সংস্কৃতি সংবাদ

স্মৃতির দহন

চারুকলা ইনস্টিটিউটের রশিদ চৌধুরী গ্যালারিতে শিল্পী শারদ দাশের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন দর্শকেরা l সৌরভ দাশ
চারুকলা ইনস্টিটিউটের রশিদ চৌধুরী গ্যালারিতে শিল্পী শারদ দাশের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন দর্শকেরা l সৌরভ দাশ

সবুজ পটভূমির কেন্দ্রে ছিন্ন মাথা ও কাটা হাতের ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি। গাঢ় লাল বুদ্ধের শরীর থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের ধারা। ছিন্ন মস্তকের বুদ্ধের ঠিক নিচেই দেখা গেল সিংহের দেহ, মানুষের মুখ আর ইগলের ডানাযুক্ত আসিরীয় দেবতা লামাসুকে।
শিল্পী শারদ দাশের অাঁকা ছবিটির সামনে থমকে দাঁড়াতে হয়। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুকাণ্ড স্মৃতির ধুলার নিচ থেকে বেরিয়ে আসে এক লাফে। আর গত মাসে ইসলামিক স্টেট জিঙ্গদের হাতে প্রাচীন ইরাকি শহর নিমরুদ ও হাতরার ধ্বংস হওয়ার স্মৃতি এখনো তরতাজা। টেলিভিশনের কল্যাণে দেবতা লামাসুর মূর্তির ওপর হাতুড়ির আঘাতের দৃশ্য তো দেখেছে গোটা পৃথিবী। ক্যানভাসে লামাসুর উপস্থিতি সে দৃশ্যকে চোখের সামনে ফিরিয়ে আনে আবারও।
শারদ দাশের আগ্রহ সাম্প্রতিক পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া যুদ্ধ ও মানবতার লাঞ্ছনা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা, বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তাঁর শিল্পকর্মে ঘুরেফিরে আসে। ২৫ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের রশিদ চৌধুরী গ্যালারিতে ‘স্মৃতি উপাখ্যান’ শিরোনামে শুরু হয়েছে তাঁর সাত দিনব্যাপী শিল্পকর্মের প্রদর্শনী।
ছাপাইমাধ্যম, তেলরং, ভাস্কর্য, স্থাপনা (ইনস্টলেশন) ও ভিডিও আর্ট মাধ্যমে করা ২০টির মতো শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।
মূল প্রদর্শনীকক্ষের বাইরে প্রাঙ্গণে উপস্থাপন করা হয় একটি ভিডিও আর্ট। গাছের গায়ে জড়ানো সাদা কাপড়ে প্রজেক্টরের আলো ফেলে আগুনের দৃশ্য রচিত হয়েছে। শিল্পী এভাবে দর্শককে যুক্ত করেন সমকালের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে। প্রদর্শনীকক্ষে ঢুকতেই কানে আসে ঘণ্টাধ্বনির মতো গায়ে হিম ধরানো ধাতব শব্দ। প্রথম কক্ষে ছয়টি ছাপাই ছবিতে একাত্তরের গণহত্যার দৃশ্য। বধ্যভূমিতে পড়ে থাকা সারিবদ্ধ লাশ।
প্রদর্শনীর দ্বিতীয় কক্ষে তেলরঙে করা বেশ কয়েকটি শিল্পকর্মের বিষয় ছিল যুদ্ধ ও গণহত্যা। ছিল বর্তমান সরকারের সমর্থকদের হাতে খুন হওয়া বিশ্বজিৎকে নিয়ে একটি সিরিজ। তৃতীয় কক্ষের একটি স্থাপনায় ছিল ঢালাই ধাতুর তৈরি এক সারি খুলি আর পেট্রলবোমার নৃশংসতা নিয়ে ভিডিও আর্টও।
কেবল বিষয়বস্তু নয়, শারদ তাঁর শৈলী দিয়েও মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। দ্বিমাত্রিক ক্যানভাসে অাঁকা ফিগারের সঙ্গে ছায়া জুড়ে দিয়ে তৈরি করেছেন ত্রিমাত্রিক অনুভূতি।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিল্পীর মা বেলা দাশ এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য দেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক নাসিমা আক্তার, শিল্পী অলক রায়, ঢালী আল মামুন ও নিলুফার চ্যামন। ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা দর্শকদের জন্য উন্মোচিত থাকবে।