মনের বাক্স
মনের বাক্স

মনের বাক্স

অভিনন্দন নিক্কণ

জীবনের সব চাওয়া পূর্ণতা পায় না, এটা সত্য। কিন্তু তোমার চাওয়াটা তো খুবই ছোট। সেই চাওয়া পূরণ করতে তোমার যে লড়াই করতে হলো, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। তোমার চারুকলায় পড়া নিয়ে যে বাধার সম্মুখীন তুমি হয়েছ, তার কষ্ট বর্ণনাতীত। প্রিয়জনেরা কেউ তোমার পাশে ছিল না, আমার সমর্থনটা তুমি আশা করেছিলে। আর সেই আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছিলাম, তা–ও তুমি থেমে যাওনি। সব বাধা উপেক্ষা করে তুমি চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলে। কঠিন সময় তোমাকে পার করতে হয়েছে একা। এখন আমিও বুঝতে পারি তুমি সেদিন ঠিক কাজটি করেছিলে। তোমার ইচ্ছাশক্তি আজ আমাকে মুগ্ধ করে। এই প্রথম জাতীয় পর্যায়ে তোমার শিল্পকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে, এটা তোমার জন্য শুধু একটা প্রদর্শনী না। তোমার ইচ্ছারও জয়। আমি আনন্দিত, অভিভূত, কিছুটা লজ্জিত। অভিনন্দন তোমাকে। তোমার এই জয়যাত্রা সুদূরের পথে এগিয়ে যাক, এই শুভকামনা রইল।

নিপা, নারায়ণগঞ্জ।

তুমি কেমন আছ?

আমার কষ্টগুলো লিখতে গিয়ে দেখলাম সেগুলো আড়ালে রাখাই ভালো। আমি তো বেশ আছি তোমার স্মৃতিগুলো হাতড়ে। তোমার বলা সেদিনের কথাগুলোকে নৌকা বানিয়ে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে, আমি এখন সারাক্ষণ হাসিমুখে আছি। শুধু জানতে ইচ্ছা করে, তুমি কেমন আছ? আগুন, জানি না তুমি অধুনা পড়ো কি না! তবে যদি কোনোকালে এই লেখা তোমার চোখে পড়ে, তাহলে প্রয়োজন মনে করলে উত্তর দিয়ো।

অর্পিতা মীম, বারপুর, বগুড়া

ভালোবাসি প্রিয় স্যার

প্রিয় সুলতান মাহমুদ স্যার, খুব মনে পড়ে আপনাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক যে এতটা আন্তরিক ও মানবিক হতে পারেন, আমার জানা ছিল না। আপনার ক্লাস কোনো দিন মিস দিইনি। আপনার উপন্যাস পড়ানোর সময় মনে হয় যেন আমিই উপন্যাসের একটা চরিত্র। করোনাভাইরাসের কারণে ক্লাসরুমে বসে আপনার লেকচার শুনতে পারছি না। খুব মন খারাপ হচ্ছে। একটা ঘটনা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আমি যখন হন্যে হয়ে টিউশনি খুঁজছি, তখন আপনিই আমাকে প্রথম একটা টিউশনি জোগাড় করে দেন। আপনার মতো স্যার পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। দোয়া করি সব সময় ভালো ও সুস্থ থাকেন।

ফরিদ মিয়া, বাংলা বিভাগ, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ।

নীলিমা কি জাহানারা?

পাশাপাশি ছাদ। আমি রোজ ছাদে উঠতাম নীলিমার জন্য। বিকেলের আলোয় নীলিমাকে সৌন্দর্যের দেবী লাগত। নীলিমা ছাদে আসত কিছুটা সময়ের জন্য, হয়তো আমার জন্য, হয়তো তার নিজস্ব বাসনা নিয়ে। আমি নীলামাকে ভালোবেসেছিলাম যখন হেমন্ত আসে। ও আমাকে কতটা ভালোবেসেছিল, আমার জানা নেই। জগতের সবচেয়ে রহস্যময় কেউ থাকলে, সে আমার নীলিমা। কখনো বোঝা যায় সে আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে, কখনো মনে হয় আমাকে শুধু ঝুলিয়েই রেখেছে। কখনো বাসায় এসে হাতে হাত চেপে ধরে রাখত, কিছু বলত না, আমি শুধু বলে যেতাম ভালোবাসি। সবার আড়ালে খুনসুটি, হাতের উষ্ণ স্পর্শ ভালোবাসাকে সায়ানাইড করে ফেলে। প্রচুর ঝগড়া, মনোমালিন্য, আবার মিলে যাওয়া। তবু আমি জানি না, সে আমাকে ভালোবাসত কি না।

