Thank you for trying Sticky AMP!!

শাড়ি

আজ বিশ্ব মা দিবস। সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। মা দিবসকে কেন্দ্র করে বন্ধুদের পাঠানো লেখা ছাপানো হলো এ সংখ্যায়

.

শাকিল ব্যস্ত রাস্তার পাশের ফুটপাত ধরে ব্যস্তভাবে হাঁটছে। তার চোখ-মুখ উৎফুল্ল। অনেক দিন পর সে নিজের একটা ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছে। হাতের প্যাকেটটার দিকে তাকাল সে। এটার মধ্যে একটা জামদানি শাড়ি আছে। এটা তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটার জন্য।
স্বর্ণার সঙ্গে শাকিলের বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর হতে চলল। এই তিন বছরে অনেক কিছুই পাল্টেছে। শাকিল ছোট্ট একটা চাকরি করে, টানাটানির সংসার। বিয়ের আগে সে মাকে নিয়ে থাকত। স্বর্ণা এসেই বলতে শুরু করল, টানাটানির সংসারে মাকে রাখা যাবে না। মায়ের জন্য সংসারের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। শাকিল স্বর্ণাকে খুব ভালোবাসে, ভালোবাসে মাকেও। সে কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারত না। মায়ের সামনেই স্বর্ণা রোজ চেঁচামেচি করত, মাকে অপমান করত। মা নীরবে কাঁদতেন। শাকিলকে কাছে ডেকে বলতেন, আমাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দে বাবা।
স্বর্ণার চেঁচামেচি, বিশেষত মাকে অপমান করার ব্যাপারটা সহ্য না করতে পেরে একদিন শাকিল মাকে একটা সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। মা সেদিন হেসে বিদায় নিয়েছিলেন, কিন্তু শাকিল ঠিকই তার চোখের কোনায় জল দেখতে পেয়েছিল।
সেদিন থেকে শাকিল আর স্বর্ণার সংসারে কোনো চেঁচামেচি নেই। স্বর্ণা আপন মনে সংসার করে। শাকিলও অফিস-বাসা নিয়ে নিজের মতো থাকে। মায়ের খোঁজ আর খুব একটা নেওয়া হয় না।

কিছুদিন পর শাকিল আর স্বর্ণার বিবাহবার্ষিকী। স্বর্ণা দাবি করেছে তাকে একটা শাড়ি কিনে দিতে হবে। শাকিল হেসেছে। তার এই অল্প বেতনে বিলাসিতার সুযোগ নেই। তবে সে বহুদিন ধরে একটা শাড়ি কেনার টাকা জমাচ্ছে। সেই কথা সে স্বর্ণাকে কখনোই বলেনি।

আজ অবশেষে শাড়িটা সে কিনেছে। একটু পরপর হাতের প্যাকেটটার দিকে তাকাচ্ছে শাকিল। আজ তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।

হাঁটতে হাঁটতে সে বৃদ্ধাশ্রমের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। মায়ের একটাই জামদানি শাড়ি ছিল। শাড়িটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। মা বাবার কাছে একটা নতুন জামদানি চেয়েছিলেন। বাবা দিতে পারেননি। আজকে শাকিল সেই শাড়ি কিনেছে।

ফোনটা বেজে উঠল। অপরিচিত নম্বর। শাকিল খুব বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরল। আজকের দিনটা শুধু মায়ের আর তার। সে মাকে আজকে এই বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিয়ে যাবে। স্বর্ণা যা ইচ্ছা করুক। এখন কে ফোন করল?

শাকিল ফোন ধরল। ওপাশের কণ্ঠস্বর জিজ্ঞেস করল, শাকিল আহমেদ বলছেন?

শাকিল বলল, জি।

ওপাশের মানুষটি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমি বৃদ্ধাশ্রম থেকে বলছি। পনেরো মিনিট আগে আপনার মা মারা গেছেন।

শাকিল কোনো কথা বলল না, বলতে পারল না। চোখ বেয়ে শুধু দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল গালে।