বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে আমি কোনো দিন কোনো কাজ করতে হয়নি ৷ সারা দিন-রাত পড়াশোনার মাঝেই আবদ্ধ ছিলাম ৷ যদিও গ্রামের ছেলে আমি, তারপরও বাবার চাকরির সুবাদে শহরেই থাকতাম ৷ আর গ্রামে যাওয়া হতো বছরের দুই ঈদে ৷
তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করার জন্য বাবা-মাসহ গ্রামে গেলাম ৷ সেবার ঈদটা ছিল শীতকালে ৷ গ্রামে আমার একমাত্র বন্ধু জাহিদ ৷ গ্রামের আর কাউকেই চিনতাম না৷ ঈদের দিন সকালে আম্মু পানি গরম করে দিলে সেই পানি দিয়ে গোসল করলাম ৷ পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঈদগাহে গেলাম ৷ সূর্য মামার দেখা নেই আকাশজুড়ে ৷ সবাই শীতে কাঁপছে।
ঈদের নামাজ শেষে বাসায় এলাম। সেমাই-মাংস খেয়ে বসে আছি ৷ হঠাৎ জাহিদ এসে বলল, ‘চল সাগর সাঁতার প্রতিযোগিতা দেখে আসি৷’ প্রতি বছর ঈদে সাঁতার প্রতিযোগিতা হতো গ্রামে ৷ আমি আর জাহিদ পুকুর পাড়ে চলে গেলাম ৷ পরনে একখানা মাত্র লুঙ্গি, ১৮ / ২০ জন ছেলে শরীরে খাঁটি সরিষার তেল মালিশে ব্যস্ত গ্রামের মধ্যে যে পুকুরের পানি সবচেয়ে ঠান্ডা, সে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমরা গ্রামের সবাই পুকুর পাড়ে জমা হয়েছে হঠাৎ নজরে পড়ল অনিন্দ্য সুন্দরী একটি মেয়ে ৷ মেয়েটা আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে পাশে দাঁড়ানো মেয়েটিকে কিছু একটা বলছে ৷ আমি শোনার চেষ্টা করলাম ৷
দেখ, নোলক ছেলেটা কত সুন্দর। কিন্তু পোলট্রি মুরগির মতো ৷ কোনো দিন কোনো কাজ করেনি, দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷ পোলট্রি মুরগির মতো অলওয়েজ রুমে আবদ্ধ থেকেছে—কথাগুলো শুনে আমার মাথা হট হয়ে গেল ৷ জাহিদকে বললাম, ‘লুঙ্গি আন। আমিও প্রতিযোগিতায় নামব।’ সব সময় প্যান্ট-থ্রি কোয়াটার পরেছি, লুঙ্গি কখনো পরা হয়নি ৷ কোনোমতে লুঙ্গি পরলাম। রেফারির বাঁশিতে পুকুরে দিলাম ঝাঁপ। বরফের মতো ঠান্ডা সে পানি ৷ মনে হচ্ছে মরেই যাব ৷ যে আমি সব সময় গরম পানিতে গোসল করে, সে এখন বরফের মতো ঠান্ডা পানিতে ৷
সাঁতার কাটছি। সবার আগে পুকুরের তীরে চলে এসেছি ৷ হঠাৎ ফিল করলাম, লুঙ্গি পরনে নেই আমার ৷ আমি থেমে লুঙ্গি খুঁজছি ৷ আর আমাকে ক্রস করে অন্যরা ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হয়ে গেল ৷ সবাই উঠে গেল পুকুর থেকে, আমি উঠতে পারছি না৷ সবাই আমাকে উঠতে বলছে, কিন্তু আমি উঠছি না। বাধ্য হয়ে বললাম, ‘ইয়ে...মানে আমার লুঙ্গিটা হারিয়ে গেছে৷’ সবায় হো হো করে হেসে উঠল ৷ একজন একটা লুঙ্গি এনে দিল, আমি সেটা পরে ওপরে উঠলাম ৷ লজ্জায় আমি তখন লাল ৷ সেই ঈদের স্মৃতি মনে হলে আমি এখনো হা হা হি হি করে হেসে উঠি ৷