শরীর কর্মক্ষম ও সুস্থ রাখতে সাতসকালে অথবা বিকেলে হাঁটার অভ্যাস আছে আমাদের অনেকেরই। পার্ক কিংবা বাড়ির কাছে খোলামেলা জায়গায় প্রতিদিন নিয়ম করে একটু হাঁটলে কিংবা দৌড়ালে দিনটি কিন্তু সুন্দরভাবেই শুরু হয়। তবে কোন জুতা পরে হাঁটছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটুকু জেনে নিন, আত্মতৃপ্তি নিয়ে হাঁটতে পারবেন।
রানিং কেডস ব্যবহার করছেন তো?
সকাল কিংবা বিকেল, দ্রুততার সঙ্গে অথবা ধীরে—যেভাবেই হাঁটুন না কেন নিজের পায়ের সঠিক মাপ অনুযায়ী রানিং কেডস বা দৌড়ানোর উপযোগী বিশেষ জুতা পরে নিন। এ ধরনের জুতার ভেতরটা নরম, তাই হাঁটা ও দৌড়ানো—দুই কাজেই ব্যবহার করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরস্পর সম্পৃক্ত। সে ক্ষেত্রে পায়ের পাতা ভারসাম্য রক্ষা থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করছে। পায়ের পাতা হলো শরীরের স্পর্শকাতর অংশগুলোর একটি। তাই জুতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে জুতার সোল বা নিচের অংশ যেন নরম ও আরামদায়ক হয়। তা ছাড়া কেডস বা রানিং কেডস এমনভাবেই তৈরি করা হয়, যেন পায়ের পাতার নড়াচড়া বেশ সহজে সম্ভব হয়।’
গ্রিনরোড এলাকার বাসিন্দা মো. রোকনুজ্জামান রানিং কেডস পরে ধানমন্ডি লেকে সকালে নিয়মিত হাঁটতে যান। হালকা ও নরম কেডসই তাঁর পছন্দ। তিনি বলেন, শক্ত জুতা পরে জোরে হাঁটা যায় না। এ সময় নমনীয় কেডসে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। একটু দামি হলেও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তা বেশ কার্যকর।
গোড়ালি নিয়ে সাবধান
দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় পায়ের গোড়ালিতে বাড়তি চাপ পড়ে। শরীরে এ অংশে রয়েছে অ্যাকিলিস টেন্ডনের অন্তর্ভুক্ত একটি বিশেষ শিরা। প্যারাটেনন নামক একটি পাতলা পর্দা শিরাটিকে ঢেকে রাখে। তাই একে রক্ষা করার জন্য গোড়ালির পেছন দিকটি অধিকতর নরম আচ্ছাদনে বাইরের আক্রমণ থেকে ঢেকে রাখা জরুরি। আচ্ছাদনটি শক্ত কিংবা অস্বস্তিকর হলে বারবার ঘষা লেগে সেখানে ঘা হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া কোনোভাবে ওই শিরা আক্রান্ত হলে হাঁটার ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই গোড়ালির পেছন দিকটি সুরক্ষিত থাকবে কি না, কেডস বাছাইয়ের সময় যাচাই করে নিন।
সব সময়ই আঁটসাঁট জুতা?
খোলামেলা জুতা পরলে পায়ের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়—এমন ধারণা ভুল। দৈনন্দিন জীবনযাপনে জুতা ব্যবহারে ভিন্নতা আনা অবশ্যই জরুরি। ডা. মো. কামরুল আহসান বলেন, একনাগাড়ে আঁটসাঁট জুতো ব্যবহার করলে পায়ের বুড়ো আঙুল বেঁকে যেতে থাকে। এর ফলে হ্যালাক্স ভালগাস নামের একটি রোগও হয়। তা ছাড়া পা ঘেমে অস্বস্তিকর অবস্থারও সৃষ্টি হয়। নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য চটি জুতাই সবচেয়ে বেশি উপযোগী। পায়ের আকৃতি ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে চাইলে মাঝেসাঝে একটু আঁটসাঁট জুতা না হয় পরলেনই, তবে সব সময় নয়!
নারীদের জন্য বাড়তি সতর্কতা
ফ্যাশনসচেতন নারীদের মধ্যে উঁচু গোড়ালি বা হিলের জুতা পরার প্রবণতা বেশি। তবে এ ধরনের জুতা শরীরের ভারসাম্য ঠিকঠাকভাবে ধরে রাখতে পারে না। আর গোড়ালির শিরাগুলোতে বাড়তি চাপ তৈরির আশঙ্কাও থাকে। হিল-জুতা ব্যবহারকারী নারীদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় সবচেয়ে বেশি। একটু এদিক-সেদিক হলেই দুর্ঘটনায় পায়ের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। তাই ভেবে দেখুন—ফ্যাশন নাকি সুস্থতা, কোনটা বেশি জরুরি?
সবশেষ কথা হলো, যে জুতা পরে নিজে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, সেটিই ব্যবহার করুন। তবেই সুস্থ থাকবেন আপনি।