বাড়ির সংবিধান!
আমাদের বাসায় টেলিভিশন দেখতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা তখনই, যখন বাড়ির সবাই একসঙ্গে টিভি দেখতে বসি। আমি একদিকে, বাকিরা অন্যদিকে। আমার হাতে রিমোট থাকলে বাকিরা রে রে শুরু করে। কিন্তু তাদের একজনের কাছে রিমোট থাকলে তখন শুধু আমার বিরক্তি। কারণ তারা কলকাতার সিরিয়াল ছাড়া কিছু দেখে না। এমনকি দেশের খবরও শুনতে চায় না।
সেদিন বাসায় একা ছিলাম, তাই ইচ্ছামতো চ্যানেলগুলো দেখেছি। টিভি দেখা শেষ করে এক বন্ধুকে নিয়ে শহরে গেলাম। বাসায় ফিরে দেখি সবাইকে অচেনা লাগছে। কেউ কথা বলছে না। বারান্দায় চোখ পড়তেই দেখি টেলিভিশনের রিমোটটা ভাঙা। আর রিমোটের বোতামগুলো এখানে-সেখানে পড়ে আছে। পরে আমার ছোট ভাই রাব্বি ডেকে বলল, ‘তুই বাড়ির সংবিধান ভেঙেছিস।’ আমি বললাম, ‘কোন সংবিধানের কথা বলছিস? রাত করে বাসায় ফেরা, নাকি নেশা করার কথা?’
সে বলল, ‘তুই টেলিভিশন দেখবি দেখ, তবে বন্ধ করার সময় স্টার জলসায় না রেখে বন্ধ করছিস কেন? বাবা তো সেই চ্যানেল অনেক খুঁজেও পায়নি। তাই তার রাগে রিমোটটা বিসর্জন দিতে হলো।
রায়হান
দিনাজপুর।
শুধু একবার ফিরে দেখো...
বেশি কিছু বলার নেই আমার। শুধু একবার ফিরে দেখো আমি কতটা কাঙাল তোমার জন্য; আজ আমার দুচোখ তোমায় খুঁজে বেড়ায়। এই শরীর প্রাণ হারালে হয়তো আমার আত্মা তোমায় খুঁজে বেড়াবে অনন্তকাল।
মেহেদী হাসান
রংপুর।
মায়ের আঁচল
আঁচল শব্দটা আমার কাছে বেশ পরিচিত, বিশেষ করে মায়ের আঁচল। সেই ছোট্টবেলা থেকেই মায়ের আঁচল আমাকে টানে। ছোট্টবেলায় যখন সব সময় মায়ের কাছে থাকতাম, মা যেখানেই যেত সেখানেই যেতাম। বাইরে কম যেতাম, মায়ের কাছেই থাকতাম সারাক্ষণ। এই দেখে চাচি-ফুফু-খালারা বলেই ফেলতেন, তুই সারাক্ষণ মায়ের আঁচল ধরে ঘুরঘুর করিস ক্যান? মায়ের কাছে থাকতে মন চায় না কার? আমারও চাইত, হয়তোবা আঁচল ধরেই।
একদিন মা আমাকে না জানিয়ে বাড়িতে রেখেই অসুস্থ নানুকে দেখতে গিয়েছিল। পরে চাচিকে বলি, মা কই গেছে? উত্তরে চাচি বলেন, তোমার নানাকে দেখতে গেছে। আমি সেই দিন খুব কাঁদি, আমার কাঁদা দেখে ফুফু বলছিল, বড় হলে কী করবি? তখন কি আর সারাক্ষণ মায়ের আঁচল ধরে ঘুরতে পারবি? কথাটা তখন হয়তোবা বুঝতে পারতাম না। আজ বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখনকার কথাগুলো বুঝতে আর কষ্ট হচ্ছে না। আজ সময়ের প্রয়োজনেই হোক আর লেখাপড়ার তাগিদেই হোক, মায়ের সেই আঁচল থেকে ভৌগোলিক সীমারেখার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকি। তখন ঠিকই মনে পড়ে আদরমাখা আঁচলের কথা। মায়ের সেই আদরমাখা আঁচল ঝড়, বৃষ্টি, রোদে ছাতা হিসেবে কাজ করে। মাগো তোমার সেই আঁচলকে অনেক অনেক মিস করছি। আঁচল নামক ছাতায় আমৃত্যু ঠাঁই দিয়ো মা।
মো. কাওছার মাহমুদ
পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তোমাদের অনেক ভালোবাসি
ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর কতই না কষ্ট করে মা সংসারটা ধরে রেখেছে, সেটার কোনো তুলনা হয় না। এইতো সেদিন মাকে বললাম, মা আমার সব বন্ধুর ক্যামেরা আছে, আমাকে একটা কিনে দিবা। মা বলল, এত টাকা কোথায় পাব বাবা! কলেজের পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরি রাত ৮টায়। ঘরে ঢুকতেই মা আমার কাছে একটা প্যাকেট এনে দিয়া খুলতে বলে। খুলে দেখি আমি যে মায়ের কাছে ক্যামেরা চেয়েছিলাম, সেটা।
