
প্রিয় দাদা
তোমাকে আজ খুব মিস করছি। সেই ছোটবেলা তোমার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। সত্যি দাদা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কত দিন দেখি না তোমাকে। ছয় মাস আগে যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম, সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তোমার সেই মায়াভরা মুখ অসুখের কারণে কেমন ম্লান হয়ে গেছে। প্রথমে তুমি আমাকে চিনতে পারোনি। অসুখে তুমি আগের সবকিছু ভুলে গেছ, দাদা। আমার এখনো ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে চায়ের দোকানে বসে চা খেতে। দাদা, সারা দিন শুয়ে থাকতে নিশ্চয় তোমার খুব কষ্ট হয়। আজ আমি অনেক দূরে, তা নাহলে তোমাকে নিয়ে হাটে ঘুরতে যেতাম। তুমি তো মোবাইলে কথা বলতে পারো না। তাই আমার মনের কথা ‘মনের বাক্সে’ পাঠিয়ে দিলাম।
তোমার আদরের নাতি
কাউছার
দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি।
কলেজজীবনের প্রিয় বন্ধুরা
কয়েক দিন আগে শ্রাবণের এক সন্ধ্যায় তোমাদের খুব মনে পড়ে গেল। অনেক দিন পর অতীত স্মৃতি মনের বীণায় আওয়াজ তুলল। মনে পড়ে বন্ধুরা, সেই জ্যোৎস্না মাখানো বাঁশঝাড়, নদীর পাড়, যেখানে বসে স্নিগ্ধ বাতাসে ভরাতাম বুক। হ্যাঁ রে, ধরলা নদীর পাড়ের সেই শানবাঁধানো ধনুকের মতো নারকেলগাছটা কি এখনো আছে, আড্ডা কি এখনো জমে? চাঁদ কি আগের মতো তার স্নিগ্ধ আলোয় বন্ধুদের ম্লান মুখ উজ্জ্বল করে?
শহরের এ আবদ্ধ জীবন বড় নিষ্ঠুর আর কৃত্রিম। সারা দিন পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাখির মতো যখন বাসায় ফিরি একে একে শরীরের সমস্ত ধুলো-বালি ঝেড়ে ফেলি, শুধু তোমাদের কথা ঝেড়ে ফেলতে পারি না।
বন্ধুরা, তোমরা কি এখনো আগের মতোই জ্যোৎস্না যাপন করতে আসো নদীর পাড়ে বাঁশঝাড়ের কাছে। হৃদয়ের কোণে সেই দিনগুলো শিশুর দোলনার মতো দোল খায়। রাতভর শরৎ আর শ্রাবণের জ্যোৎস্নায় আড্ডা জমাতাম। বাঁশবাগানে আশ্রিত পাখির দল আমাদের বন্ধুত্বে ঈর্ষান্বিত হয়ে কানাকানি করত। কেউ কেউ ভয়ংকর ডাক দিয়ে আমাদের আড্ডা ভাঙাতে চেষ্টা করত। তবুও আমরা একে অপরের দুঃখ-সুখের অনুভূতির সঙ্গী হতাম। একে অন্যের ব্যথা, সুখ খুব কাছ থেকে স্পর্শ করতাম, গায়ে মাখতাম, দূর করার চেষ্টা করতাম। আমার কৃতজ্ঞ চিত্তে মনে পড়ে বন্ধুরা, তোমাদের নানা দিক থেকে উপকারের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা। আজ খুব ভাবছি আর ভাবছি। মনে প্রশ্ন জাগে আর কি ফিরে পাব সে জীবন?
যেখানেই থাকো, ভালো থাকো, সুস্থ থাকো।
তাজুল
কীভাবে পাল্টে গেলি
একজন মানুষের কাছে জীবনের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি থাকে শৈশবকে ঘিরে। আমারও ব্যতিক্রম নয়। আর সেই শৈশবের কথা মনে পড়লে তোর কথা মনে পড়ে। কেননা আমার শৈশবটা যে তোকে ঘিরে! সারা দিন খেলাধুলা, দুষ্টুমি, খুনসুটিতে মেতে থাকা সময়টা খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে খেলায় আমি তোর পাশে না থাকলে তুই আর খেলতেই চাইতি না। আজ আর সেই তুই নেই। অনেক বড় হয়ে গেছিস। আর তার সঙ্গে বদলে গেলি সব ভুলে। কীভাবে পাল্টে গেলি সব ভুলে? আমাকে অন্তত ভুলে যাওয়ার উপায়টা একবার ফিরে এসে বলে দিয়ে যা! আমি যে আর পারছি না...।
হাবিবুর রহমান
কক্সবাজার
ঋতুগুলোও চলে যাবে, তোমার মতো
খুব একা একা লাগছে। বর্ষা চলে গেছে। শরৎও চলে যাবে। এভাবে বাকি ঋতুগুলোও চলে যাবে, তোমার মতো। পরিবর্তিত হবে আকাশের নীল বর্ণ, তোমার মতো। ভালোবাসা ভুল, নাকি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম—এ রহস্য উদ্ধার করতে করতেই অনেকটা সময় চলে যাবে আমার জীবন থেকে। বর্ণচোরা শব্দটি বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে আমার হৃৎপিণ্ডটাতে গলে গলে পড়বে। আমি এক মহাসমুদ্র পাড়ি দেব তোমাকে ছাড়া। একা হয়ে যাব ধীরে ধীরে। আগের চেয়েও আরও বেশি একা। শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভিজব মাঝে মাঝে। সব সময় ভিজব না। কেননা এতে আকাশ থেকে ঝরে পড়া নিষ্ফল বৃষ্টি আমার মনের বেগুনি রঙের আবাদি ফসলে নীল ঢেলে তাকে আরও গাঢ় রং দিয়ে দেবে। তুমি হবে এক পশলা