলতে পারিনি। শুধু বোবার মতো দূর থেকে তোমাকে দেখতাম। প্রায় আড়াই বছর পর তুমি আমার অজান্তেই জানতে পারলে যে আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি, তখন স্বেচ্ছায় আমার কাছে এলে। আর আজ চার বছর, চার মাস কাছে থাকার পর হঠাৎ যখন আমার ভর্তি ব্যর্থতার পর পরিবারের অজুহাত দেখিয়ে একটি বাক্য আমাকে শুনিয়ে চলে গেলে, আমি আবারও বোবা হয়ে গেলাম। আগে যখন কাঁদতাম, তুমি পরদিনই আমাকে দেখতে আসতে। আর এখন আমি প্রতিনিয়তই কাঁদি। তুমি কি এখন আমার কান্না শুনতে আর পাও না?
নাজমুল
রাজশাহী কলেজ
তোমাদের সব সময় মনে পড়ে...
কখনো বিয়ে করতে চাইনি। মনে হতো আব্বুর মতো কেউ আমাকে বুঝবে না। আম্মুর মতো কেউ আমাকে চিনবে না। ছোট ভাই সুফিয়ানকে ছেড়ে যেতে হবে চিন্তাই করতে পারিনি। সেই ভয়ংকর জিনিস বিয়ের পিঁড়িতেই বসতে হলো আমাকে ২০১৩ সালে। তারপরও ভেবে রেখেছিলাম মা-বাবার পাশ থেকে দূরে কোথাও যাব না। স্বামীকেও বলে রেখেছিলাম। এখনো মা-বাবার পাশেই আছি। রিকশায় গেলে ভাড়া ১৫ টাকা। সবাই ব্যস্ত! বোনেরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে আসে না। আমার হাসতে ইচ্ছে করে না। মনে হয় কাদের মুখে হাসি দেখলে যেন একটু হাসতাম। প্রতিদিন চোখের পানি ফেলি তোমাদের জন্য। তোমরা তা বুঝো না, আমি জানি। যতটুকু হাসি আর কথা বলি তা শুধু নিজের মেয়ে ‘সারজাহ্ মারিয়াম আইজার’ হাসি দেখে আর কথা শুনে। আমার বেঁচে থাকার শক্তি তোমরা, আর আমার মেয়ে। তারপরও কিসের যেন শূন্যতা! তোমাদের খুব বেশি মনে পড়ে আব্বু-আম্মু..., কী পরিমাণ, তা ভাষায় বলে প্রকাশ করতে পারব না।
সায়মারহমান
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
মনের বাক্স
প্রিয়পাঠক
আপনার মনের না-বলা যেকোনো কথা বা স্বীকারোক্তি বলে ফেলুন অধুনার ‘মনেরবাক্স’ বিভাগে। ফেসবুক, ই-মেইল বা চিঠি লিখে জানাতে পারেন মনের কথা।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। ই-মেইল: adhuna@prothom-alo.info ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA
খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’