
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সচিবালয় (মহাকরণ) ঐতিহাসিক রাইটার্স বিল্ডিং থেকে সরে গেল হুগলি নদীর অন্য পারে হাওড়ার মন্দিরতলায়। কলকাতা আর হাওড়া দুটি পাশাপাশি শহর। জেলা ভিন্ন। হুগলি নদী এই দুই শহরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। মহাকরণ সরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অবসান ঘটল ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের।
২৩৩ বছরের পুরোনো এই ঐতিহাসিক রাইটার্স বিল্ডিং। আর নতুন মহাকরণ ভবন ১৫ তলার ‘নবান্ন’ একেবারেই এ কালের। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে হাওড়ার মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ীদের জন্য স্থাপিত হয়েছিল এটি। নাম ছিল এইচআরবিসি ভবন। মজার ব্যাপার বিরোধী দলে থাকার সময় এ ভবনটি নির্মাণের প্রতিবাদ করেছিল তৃণমূল। গত ৫ অক্টোবর শনিবার দুপুরে নতুন এ সচিবালয়ের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বসছেন নবান্নের ১৫ তলায়। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে পুরোনো মহাকরণের সংস্কারের জন্যই সরানো হয়েছে সচিবালয়।
অনেকেই ভবন স্থানান্তরের পক্ষে রাজ্য সরকারের যুক্তি মানতে পারছেন না। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে এভাবে সচিবালয় সরিয়ে নেওয়ায় তারা হতবাক। বিরোধীরা মনে করেন সচিবালয় রাইটার্স বিল্ডিং থেকে সরে যাওয়ায় মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই রাইটার্স বিল্ডিংয়েই কর্মরত কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টকে হত্যার জন্য এসেছিলেন তিন স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনয়, বাদল ও দীনেশ। তাদের নামে এলাকার নাম হয় বিনয়, বাদল দীনেশবাগ বা বিবাদীবাগ।
আগে এই রাইটার্স বিল্ডিং চত্বরের নাম ছিল ট্যাংক (পুকুর ) স্কয়ার। তারপর হয় লর্ড ডালহৌসির নামে ডালহৌসি স্কয়ার। তারপরে বিবাদীবাগ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক ও করণিক কাজের জন্য যুক্তরাজ্য থেকে আসা ক্লার্ক (কেরানি) বা রাইটার্সদের জন্য এখানে প্রথম ভবন তৈরি হয়। এ জন্যই এই ভবনের নাম হয় রাইটার্স বিল্ডিং। ১৭৭৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৭৮০ সালে। তবে এই রাইটার্স বিল্ডিংয়ের পাশে আজ যেখানে কলকাতা জিপিও রয়েছে প্রথম রাইটার্স বিল্ডিং নির্মিত হয়েছিল সেখানেই। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেখানে কয়েকটি কটেজ তোলে সেই ১৬৯০ সালে। ১৬৯৫ সালের ২৫ জুন এক ভয়ংকর ঝড়ে সেই কটেজগুলো ভেঙে পড়ে। তারপর বর্তমান রাইটার্স বিল্ডিংয়ের জায়গায় প্রথমে ১৭০৬ সালে ওঠে একটি একতলা ভবন। ১৮২১, ১৮৮৯ এবং ১৯০৬ সালে এর সম্প্রসারণ করা হয়।
আজকের মহাকরণ ১০ একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে। এখানে কর্মী ছয় হাজার। আছে ১৩টি চারতলা ভবন। অন্যদিকে একেবারে অত্যাধুনিকভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে নতুন মহাকরণকে। ঝা-চকচকে ভবন। করপোরেট ধাঁচে সাজানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীর কক্ষ। পুরোনো মহাকরণে প্রেস কর্নার ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষের কাছে। এবার তা করা হয়েছে দোতলায়। মুখ্যমন্ত্রী বসছেন ১৫ তলায়। আগে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অফিসকক্ষ থেকে বের হয়েই মুখোমুখি হতে পারতেন সাংবাদিকদের। এখন থেকে আর সেই সুযোগ থাকছে না। এতে করে সাংবাদিকদের সঙ্গে দূরত্ব একটু বেড়েই গেল।