পাঠক হাজির

মাটির ব্যাংক

.

ছোটবেলা থেকে মাটির ব্যাংকে টাকাপয়সা জমানোটা আমার স্বভাব। তবে ব্যাংক পূর্ণ হওয়ার আগেই যেকোনো তুচ্ছ প্রয়োজনে ভেঙে ফেলাটাও আমার আর এক স্বভাব।
এই দুই স্বভাবের সংঘর্ষে কখনো বড় অঙ্কের টাকা জমানো আমার দ্বারা সম্ভব হয় না।
বন্ধু সুরজিত আর আমি একটা নিয়ম মেনে চলি বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ। সেটা হলো কোনো ভালো খবর যার থাকে, তাকে অবশ্যই খাওয়াতে হবে। যেমন কদিন আগে আমার বিয়ে প্রায় ঠিকই হয়ে গিয়েছিল। আমি এই উপলক্ষে তাকে খাওয়ালাম। এরপর বিশেষ কারণে সেটা ভেঙে গেলে আফসোস করলাম অর্থ অপচয়ের।
যাই হোক, সেদিন আমার একটি মাটির ব্যাংক ভাঙলাম। বন্ধুর সামনে টাকাপয়সা একত্রে গোনার মজাই আলাদা বলে টাকাপয়সাগুলো পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম। এদিকে তাকে ফোন দিয়ে বললাম একটা রেস্তোরাঁয় আসার জন্য। দুজন রেস্তোরাঁয় বসলাম। আমার পকেটের অবস্থা স্বাস্থ্যকর বলে জানাতেই সে ভালো ভালো খাবারের অর্ডার দিয়ে দিল। খাওয়া-দাওয়া শেষে আইসক্রিম খেলাম। তখন তো আর জানি না, কী বিপর্যয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বেয়ারা এসে বিল দিয়ে গেল। বিলের পরিমাণ ৮৫৫ টাকা। দেখে সুরজিত একটু হতাশ হলেও আমি প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মুচকি হাসলাম।

পকেট থেকে এক গাদা টাকা আর পয়সা টেবিলের ওপর রেখে গণনা শুরু করলাম। সুরজিত গুনতে সাহায্য করল। যত গণনা এগোচ্ছে, টেনশন তত বাড়ছে। সর্বসাকল্যে ৬২৫ টাকা হলো। এদিকে যেসব বেয়ারা কৌতূহলবশত আমাদের টেবিলের সামনে ভিড় জমিয়েছিল, তারা আড়চোখে আমাদের দেখা শুরু করল। লজ্জার মাথা খেয়ে সুরজিতের কাছে ধার চাইলাম। কিন্তু আমার ওপর এতটাই আস্থা তার, সে মানিব্যাগ আনারই দরকার মনে করেনি। কী আর করা। আমি তাদের জিম্মায় থেকে সুরজিতকে বাইরে পাঠালাম টাকা আনতে। সে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে বাকি টাকা নিয়ে এল এবং আমাকে উদ্ধার করল। এর পর থেকে হোটেলে ঢোকার আগে নিজের পকেট নিজে যাচাই করে নিই।
সঞ্জয় কুমার ভৌমিক
বসুন্ধরা আ/এ, শ্রীমঙ্গল