
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে এখন চলছে শুঁটকি তৈরির উৎসব। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপে শুঁটকি তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়। এখন বেলাভূমিতে বাঁশের মাচা বানিয়ে পুরোদমে চলছে মাছ শুকানোর কাজ। দ্বীপের ১২টি স্থানে ৮০টি শুঁটকির মহালে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকেরা।
সোনাদিয়ার শুঁটকি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, একেকটি মহাল থেকে প্রতি দুই সপ্তাহে ২০ মণ শুঁটকি তৈরি হয়। দ্বীপের ৮০টি শুঁটকি মহালে ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে শুঁটকি উৎপাদন। গত মৌসুমে দ্বীপে ৯০টি শুঁটকির মহাল ছিল। তবে লোকসান হওয়ায় ১০টি শুঁটকির মহালের মালিকেরা এবার শুঁটকি উৎপাদন করছেন না।
সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, তাঁর চারটি শুঁটকি মহালে প্রতি মাসে ১৬০ মণ ছুরি, লইট্যা, ফাইস্যা, রুপচাঁদা শুঁটকি উৎপাদন হয়। এই পরিমাণ শুঁটকির বাজারমূল্য ১৬ লাখ টাকার মতো।
১৭ ডিসেম্বর সোনাদিয়ায় গিয়ে শুঁটকি মহালগুলোতে ব্যস্ততা চোখে পড়ে। শ্রমিকেরা মাছের বর্জ্য অংশ ফেলে, লবণ মাখিয়ে রোদে শুকানোর জন্য মাচায় রাখছিলেন। একেকটি মহালে পাঁচ থেকে ছয়জন শ্রমিক কাজ করেন। মাছ শুকানোর পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে শুঁটকি কিনে নেন বলে জানান মহাল মালিকেরা। প্রতি কেজি রুপচাঁদার পাইকারি দাম দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা। এ ছাড়া ছুরি ৬৫০ থেকে ৭৫০, চিংড়ি শুঁটকি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, লইট্যা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, ফাইস্যা শুঁটকি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোনাদিয়ার শুঁটকি ব্যবসায়ী রবিউল আলম ও রিদুয়ান কাদের জানান, শীত ও গ্রীষ্ম ঋতু শুঁটকি তৈরির মৌসুম। এখন নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার পর দ্বীপে কর্মচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এখানকার শুঁটকির কদর আছে সারা দেশে। কক্সবাজারে আসা বিপুলসংখ্যক পর্যটক সোনাদিয়ার শুঁটকি কেনেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ কম। এ কারণে কাঁচা মাছের দাম বেড়েছে। মাছ কিনতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে শুঁটকি উৎপাদকদের। তবে সোনাদিয়ার শুঁটকিতে কোনো রাসায়নিক মেশানো হয় না বলে দাবি করেন তাঁরা। সংরক্ষণের জন্য তাঁরা কেবল লবণ ব্যবহার করেন।
স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন জানান, কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করতে ১০ দিনের মতো সময় লেগে যায়। তবে কয়েক দিন ধরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় শুঁটকি তৈরিতে সময় লাগছে বেশি। রোদের তাপ বাড়লে শুঁটকি আরও দ্রুত তৈরি হবে বলে জানান তাঁরা।
মহেশখালীর গোরকঘাটা বাজারের শুঁটকি ব্যবসায়ী এহেসানুল হক বলেন, এক মাস ধরে শুঁটকির জমজমাট বেচা-কেনা চলছে। পর্যটকের আসতে থাকায় শুঁটকির বাজার এখন চাঙা। রুপচাঁদা, লইট্যা ও ছুরি এই জাতের শুঁটকিই বেশি কেনেন পর্যটকেরা।