বৃষ্টি আমার চোখে। সারা দিন ঝরে ঝরে পড়বে। কত ইচ্ছা আর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমি প্রতিবারের মতো তোমার দ্বারে যাব। তুমি আমাকে বারবার ফিরিয়ে দিয়ো। তুমি আমার জীবনের চির বর্ষা হয়ে যেয়ো। তুমি আমার গতানুগতিক ভাবনার বালির বাঁধ হয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আমাকে আঁকড়ে ধরে থেকো নিজেও ভাবনা হয়ে গিয়ে। আজ আমার নীল বর্ণের নদীটায় জোয়ার এসেছে। ভাটায় কখন ফিরবে ও পানি, জানি না। জানি না অনেক কিছুই। জানতেও চাই না। অর্থহীন ভালোবাসার নীল সমুদ্রের ঢেউ হয়ে কিংবা ছোট্ট অ্যাকুরিয়ামের ছোট্ট ভাবনার সীমিত জগতে আমার বিশাল অস্তিত্বকে বন্দী করব আমি। ভুবনভোলানো হাসিটা আর পিছু ফিরে চেয়ে দেখব না। চেয়ে দেখব না জোছনার ফুলের দিকে যা তুমি আর আমি একসঙ্গে একই সময়ে পূর্ণিমার চাঁদ বদনে দেখেছিলাম। আর কখনো অগোছালো চিঠিও লিখব না। কেননা যাওয়ার আগে গুছিয়ে কথা বলতে শিখিয়ে দিয়ে গেছ। আর তার সঙ্গে শিখিয়ে দিয়ে গেছ কীভাবে কান্নাকে ভালোবাসতে হয়।
সোলায়মান শিপন
কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
তুমি এসো সানন্দে
তোমাকে নিয়ে আমি আমার নিজের মাঝে একটা জগৎ তৈরি করেছি। যেখানে তুমি সব সময় থাকো। তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য এখানে আমাকে ফোন করতে হয় না; কিংবা তোমার একান্তেও যেতে হয় না। এখানকার নিয়মগুলো খুব সুন্দর, বাস্তবের মতো নয়। আমার যখন ইচ্ছা, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারি, তোমায় কাছে ডাকতে পারি। তুমিও সানন্দে এসে ধরা দাও আমার বাহুডোরে। দুষ্টামি হয়, হয় খুনসুটি, হাসি হয় খিলখিলিয়ে, মান-অভিমানও হয় একটু একটু।
এখানে তুমি যখন-তখন আমার ওপর অকারণ রাগ করো না, শুধু শুধু কষ্টের কালো মেঘের ঘনঘটায় আমার চোখ থেকে অশ্রু নামাও না। এখানে আমি প্রাধান্য বিস্তার করি, যেটা বাস্তবে কখনোই পারি না। অকারণ অজুহাতে তোমায় ধমক লাগাই। আবার গোমড়ামুখী হয়ে বসে থাকা তোমাকে কাছে টেনে তুলতুলে গালে আদর দিয়ে তোমার অভিমান ভাঙাই। আমি-তুমি মিলে ভবিষ্যৎ সাজাই। রাতের পর রাত জেগে গল্প করি। তোমার ইচ্ছের বাহানায় আকাশের চাঁদটা এনে তোমার হাতে ধরিয়ে দিই। তুমি এক ফুঁ দিয়ে আবার তা উড়িয়ে দাও। এভাবেই থাকে আমার কল্পনার সংসার। আমিও এই সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ।
মো. মিজানুর রহমান
রসায়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।
ভালো থাক তুই
কেমন আছিস তুই। জানি, অনেক ভালো আছিস। কীভাবে ভুলে গেলি আমাকে। আমি তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। তুইও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি। তবে কেন আজ আমাদের মধ্যে এত দূরত্ব। কীভাবে তুই সেদিনের কথাগুলো ভুলে গেলি, একসঙ্গে সিনেমা দেখা, পার্কে বসে আড্ডা দেওয়া, একসঙ্গে কলেজে যাওয়া, প্রাইভেট পড়া কীভাবে ভুলে গেলি তুই। জানিস, তোকে এতটাই ভালোবাসতাম, তোকে নিয়ে এতটাই ভাবতাম যে একদিন রাস্তা পার হচ্ছিলাম, হঠাৎ তোর ফোন, তোর ফোন আমার এতই ভালো লাগত যে, তোর ফোনটা খুশিতে রিসিভ করে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিলাম। হঠাৎ ওপাশ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসে কখন যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে বুঝতেও পারিনি। তোকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কত দিন যে ব্রাশ না করেই সকালের খাবার খেয়েছি, নিজেও জানি না। আমার এখনো রাত ১২টায়, ২টায়, ৪টায় ঘুম ভেঙে যায়। কেন জানিস, কারণ এই সময়গুলোতে তুই আমাকে ফোন দিতিস। আজ সব ভুলে গেছিস তুই। নতুন অনেক বন্ধু পেয়েছিস, তাদের সঙ্গেই এখন তোর ফোনে কথা হয়। ভালো থাক তুই, আগেও চেয়েছিলাম, এখনো চাই। আমি তোর যোগ্য ছিলাম না। তাই হয়তো ভুলে গেছিস। ভালো থাকিস।
সোহাগ
নন্দীগ্রাম, বগুড়া
মনের বাক্স
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: adhuna@prothom-alo.info ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA.
খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’