আমাদের ভালোবাসা গভীরতম হয় করোনার দুঃসময়ে। তারপরও মনে হয় নীলিমা কি জহির রায়হানের শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাসের সেই জাহানারা?

আমি তোমাকে প্রচণ্ড রকম ভালোবাসি নীলিমা।

রুদ্র, মিরপুর, ঢাকা।

২২ বছর শেষে

কদিন ধরে চিন্তা করলাম, পরিবারের কেউ না থাকলে রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া কেন এত বিরক্তিকর আমার কাছে? মনে হয়, যেন খাবার খেয়ে পেট ভরে না, স্বাদ লাগে না, আবার একই খাবার ঘরে বসে খেতে কী মজা!

পরে মনে হলো, ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি আব্বু কখনো আমাদের রেখে টংঘরে বসে চা, পান, সিগারেট কিছুই খাননি। যেখানেই খাব, সবাই একসঙ্গে।

সেই আড়াই বছর বয়স থেকে আব্বুকে দেখেছি গ্রামে থেকে ব্যবসা করতে। আমাদের ঢাকায় রেখেছেন সর্বোচ্চ সুযোগ–সুবিধা দিতে। আমাদের কখনো অনুভব করতে দেন না, তিনি দূরে আছেন। এত বছর পর আজ তাঁর কানে সমস্যা, চর্মরোগ, হার্টের সমস্যা, কোমরব্যথা আরও কত কী! আব্বু এখন আর প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় আসতে পারেন না। কারণ, ডাক্তার তাঁকে ভ্রমণ করতে মানা করে দিয়েছেন। তবে ঢাকায় এলে আর গ্রামে যেতে চান না, আজ না কাল বলে বলে কতশত মিথ্যা অজুহাত তাঁর মধ্যে। কোলেস্টেরল আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে শরীর শুকিয়ে যায়। বয়স বাড়ছে, আর কমছে তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষমতা। এত সমস্যার পরও তাঁর মুখে শুনি, কোনো টেনশন নেই, ভালো আছি।

তাসনোভা ইসলাম, পশ্চিম তল্লাবাগ, ঢাকা।

খালিশপুরের দিনগুলো

আমার শৈশবের প্রতিবেশীরা, আপনাদের মনে পড়ে ভীষণ। আর মনে হলেই হারিয়ে যাই অতীতের ফেলে আসা দিনগুলোয়। এই সময়ের ইট-পাথরের দেয়ালে ঘেরা জীবনে প্রতিবেশীর সঙ্গে সখ্য কতটুকু হয়! মফস্বল শহরের মতো নিশ্চয়ই না।

ছোটবেলায় আপনাদের সঙ্গে যখন খালিশপুরে (খুলনা) একই পাড়ায় ছিলাম, কখনো মনেই হতো না, এখানে আমাদের কোনো আত্মীয় নেই। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় সবাই যেন একে অপরের একান্ত সঙ্গী। চাঁদরাত, ঈদের দিন দল বেঁধে বাসায় বাসায় দাওয়াত খেতে যাওয়া, বিকেলের খেলাধুলা, সন্ধ্যার পর খালাম্মাদের জট পাকিয়ে গল্প, সবার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে পিকনিক, আহা, কত মধুর সেই স্মৃতি!

কিছু স্মৃতি থাকে, যা মানুষ কখনো ভোলে না। আমার সেই হারিয়ে যাওয়া প্রিয় প্রতিবেশীরাও স্মৃতিতে আজীবন থাকবে জাগরূক।

জান্নাতুল ফেরদৌস, গ্রিন রোড, ঢাকা।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

ই-মেইল: adhuna@prothomalo.com, ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘মনের বাক্স’