* চার বছর ধরে একটা ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। একবার চিন্তা করে দেখুন, এখানে কত শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে! এই ফ্লাইওভারের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে তাঁরা কাজ করবেন কোথায়? খাবেন কী? পরবেন কী? মনুষ্যত্বের দিক বিবেচনা করে এই ফ্লাইওভারের কাজ চালিয়ে নেওয়া হবে
যুগের পর যুগ।
* একসময় মালিবাগ মোড়ে ছিনতাইয়ের কথা শোনা যেত। ফ্লাইওভারের কাজ চলায় এখন রাত-দিন নিরাপত্তারক্ষীরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ফলে এখানে ছিনতাই কমে গেছে। একবার চিন্তা করে দেখুন, এই ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হয়ে গেলে কি আবারও ছিনতাই-দুর্ঘটনা বাড়বে না? এমন ভাবনা থেকেই অনেক ধীরগতিতে এগোচ্ছে এর কাজ।
* এখানের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সবাই খরগোশ ও কচ্ছপের গল্পটি থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তাঁদের মতে, দ্রুত কোনো কাজ করাই ঠিক নয়। তাহলে খরগোশের মতো হেরে যেতে হবে। তাই কাজটা কচ্ছপগতিতে করতে চাইছেন।
* ইট-পাথরের এই শহরে কাদামাটির ঘ্রাণ পাওয়া বড়ই দুষ্কর। গ্রামের কথা ভেবে অনেকেই নস্টালজিক হয়ে যান। আর নয় কোনো নস্টালজিয়া। নস্টালজিক প্রকৃতিপ্রেমী যাঁরা কাদামাটির ঘ্রাণ খোঁজেন, তাঁদের জন্য আছে মালিবাগ-মৌচাক। একবার এসে ঘুরে যান, মাটির ম-ম করা ঘ্রাণ আপনাকে পাগল করে দেবে।
* ঢাকার স্থানীয় ছেলেমেয়েরা সাঁতার শিখতে পারে না পর্যাপ্ত পুকুর বা সুইমিং পুলের অভাবে। মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে সারা বছরই পানি জমে থাকে। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা যেন নির্বিঘ্নে সাঁতার শিখতে পারে এবং সাঁতার প্রতিযোগিতায় বিশ্বে বাংলাদেশের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখাতে পারে, সে জন্য এই ফ্লাইওভারের কাজ যুগের পর যুগ নির্মাণাধীনই রাখা উচিত।
* জাতি হিসেবে আমরা অলস। ঢাকাবাসী আরও অলস। ফাস্টফুড জাতীয় বিভিন্ন খাবার খেয়ে তাঁরা বয়সানুপাতে স্বাস্থ্যবান হলেও শরীর ফিট রাখতে ব্যায়াম করেন না। বর্তমান মালিবাগ-মৌচাক রাস্তাটি ফ্রি ব্যায়ামাগার হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে রিকশায় ঝাঁকি খেতে খেতে পথ চললে ব্যায়ামের আর প্রয়োজন হয় না।
* তিস্তার পানির অভাব পূরণ করতে পারে মালিবাগ-মৌচাকের রাস্তা। কৃত্রিম এই হ্রদে গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতে যে হারে পানি জমে থাকে, মমতাদি কোনো দিন মালিবাগ ভ্রমণে এলে বলতে পারবেন, ‘তোমরা তিস্তা নিয়ে যাও, মালিবাগ দিয়ে দাও।’
* ফ্লাইওভার হওয়ার আগে এই রাস্তায় অনেক যানজট হতো। যানজটের কথা বলে রিকশা ও অটোরিকশাওয়ালারা ওদিকের ভাড়া বেশি হাঁকাতেন। এখন এই ব্যাপারটা অনেকটা অনুকূলে চলে এসেছে। রিকশাওয়ালা ও অটোরিকশাওয়ালারা এখন ভাড়া তো বেশি চানই না, মালিবাগের নাম শুনলেই বলেন, ‘মামা, মাফ কইরা দ্যান।’
* সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্ক-রেস্তোরাঁর চেয়ে মালিবাগ-মৌচাকে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় যুগলেরা প্রেম করতে পারে কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়া। পার্ক-রেস্তোরাঁ-টাইপ কোনো জায়গায় প্রেম করলে আত্মীয়স্বজন দেখে ফেলার ভয় থাকলেও মধ্যবয়সী লোকেরা এই রাস্তা এড়িয়ে চলেন। তাই এই রাস্তায় প্রেম করতে কোনো ঝুঁকি নেই। প্রেমিক-প্রেমিকাদের সুবিধার কথা ভেবে এই ফ্লাইওভারটি এখনো সম্পন্ন হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও হবে কি না, বলা যাচ্ছে না।
* ঢাকা শহর ঘনবসতিপূর্ণ। রাস্তার তুলনায় যানবাহন অনেক বেশি। মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণাধীন থাকায় এখানে গণপরিবহনগুলো আসতে চায় না। রাস্তার ওপর চাপ কমান, হেঁটে হেঁটে বাড়ি
যান-জাতীয় বাক্যই এই বেহাল ফ্লাইওভারের মূল প্রতিপাদ্য।