২ এপ্রিল আমার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার আগে মাকে বলেছিলাম, মা আমার একটা ভালো ফোন লাগবে। মা আমাকে বলল, এখন কোনো ফোন কিনে দিতে পারব না। আমি রাগ করে মাকে বলি, থাক লাগবে না তোমার ফোন। যেদিন চাকরি করব, সেদিন কিনব মোবাইল। কিছুদিন পর দুপুরে হঠাৎ আমার প্রিয় দুলাভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, ভালোভাবে পড়িস আর পরীক্ষা কেমন হচ্ছে—এটা বলার পরেই তিনি আমাকে একটা সারপ্রাইজ দিলেন। তা হলো, ভাইয়া তোর জন্য আমি একটা ভালো ফোন কিনেছি। আমি অনেক খুশি হই, যা বলে বোঝাতে পারব না। অনেক ভালোবাসি মা-বাবা, ভাইবোন ও দুলাভাইকে।
স্বপ্নীল আকাশ
গাজীপুর।
তোমার শূন্যতা আমাকে গ্রাস করেছিল
জীবন কখনো থেমে থাকে না। তোমার শূন্যতা আমাকে গ্রাস করেছিল, কিন্তু তোমার অনুপস্থিতি আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। আমি এখন একলা চলতে পারি। কারও সান্নিধ্য পেলে কবিতাগুলো কোথায় যেন লুকিয়ে পড়ে। তুমি কি ভেবেছ, চলার পথে আমি কাউকে খুঁজে পাইনি? কেউ আমাকে সঙ্গী করে নিতে চায়নি? তোমার ধারণা ভুল। আমি মুসাফির চলছি আনমনে। আমার কোনো গন্তব্য নেই। কোথায় চলছি, কেন চলছি, কোথায় তার শেষ তা আমার নিজেরও অজানা। এই অজানা পথে কারও সঙ্গে খানিকক্ষণ চলে বিদায়ের বেলায় হৃদয়ের ব্যথা বাড়িয়ে লাভ কী বলো? একলা পথে চলার একটা গভীর মর্মস্পর্শী আনন্দ আছে, সেটা সবাই বুঝতে পারে না, উপভোগও করতে পারে না। আমি এখন ক্ষুদ্র ক্ষণ ভুলে অসীমের সঙ্গে স্বপ্ন বুনি। একাল ভুলে মহাকালে হারিয়ে যাই। যা হোক, আমার জীবনটাকে আমি চালিয়ে নিতে পারব। একটু অগোছালো হলেও সেটা নিতান্ত শুধুই আমার। মনে কি পড়ে আমাকে আর সেই রাত? যে রাতে আকাশের চাঁদ নিচে নেমে এসেছিল। তুমি বলেছিলে, আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি কথা রেখেছি। এতগুলো বছর পেরিয়েও তোমাকে আঁকড়ে রেখেছি।
তুমি যেদিন চলে গেলে, সেদিন আমার বুকের গহিনে একটা গভীর ক্ষত হলো। সেই ক্ষত কোনো দিন পূরণ হবে না। আমি কাঁদতে চেয়েছিলাম, ডুকরে ডুকরে কাঁদতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পুরুষের কণ্ঠে কান্না শোভা পায় না। গভীর ব্যথা ছাড়া চোখেও পানি আসে না। তারপরও আমার চোখকে আমি বোঝাতে পারিনি। আমার হৃদয়ের হাহাকার শুনে আমি নিজেই চমকিত হয়ে গিয়েছিলাম। ফিরে আসা সম্ভব না। যে তোমাকে যতই ভালোবাসুক, আমার কাছে আমার ভালোবাসার কাছে সেটা সমুদ্রের বুকে শিশিরবিন্দুমাত্র। তোমার যদি একটা স্থিরচিত্র থাকত আমার কাছে। থাক, কী প্রয়োজন? মনের মাঝে অবিরত ক্ষণে-অক্ষণে তোমারই চলচ্চিত্র ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথম এবং শেষ কবে তোমাকে দেখেছি, সেটাও এখন এলোমেলো। তবে আমার ভালোবাসার শুরু থাকলেও শেষ নেই। আমি যদি এখনো তোমাকে ভালোবাসি, আকাশে পূর্ণ শশী উদীত হলে যদি সেখানে তোমার মুখ কল্পনা করি, যদি গভীর রাতে জেগে উঠে ভীষণ শূন্যতা অনুভব করে গোপনে অশ্রু বিসর্জন দিই, যদি তোমার ভালোবাসার প্রমাণে সম্মুখ সমরে জীবন বাজি রাখি, তাহলে কি অনেক বেশি অপরাধ করে ফেলব? অপরাধ হলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। ভালো থেকো, তোমার চন্দ্রমুখে বিরামহীন হাসি জাগিয়ে রেখো।
সেলিম রেজা
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: adhuna@prothom-alo.info ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA. খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’