মেয়র পদে নারী নেই, এটা নারী আন্দোলনের ব্যর্থতা

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এ সাধারণ এবং সংরক্ষিত আসনের মধ্যে কোনো ধরনের বৈষম্যের কথা উল্লেখ নেই। তার পরও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত নারী প্রার্থীদের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। প্রায় এক যুগ আগে হাইকোর্ট বলেছিলেন, সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনের পর নারী কাউন্সিলরদের সঙ্গে কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। তবে হাইকোর্টের সেই নির্দেশনার তেমন সুফল মেলেনি। এ ছাড়া সাধারণ আসনের প্রার্থীকে একটি ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হতে হলেও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীকে তিনটি ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হতে হচ্ছে। এটাকেও একধরনের বৈষম্য বলে। সাধারণ আসনের পুরুষ কাউন্সিলরসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে নারীদের বাধা পাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে নারী নেত্রী ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিয়ে কর্মরত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মানসুরা হোসাইন

সালমা খান
সালমা খান

সালমা খান
জাতিসংঘের সিডও (নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ) কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নারীরা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। সাধারণ আসনেও নির্বাচনের সুযোগ আছে। এর বাইরে সংরক্ষিত আসনের বিশেষ সুযোগ তো আছেই। তাই বলা যায়, ‘আমরা আইন বা অবকাঠামোগত দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কোনো দেশের চেয়েই পিছিয়ে নেই। তবে বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। এবারের নির্বাচনে যে নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সংখ্যার দিক থেকে একেবারে কম নয়। তবে প্রশ্ন হলো এই নারীদের মধ্যে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা কতটুকু কাজ করতে পারবেন? এ ক্ষেত্রে নারী আন্দোলনেরও ব্যর্থতা আছে। যে নারীরা এগিয়ে আসছেন, সেই নারীদের মূলধারায় আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয় না। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরেও নির্বাচিত নারীদের ভয়েস রেইজ করতে হবে। পুরুষ কাউন্সিলর সভায় যেতে বারণ করলে উল্টো প্রশ্ন করতে হবে, কেন তিনি যাবেন না। এ ছাড়া আইন, অবকাঠামো থাকার পরও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ কেন আরও বাড়ছে না, কেন তাঁরা কাজ করতে পারছেন না, তা নিয়ে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে।

মালেকা বানু

মালেকা বানু
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৯৭০ সাল থেকে নারীর মানবাধিকার রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে সবার মতো আমাদের কাছেও এটি হতাশাজনক যে ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা মেয়র পদপ্রার্থী একজন নারীকেও দেখতে পাচ্ছি না। এটা নারী আন্দোলনেরই ব্যর্থতা। এ ক্ষেত্রে মনে প্রশ্ন আসে, যোগ্য নারী কি ছিলেন না, যিনি মেয়র পদে প্রতিযোগিতা করতে পারতেন? এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বলা হয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন নির্দলীয়। কিন্তু আমরা সবাই জানি, দলের সমর্থন ছাড়া এখানে কেউ কিছু করতে পারেন না। এ ছাড়া সাধারণ আসনে যে নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সেই নারীদেরও বেশির ভাগ দলের সমর্থন পান না। তাই দলের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। আর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।
নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছেন। তবে রাজৈনতিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি দৃশ্যমান নয়। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী ও কার্যকর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক নারী আসতে ও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারতেন।

রোখসানা খন্দকার

রোখসানা খন্দকার
খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক
স্থানীয় সরকারের সংরক্ষিত নারী আসনের বৈষম্য কমানোর জন্য নারী কাউন্সিলরদের সচেতনতার বিষয়টিতে আমি বেশি গুরুত্ব দিই। সাধারণ ও সংরক্ষিত আসন নিয়ে আইনে কোনো বৈষম্য নেই। সাধারণ আসনের পুরুষ কাউন্সিলর নিজের পছন্দের লোকদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেন। নারী কাউন্সিলরদের কাজ না দেওয়ার জন্য নিজেরাই আইন বানিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত নারী প্রার্থীদের সচেতনতা বিশেষ জরুরি। তাঁরা সচেতন হলেই তাঁদের প্রতি বৈষম্য হলে বুঝতে পারবেন এবং প্রতিবাদ করতে পারবেন। খান ফাউন্ডেশন যেসব এলাকায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছে, সেসব এলাকায় নির্বাচিত নারীরা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারছেন।