
যতকাল রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরী, মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান...।
এবার পদ্মা-মেঘনার সঙ্গে যেন যোগ হলো প্রশান্ত মহাসাগর। বাঙালি জাতির জনকের কীর্তি বুকে ধারণ করতেই অস্ট্রেলিয়ায় এই মহাসাগরের পারেই বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের আন্তর্জাতিক সমুদ্রশাসন কেন্দ্রের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়েছে। গল্পটা বাংলাদেশের হলে হয়তো তেমন কিছু হতো না। কিন্তু হাজার হাজার মাইল দূরে অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন যেন বিশেষ কিছু। এ নিয়ে গর্বে উদ্বেলিত উচ্ছ্বসিত অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের গল্পটা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। আর সেটা শুরু হয় ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক দাউদ হাসানের হাত ধরে। ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের আন্তর্জাতিক সমুদ্র শাসন কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশের দাউদ হাসান। মূলত তিনি সমুদ্রশাসন আইন নিয়ে কাজ করেন। বঙ্গোপসাগর ও সামুদ্রিক অঞ্চল ভারত-শ্রীলঙ্কা-মিয়ানমার সমুদ্রসীমা ও সম্পদ বণ্টনের ওপর তাঁর প্রচুর গবেষণা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্তর্জাতিক সমুদ্রশাসন কেন্দ্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ও আমাদের বঙ্গোপসাগর।
সেই সূত্র ধরেই বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক আলোকিত অধ্যায় বিস্মিত করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদদের। তাঁরা স্বীকৃতি দিতে চান সেই মানুষকে, যিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম সমুদ্র আইন প্রতিষ্ঠা করেন। যে আইনে সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ ও সমুদ্রের সম্পদ আইন অনুযায়ী আহরণ ও বণ্টিত হয়। সেই স্বীকৃতি হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক বার্নি গ্লোভার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।
ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শন সহকর্মী নাহিদ হোসাইন আবক্ষ মূর্তি তৈরিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রথমে অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি করার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু পরে যে মাটিতে বঙ্গবন্ধু শায়িত রয়েছেন, সেই মাটির শিল্পীকেই তাঁর ভাস্কর্য তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক জামাল আহমেদের তত্ত্বাবধানে তরুণ ভাস্কর চঞ্চল কর্মকার ও লিটন পাল এই ভাস্কর্য তৈরি করেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য উন্মোচন করেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে জামাল আহমেদ বলেন, ‘আমার ছাত্ররা এ কাজটি করেছে। আমি শুধু দেখে দিয়েছি।’
ভাস্কর চঞ্চল কর্মকার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটা আমরা আবেগের জায়গা থেকে তৈরি করেছি। ২ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতার ভাস্কর্য তৈরিতে আমরা ব্রোঞ্জ ব্যবহার করেছি। নজর দিয়েছিলাম ভাস্কর্য কতটা মসৃণ করা যায় সে দিকে।’ পুরো কাজ শেষ করতে এই দুই ভাষ্করের সময় লেগেছিল দেড় মাস।