স্কার্টে স্টাইলিশ

কিশোরী বা তরুণীদের ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এখন স্কার্ট
কিশোরী বা তরুণীদের ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এখন স্কার্ট

ঘরোয়া আড্ডায় তরুণী-কিশোরীদের পরনে দেখা যেত আরামদায়ক স্কার্ট-টপ। আর করপোরেট ধাঁচের স্কার্ট চলত অফিসে। তার সঙ্গে পরা হতো শার্ট-ব্লেজার। তবে জিনস-ফতুয়া বা কুর্তি-লেগিংস যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল স্কার্ট তেমনটা পায়নি। সময় বদলেছে। ফ্যাশনে নিত্যনতুন অনুষঙ্গ যোগ হয়েছে, স্কার্ট এখন মেয়েরা হরদম পরছেন বাইরে। পার্টি পোশাক হিসেবেও স্কার্ট চলছে বেশ। সম্প্রতি পূজার ফ্যাশনেও দেখা গেল স্কার্টের প্রাধান্য। 
ফ্যাশন হাউস রঙ তাদের সংগ্রহে রেখেছে রং-বেরঙের দেশি ঘরানার স্কার্ট। রঙের ডিজাইনার বিপ্লব সাহা জানালেন, বেশি ঘেরওয়ালা এসব স্কার্টে থাকছে প্যাচওয়ার্ক ও ব্লকপ্রিন্টের নকশা। কোনোটায় ব্যবহার করা হয়েছে লেইস অথবা নেট। শাড়ি দিয়েও কিছু স্কার্ট তৈরি করা হয়েছে। বিপ্লব সাহার মতে, স্কার্টে অনেক রঙের ছড়াছড়ি থাকলে তার সঙ্গে টপটি একরঙা হলেই ভালো দেখাবে। সে ক্ষেত্রে স্কার্টের যেকোনো একটি রং বা সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে যেই রং সে রঙের টপ পরা যেতে পারে। আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের টপ পরলেও মন্দ লাগবে না, জানালেন তিনি। টপের হাতা কতটুকু হবে তা নির্ভর করবে আবহাওয়ার ওপর। গরমের দিনে স্লিভলেস বা ম্যাগি হাতা আরাম দেবে, এই সময়ে থ্রি-কোয়ার্টার হাতাও চলতে পারে। টপের দৈর্ঘ্য কোমরের একটু নিচ পর্যন্ত পরলে ভালো দেখাবে, তবে এর সঙ্গে চাইলে শর্ট কামিজ এমনকি সেমি লং কামিজও টপ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই স্কার্টের নকশা ও প্যাটার্নের সঙ্গে মানানসই হতে হবে এবং যিনি পরবেন তাকে তা ঠিকমতো বহন করতে পারতে হবে, বললেন বিপ্লব সাহা।
কথা হলো আড়ংয়ের ফ্যাশন ডিজাইনার আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে। স্কার্টে এখন প্যাটার্নের বৈচিত্র্য বেশ দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন তিনি। এর মধ্যে সবচেয়ে ট্রেন্ডি সামনে- পেছনে অসমান কাট ও ফ্লেয়ার (বেশি ঘেরের) কাটের স্কার্ট। আরও চলছে এ কাট, রুমাল ছাঁট, সারকুলার কাট, হাফ সারলুকার কাট ও টায়ার কাট। এর মধ্যে টায়ার কাট সব সময়ই জনপ্রিয়। এ ধরনের স্কার্টে কুঁচিগুলো অনেকটা শাড়ির কুঁচির মতো থাক থাক হয়ে থাকে। তবে প্রতিটা কুঁচির মধ্যে বেশ দূরত্ব থাকে। ফ্লোর টাচ স্কার্ট অর্থাৎ পায়ের গোড়ালি ছাড়ানো দৈর্ঘ্যের স্কার্টের পাশাপাশি থ্রি-কোয়ার্টার অর্থাৎ গোড়ালি থেকে ছয়-সাত ইঞ্চি ওপর পর্যন্ত ঝুলের স্কার্টগুলোও এখন খুব চলছে। তাঁত, সুতি, লিনেন, ভিসকোস ও ক্যাশমিলান কাপড়েই এগুলো তৈরি করা হচ্ছে। আড়ংয়ের স্কার্টগুলোতে ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক ও হ্যান্ডপেইন্টের নকশা প্রাধান্য পেয়েছে। একই পোশাকে দেখা যাচ্ছে কয়েক ধরনের কাপড়ের ব্যবহারও।
স্কার্ট ও টপ দুইটাই অনেক নকশাদার হলে জবরজং দেখাবে বলে মনে করেন আয়েশা সিদ্দিকা। তাই স্কার্টে নকশা বেশি থাকলে সাদামাটা কোনো টপ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার সঙ্গে পরা যেতে পারে বড় কোনো মালা বা আধুনিক নকশার বিব নেকলেস। আর স্কার্টটি যদি হয় এক রঙের এবং খুব ছিমছাম নকশার সে ক্ষেত্রে টপটি একটু জমকালো হলে ভালো দেখাবে। টপের সঙ্গে স্লিভলেস কোটিতেও স্টাইলিশ ভাব আনা সম্ভব। তবে কোটির দৈর্ঘ্য টপের দৈর্ঘ্য থেকে বেশি হলে মানাবে, কোন স্কার্টের সঙ্গে কেমন কোটি মানাবে তা নকশার ওপর নিভর্র করবে।
ফ্যাশন হাউস যাত্রার সংগ্রহে আছে লং, থ্রি-কোয়ার্টার ও মিনি স্কার্ট। তাতে থাকছে পেইন্টিং, প্যাচওয়ার্ক, ব্লকপ্রিন্ট ও বাটিকের নকশা। যাত্রার ফ্যাশন ডিজাইনার মাধুরী সঞ্চিতার মতে, মিনি স্কার্টের সঙ্গে স্লিভলেস বা ছোট হাতার টপ মানাবে। এক পায়ে পায়েল ও চাইলে পায়ের আঙুলে কয়েকটি আংটি পরা যেতে পারে। নানা রঙের কয়েকটি পুঁতির পায়েল পরলেও স্টাইলে ভিন্নতা আসবে। এ ধরনের স্কার্টের সঙ্গে চটি স্যান্ডেল পরলেই ভালো লাগবে, বললেন মাধুরী।
কাপড় কিনে নিজেও স্কার্ট বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কয়েক ধরনের কাপড় জোড়া লাগিয়েও দরজিকে দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন নিজের পছন্দের নকশার স্কার্ট। কম ঘের দিতে চাইলে আড়াই থেকে তিন গজ এবং বেশি ঘের ও ঘন কুঁচি দিয়ে তৈরি করলে চার থেকে ছয় গজ কাপড়ের মধ্যেই হয়ে যাবে। ঘরে থাকা পুরোনো শাড়িও কাজে লাগাতে পারেন। দেশি ধাঁচের স্কার্টগুলো পাওয়া যাচ্ছে রঙ, আড়ং, কে ক্র্যাফট, বিবিয়ানা, যাত্রা ও অরণ্যে এবং পশ্চিমা স্টাইলেরগুলো পাবেন আরবান ট্রুথ ও ঢাকার বদরুদ্দোজা মার্কেটে।

খাটো কামিজও পরতে পারেন টপের মতো করে,মডেল: ইশিকা ও এলভিন,পোশাক: যাত্রা ও অরণ্য, সাজ: পারসোনা, ছবি: সুমন ইউসুফ